শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৬

গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকল “শামে আল কায়েদার মিত্ররা”, পড়তে ভুলবেন না

 

দাবিক ম্যাগাজিনের বিভিন্ন সংখ্যায় প্রকাশিত শামে আল কায়দার মিত্রদের কুফর আর দ্বীনত্যাগের দলীল সম্বলিত আর্টিকল সিরিজ “শামে আল কায়েদার মিত্ররা”  সব কটি পর্বের বাংলা সংকলন। সবাইকে পড়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। সত্য অন্বেষণকারীদের যেন আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন করেন।
একটি আল ফুরাত মিডিয়া পরিবেশনা

পিডিএফ ডাউনলোড লিংক (১৫.৭ মেগাবাইট) টেক্সট ফাইল


শামে আল-কায়েদার মিত্ররা ১
আবু হামযা আল-মুহাজির ইরাকের জাতীয়তাবাদী দলগুলোকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, “যারা দেশের জন্য লড়াই করে এবং দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের ব্যানারে যুদ্ধ করে, তাদের প্রতি আমি বলি জনৈক ব্যক্তি কি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে আসেনি, যেমন আবু মুসা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে আল-বুখারী ও মুসলিম বর্ননা করেছেন এবং তিনি বলেন, ‘হে রাসুলুল্লাহ, আল্লাহর রাস্তায় লড়াই কী? আমাদের মধ্যে কেউ হয়তো রাগের কারণে লড়াই করতে পারে বা হামিয়্যাহ (হিংসা) এর জন্য লড়াই করতে পারে’। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিকে মাথা ঘুরালেন এবং বললেন, ‘যে কেউ এজন্যে লড়াই করে যাতে আল্লাহর কালিমা সমুন্নত হয়, তখন সে আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করল’। আন-নববী, ইবনে হাজার ও আরও অনেকে বলেন যে, হামিয়্যাহ হল গর্ব বা হিংসার জন্য লড়াই করা অথবা নিজের গোত্রের প্রতিরক্ষার জন্য লড়াই করা। বরং আল-হাফিয ইবনে হাজার ‘আল-ফাতহ’ এ বলেন, ‘এটা সম্ভব যে, হামিয়্যাহ থেকে লড়াই করার অর্থ হতে পারে কোন ক্ষতি প্রতিরোধ করা এবং রাগের কারণে লড়াই এর অর্থ হতে পারে কোন সুবিধা অর্জনের জন্য লড়াই করা’। সুতরাং হে লোকসকল, তোমাদের যুদ্ধ কি সেদিকে চলে গেছে যার বিরুদ্ধে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সতর্ক বানী দিয়েছেন? বরং, এটাই তোমাদের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য, যেখানে আল্লাহর শারীয়াহর দাবী হল, যা আল-হাফিয ইবনে হাজার আল-ফাতহ এ বলেছেন, ‘যুদ্ধ ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় হবে না, যতক্ষণ না তার যুদ্ধের একমাত্র উদ্দেশ্য হয় আল্লাহর কালিমাকে সমুন্নত করা’। জাতিকে স্বাধীন করা বা অন্য কিছু এর মধ্যে ফলাফল হিসেবে আসতে পারে কিন্তু উদ্দেশ্য হিসেবে নয়। তোমরা এরকম যুদ্ধের ক্ষতি সম্পর্কে অবগত, কারণ বেশির ভাগ আরব শাসকেরা ক্ষমতায় এসেছে জাতীয়তাবাদের ব্যানারে যুদ্ধের মাধ্যমে। তোমরা ফলাফল কেমন দেখছ? এটা কি দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতি নয়?” [দ্বিতীয় সাক্ষাৎকার]
আমিরুল মু’মিনিন আবু উমর আল-বাগদাদী (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন) বলেন, “জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের ধারণা দ্বীনের অনেক মৌলিক বিষয়ের সাথে সাংঘর্ষিক। প্রথমত, কোন মানুষের উপরে অন্য কাউকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় তাকওয়ার ভিত্তিতে, রক্তের ভিত্তিতে নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, {হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।} [আল-হুজুরাতঃ১৩]। দ্বিতীয়ত, এটা আল-ওয়ালা আল-বারা এর আক্বীদার বিরুদ্ধে যায় এবং এর মূলোৎপাটন করে যা দ্বীনের একটি গুরুত্বপুর্ণ মৌলিক বিষয়। আরব ইরাকী খ্রিষ্টান তার ভাই, যে সমস্ত রকমের সুযোগ সুবিধা পায়, অন্যদিকে ভারতীয় বা তুরস্কের মুসলিমের কোন অধিকার নাই। এসব লোকের শারীয়াহ ইথিওপীয় বিলাল বা ফারসী সালমানের চেয়ে উকবাহ ইবনে আবি মুয়াইত বা আবু জাহলকে বেশি গুরুত্ব দেয়। তৃতীয়ত, এটা মুমিনদের মধ্যকার সম্পর্কের বিরোধিতা করে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘মুমিনের কাছে আর এক মুমিন হল একটি ভবনের মত যার প্রত্যেক অংশ অন্য অংশকে ধরে রাখে’। [আবু মুসা আল-আশ’আরী থেকে বুখারী ও মুসলিম বর্ননা করেছেন]। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেন, ‘ভালোবাসা, করুণা ও সহানুভূতির ক্ষেত্রে মুমিনদের উদাহরণ হল একটি দেহের মত, যদি একটি অংশ ব্যথা অনুভব করে, তাহলে গোটা শরীর ব্যথা অনুভব করে অনিদ্রা ও জ্বরের কারণে’। [আন-নুমান ইবনে বশীর থেকে বুখারী ও মুসলিম বর্ননা করেছেন]। চতুর্থত, এটা জাহেলিয়্যাহ ও পক্ষাবলম্বন এর দিকে আহবানের উপর প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, {কেননা, কাফিররা তাদের অন্তরে জাহেলিয়্যাতের জেদ পোষণ করত। অতঃপর আল্লাহ তাঁর রাসূল ও মুমিনদের উপর স্বীয় প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদের জন্যে সংযমের দায়িত্ব অপরিহার্য করে দিলেন। বস্তুতঃ তারাই ছিল এর অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।} [আল-ফাতহঃ২৬]। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘যে আসাবিয়্যাহ (দলাদলি) এর দিকে আহবান করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়’। [জুবায়ের ইবনে মুতিম থেকে আবু দাউদ বর্ননা করেছেন]”। [আযিল্লাহ আলাল মু’মিনিন ওয়া আইযযাহ আলাল-কাফিরিন]
আমিরুল মু’মিনিন আবু উমর আল-বাগদাদী (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন) আরও বলেন, “দুঃখজনক ভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার কিছু জাতপক্ষ দখলদারিত্বের মিথ্যাগুলো প্রচার করতে লাগলো, এটার জন্যে একটা ভিত্তি তৈরি করল, এর পক্ষে তর্ক করল এবং জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের নামে অন্ধত্বের ব্যানার উত্তোলিত করল, যার উভয়টিই কোন মুশরিক রাষ্ট্রের সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত থাকে। তারা ইরাকের সম্পদগুলোকে বিশেষ করে পানি ও তেল তাদের জন্য সম্পদ বানিয়ে রেখেছে যাদের ইরাকী নাগরিকত্ব ছিল! সুতরাং এটা কী রকম হত যদি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের ভূমিতে হিজরত করতেন? নিশ্চয় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন জায়গায় হিজরত করেছেন যেটা তাঁর ছিল না এবং তিনি এমন এক বাড়িতে থেকেছেন যেটা তাঁর ছিলনা। এই সব লোকের নীতি অনুযায়ী, তাহলে কি এই সম্পদগুলো তাঁর জন্য এবং তাঁর সাহাবীদের জন্য হালাল হবে? না! তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্ষেত্রে এবং তাঁর সাহাবীদের ক্ষেত্রে ক্ষমতা ও নেতৃত্ব পাওয়ার জন্য এই সব লোকের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বেশি বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হত! কেন হবে না? কেননা এসব লোক বলে যে ইরাক হল সমস্ত ইরাকীদের জন্য এবং এর সম্পদগুলো শুধুমাত্র ইরাকীদের জন্য। হ্যাঁ, সমস্ত ইরাকীদের জন্য, যদিও তারা শয়তানের পূজারী ইয়াযিদি হয় বা সাবেয়ী ম্যানডাইন হয়। তাদের কথা অনুসারে সবারই সমান অধিকার আছে, যদিও সে সুন্নী মুসলিম হয় বা শিয়া মাজুসী হয়। এটা তাদের কোন চিন্তার বিষয় না যে, তারা আমাদের মহিমান্বিত রবের ইবাদত করে না, বিদ্রোহী শয়তানের পূজা করে। তবুও তার অধিকারের সুরক্ষা দেওয়া হবে! হে মুওয়াহিদিন, আমাদের আকীদা হল, সে আমাদের ভাই যদিও সে একজন এশীয়ান ফিলিপিনী হয় এবং শয়তানের পূজারী আমাদের শত্রু যদিও সে একজন নিশ্চিত ইরাকী হয়। [ফা’আম্মায-যাবাদু ফাইয়াযহাবু যুফা’আ]
২০১৪ এর ২৫ ডিসেম্বরে আলেপ্পোতে ‘শামিয়্যাহ ফ্রন্ট’ এর ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে ‘ইসলামিক’ ফ্রন্ট, দ্য আর্মি অফ মুজাহিদিন, দ্য নুরউদ্দিন জিংকি মুভমেন্ট, ‘ফাস্তাকিম কামা উমিরত’, দ্য অথেনটিসিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফ্রন্ট এবং সবচেয়ে সাম্প্রতিক কালের ‘দ্য হাযম মুভমেন্ট’ এ সবগুলোই এর অন্তর্ভুক্ত। এই দলগুলোর বেশিরভাগই জাতীয়তাবাদী ‘সিরিয়ান রিভোলিউশানারি কমান্ড কাউন্সিলের সদস্য। এই সব দলগুলোই উপসাগরীয় (আরব) সরকারগুলো বা সিআইএ বা সিরিয়ান ন্যাশনাল কোয়ালিশান বা ফ্রি সিরিয়ান আর্মি(এফ এস এ) বা সুপ্রিম মিলিটারি কাউন্সিল এর পক্ষ থেকে তথাকথিত ‘নিঃশর্ত’ সাহায্য পায়, এদের কোন একদলের ‘অন্তর্ভুক্ত না হয়েও’। ২০১৫ এর ফেব্রুয়ারীতে এই নতুন ফ্রন্ট কুর্দি স্বৈরাচারী গণতান্ত্রিক প্রশাসনের সাথে এবং জন প্রতিরক্ষা ইউনিট(ওয়াই পি জি) -যা ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন পার্টি(পি ওয়াই ডি) এর সশস্ত্র শাখা এবং কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি এর সিরিয়ান শাখা- এর সাথে একমত হল ‘আফ্রিনে’ শারীয়াহ প্রতিষ্ঠার বাপারে। মার্ক্সবাদী ও গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষদের সাথে মিলে শারীয়াহ প্রতিষ্ঠার এই জাতীয়তাবাদী ‘ইসলামি’ পরিকল্পনা কতখানি যৌক্তিক! তাদের কাছে একটা প্রশ্ন আছে হল, ক্রুসেডারদের প্লেনগুলোর মাধ্যমে 'আইন আল-ইসলাম’ এ ‘পিকেকে’ কে যেভাবে সহযোগিতা করছে, তাতে তারা “শারীয়াহহ” প্রতিষ্ঠাতে সহযোগিতা করবে কি না...
জাতীয়তাবাদী ইসলাম ও জাতীয়তাবাদী ধরমনিরপেক্ষতাবাদের একসাথে কাজ করার মাধ্যমে ইসলাম ও গণতন্ত্রকে একই সাংবিধানিক অবকাঠামোতে রেখে জাতীয়তাবাদী সরকার গঠন করার দৃশ্যপট একই যার অভিজ্ঞতা মিশর, লিবিয়া ও তিউনিশিয়ার রয়েছে। ক্রুসেডাররা একই কেক এর দুই ভাগের বিভক্তি আশা করে বসে থাকে এবং অপেক্ষা করে ঐ অংশকে সমর্থন করার জন্য যারা তাদের স্বার্থের জন্য অন্য অংশ অপেক্ষা বেশি অনুকূলে। উভয় পক্ষই অধিক রিদ্দাহ প্রকাশ করতে থাকে, ক্রুসেডার ও তাদের দোসর আরব তাগুতদের আনুকূল্য লাভ করার জন্য।
যদিও খেলাটি তাদের কাছে স্পষ্ট যারা ঈমান ও ওয়াকি (সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহ) সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখে কিন্তু শামের জিহাদের দাবীদারদের(জাওলানি ফ্রন্ট) কাছে তা অস্পষ্ট। এই পথভ্রষ্টরা সাহাওয়াত দলগুলোর সাথে মিলে-যারা শামিয়্যাহ ফ্রন্ট গঠন করেছিল- দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, তারপরেও তারা দাবী করে যে এই দলগুলো মুখলিস মুজাহিদিনদের ব্যাটালিয়ন। যে “ইখলাসের” সাথে জাওলানি ফ্রন্ট এই দলগুলোর বর্ননা দিচ্ছে তা দিন দিন স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে।
নিম্নে শামিয়্যাহ ফ্রন্টের রাজনৈতিক ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান যাকারিয়া মালাহিফযি এর ভাষণের বর্ননা দেওয়া হল যা ২০১৫ এর ১লা মার্চ এ “দ্য রেভোলিউশানারি ফোর্সেস অফ আলেপ্পো” কর্তৃক আয়োজিত কনফারেন্সে সে দিয়েছিল। সে বলেছিলঃ
“বিপ্লবীদের দাবীর ভিত্তিতে ও আলেপ্পোতে বিপ্লবী জনগনের একত্রীকরণ ও সংগঠনভুক্ত হওয়ার ভিত্তিতে, যাতে স্বৈরাচারী আগ্রাসন ঠেকানো যায় এবং শামিয়্যাহ ফ্রন্টের নামে আমি আপনাদের কাছে কয়েকটি মৌলিক নীতি পুনরায় উল্ল্যেখ করছি”।
“প্রথমত, শামিয়্যাহ ফ্রন্ট হল মহান সিরিয়ান বিপ্লবের অংশ যার বাহিনীগুলোকে অবশ্যই বিজয় অর্জনের জন্য একত্রিত হতে হবে। বিজয়ের জন্য একতাই একমাত্র পথ। বিভক্তি সবসময়ই সন্ত্রাসী সরকারের স্বার্থের অনুকূলে যায়”।
দ্বিতীয়ত, শামিয়্যাহ ফ্রন্ট হল এমন একটি দল যা সিরিয়া ও সিরিয়ার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। এটা সিরিয়াকে সমস্ত সিরিয়ান জনগণের মনে করে। ইরানী দখলদারিত্ব থেকে সিরিয়ান জাতি ও সিরিয়ান মানুষকে স্বাধীন করা এবং আসাদের পতন ঘটানোই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য, যাতে অত্যাচার দূরীভূত হয় এবং এ জাতির স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়।
তৃতীয়ত, আমরা সকল ধরনের সিরিয়ান মানুষের জন্য সিরিয়ান জাতীয় পরিচয়কে বিবেচনা করি, যেমন আরবীয়, কুর্দি, তুর্কীমেন, সিরকাসিয়ান, অ্যাসাইরিয়ান, সিরিয়াক এবং সাথে সাথে অন্যান্য ধর্মের মানুষ।
চতুর্থত, সিরিয়া এমন একটি জাতি যা সমস্ত সিরিয়ানদের জন্য, কেননা এর এখন আন্তর্জাতিক ভাবে পরিচিত ভৌগোলিক সীমানা রয়েছে। এই ফ্রন্ট সমস্ত বিভাজন এবং সিরিয়ার সংগঠন গুলোকে অস্বীকার করে যা দলাদলি, রাজনৈতিক ভাবে বা দলীয় এজেন্ডা বা আকাংখা থেকে গঠন করা হয়েছে।
পঞ্চমত, গোটা পৃথিবী জানে যে সিরিয়ান সরকার এই অঞ্চলের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক ছিল এবং এখনও আছে। এটা সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে ট্রেইনিং দিয়েছে ও সংগঠিত করেছে এবং এদের মাধ্যমে এটা পার্শ্ববর্তী সমস্ত দেশে সন্ত্রাসি কর্মকান্ড ও গুপ্তহত্যা চালিয়েছে। এই সরকার আজ তাদেরকে সাহায্যের আহবান করছে এবং একে ব্যবহার করছে সিরিয়ান মানুষের বিপ্লবের বিরুদ্ধে যুদ্ধে।
ষষ্ঠত, এটা আমাদের সবার কাছে স্পষ্ট যে সিরিয়ান বিপ্লব এ অঞ্চলের সবচেয়ে অহংকারী সন্ত্রাসী সরকারগুলোর জোটের মোকাবেলা করে। এই জোট ইরানের মাধ্যমে চলে যা সিরিয়ার অনেক অঞ্চল দখল করে নিয়েছে। ঠিক একই সময়ে বিশ্ব সম্প্রদায় ও এর সংগঠনগুলো সিরিয়ান মানুষের বিরুদ্ধে চলমান গণহত্যা -যা চার বছর ধরে চলছে- বন্ধ করার যে নৈতিক ও বৈধ বাধ্যবাধকতা আছে তার দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে। তারা শান্তিপূর্ণ সাধারণ মানুষদের রক্ষা করছে না যারা বিপ্লবের প্রথম বছর থেকে ব্যাপক প্রতিবাদ করে আসছে।
সপ্তম, শামিয়্যাহ ফ্রন্ট সিরিয়ান মানুষের বন্ধু ও ভাতৃ তুল্য বিশেষ করে তুরস্ক, সৌদি আরব ও কাতার এবং অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহকে ধন্যবাদ জানায়। এটা তাদের কাছে সিরিয়ান জনগণকে ইরানের দখলদারিত্ব, ইরানের সন্ত্রাসী দল ও এই সরকারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবস্থান দাবী করে।
অষ্টম, শামিয়্যাহ ফ্রন্ট বিশ্বাস করে যে ডেমিস্টোরাসের প্রস্তাব সিরিয়ার রাজনৈতিক সমাধানের পরিকল্পনা প্রদর্শন করে না বা কোন লিখিত প্রমাণাদি প্রদর্শন করে না বরং এটা আলেপ্পোতে যুদ্ধ বিরতির আহবান করে, যাতে সরকারের চলমান পরাজয় ঠেকানো যায় এবং দউমা, দারা ও অন্যান্য সিরিয়ান অঞ্চলকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়ার সুযোগ দিতে চায়। ডেমিস্টোরা সিরিয়াতে অনুষ্ঠিত জেনেভা ১ ও ২ কনফারেন্সের প্রজ্ঞাপন গুলোকে এড়িয়ে যেতে যায় যে বিষয়ে বিপ্লবী ভাইয়েরা একমত হয়েছিলেন যে, তা হবে সন্ত্রাসী সরকারকে উৎখাত করা এবং একটি মুক্ত ও স্বাধীন সিরিয়াতে রূপান্তরিত করা। হে ভাইসকল, এটি আমাদেরকে ডেমিস্টোরাসের প্রস্তাব ও অন্যান্যের প্রতি আমাদের ঐক্যবদ্ধ মতামতের প্রয়োজনীয়তায় জোর দেয়, বিভক্ত দৃষ্টিভঙ্গিতে নয়, কারণ এটা শহীদদের রক্তের প্রতি ও সিরিয়ার বিপ্লবী জনগণের প্রতি সবার দায়িত্ব।
নবম, শামিয়্যাহ ফ্রন্ট সবার আন্তরিক প্রচেষ্টার আহবান জানাচ্ছে, যাতে বিপ্লবীদের বিভিন্ন মতপার্থক্যে অস্ত্রের মাধ্যমে সমাধান দেওয়া প্রতিরোধ করা যায়। সবার শেষের মতবিরোধ হয়েছিল আলেপ্পোতে। এটি একটি স্বাধীন বিচারের আহবান জানাচ্ছে, যাতে সমস্ত কিছু তার সঠিক অবস্থানে ফিরে আসে এবং রক্ত ঝরানো রোধ করা যায় যা সন্ত্রাসী সরকারের স্বার্থের দিকে চলে যাবে।
দশম, আমরা উপস্থিত সকল ভাইদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং সিরিয়ান ন্যাশনাল কোয়ালিশান ও সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের ভাইদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা তাদের কাছে দাবী করছি যে, তারা যেন আলেপ্পোতে বিপ্লবীদেরকে অবিরত ও সংগঠিত সাহায্য সরবরাহ করতে থাকে এবং সবসময় সিরিয়ান জনগণের মিত্র ও বন্ধুদের সাথে কাজ করে, যাতে এ সহযোগিতা বন্ধ হয়ে না যায় বা কমে না যায় এবং যাতে এই অপরাধী চক্রকে মোকাবেলা করা যায়। আমরা সাধারণ জনগণের কাছে পুনঃর্নিশ্চিত করতে চাই যে, আমরা আল্লাহর সাহায্যে চলতেই থাকব, যাতে হয় শাহাদত বা বিজয় আসে। পরিশেষে আমরা এই জনসমাবেশকে অভিবাদন জানাই, আমরা আশা করি যা একটি ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্টে পরিনত হবে এবং এর অধীনে আলেপ্পো ও এর আশেপাশের সমস্ত শহর, সিরিয়ার সমস্ত ভূমি চলে আসবে, কারণ যখন আমরা ঐক্যবদ্ধ হব তখন এটি একটি নিশ্চিত বাস্তবে পরিণত হবে যে, এই জালিম সরকারের পতন ঘটবে। এবং সবশেষে আমরা সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
এভাবে তার ভ্রষ্টতাপূর্ণ কথা শেষ হয়... সুতরাং সিরিয়াতে আল-কায়েদার মিত্রদের কথা অনুসারে মুসলিম, খ্রিষ্টান (এসাইরিয়ান/সিরিয়াক), নুসাইরী, রাফেদী, দুর্জি এবং ইসমাইলিদের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই; সিরিয়া তাদের সবার জন্যে মাতৃভূমি! সিরিয়াতে আল-কায়েদার মিত্রদের কথা অনুসারে সিরিয়ান ন্যাশনাল কোয়ালিশান, সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকার, তুরস্ক সরকার, আল-সউদ এবং কাতার তাদের মুসলিম ভাই! সিরিয়াতে আল-কায়েদার মিত্রদের কথা অনুসারে জাতীয়তাবাদ ও বিপ্লবের উপর ভিত্তি করে ঐক্যবদ্ধ হওয়া, তাওহীদ এবং হকের উপর ভিত্তি করে বিভক্ত হওয়ার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ! এবং তারা এই বিভ্রান্ত বিবৃতি দেয় জাহেলিয়্যাতের জাতীয়তাবাদী পতাকার তলে দাঁড়িয়ে থেকে, যা সাইক্স ও পিকট নামের দুই ক্রুসেডারের পতাকা নামে পরিচিত!
যে প্রশ্নগুলো প্রত্যেক জিহাদের দাবীদারদের অনুসারীদের করা উচিত, তা হলঃ কেন জাওলানি ফ্রন্টের নেতৃত্ব এই দলগুলোর সাথে দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছে? তাদের ক্ষেত্রে হুকুম কি হবে যারা দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে এই দলগুলো বা এর থেকে আরও খারাপ দলের সাথে একই অপারেশান কক্ষে প্রবেশ করে এবং তাদের সাথে জোট বাঁধে? এই দলগুলো কেন জনগণের সামনে বিভ্রান্ত কথাগুলি প্রকাশ করে যার অনেক গুলো কুফরী, তারপরেও জাওলানি ফ্রন্ট এই ভুলগুলো কেন এড়িয়ে যেতে থাকে এবং প্রকাশ্যে সেগুলোর সমালোচনা করে না? (এমনকি কখনও তাদের পক্ষে যুক্তি দেয়!) এবং এগুলো বাদ দিয়ে দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে মিডিয়া প্রচারণা চালায়? এই অধম জাতীয়তাবাদীদের ভুলগুলোর সাথে কি দাওলাতুল ইসলামের তথাকথিত ভুলগুলোকে তুলনা করা যায়!
পরিশেষে, কি বাস্তবিক পার্থক্য থাকে হাযম ও সিরিয়া রিভলিউশনারি ফ্রন্ট(জাওলানি ফ্রন্টের প্রাক্তন দোসর) এর মধ্যে এবং আর্মি অফ ‘মুজাহিদিন’, জিঙ্কি, ফাস্তাকিম কামা উমিরত, দ্য অথেনটিসিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফ্রন্ট এবং ‘ইসলামিক’ ফ্রন্ট এর অন্যান্য দলগুলোর মধ্যে? এটা কি শুধু দাঁড়ি কত সেন্টিমিটার লম্বা সেটার পার্থক্য অথবা মুরসি ও সিসির মধ্যকার কাল্পনিক পার্থক্য, যাদের উভয়ই তাগুতের আইন দ্বারা শাসন করেছে এবং সিনাইয়ের মুজাহিদদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে?
জাওলানি ফ্রন্ট দেখতে পাবে যে তারা মুহাজির ও আনসারদের প্রতি যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তা জাওলানি ফ্রন্টের সাথে সাহওয়াতদের বিশ্বাসঘাতকতায় পরিণত হবে এবং তার কিছু ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে...
১। এই মুরতাদ সাহওয়াত দলগুলো মুসলিমদের(দাওলাতুল ইসলামের মুহাজির ও আনসারগন যাদেরকে তারা খারেজী বলে অপবাদ দেয়) হত্যা করে এবং মুশরিকদের (সিরিয়ান ন্যাশনাল কোয়ালিশান এবং সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের মুরতাদগুলো যাদেরকে তারা ভাই বলে ডাকে!) কোন কিছু না বলে একাই ছেড়ে দেয়!


শামে আল কায়দার মিত্ররা: পর্ব ২

গত কয়েক মাসে, বেশ কিছু সংখ্যক সাহাওয়াত জোট তৈরি হয় যারা কোন না কোন ভাবে জাওলানী ফ্রন্টের সাথে মৈত্রী সম্পর্কিত অথবা সরাসরি যুক্ত। শামীয়্যাহ ফ্রন্ট তার জাতীয়তাবাদী ছোট দলগুলো সমেত দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে জাওলানী ফ্রন্টের অন্যতম পুরাতন মিত্র ()। সাম্প্রতিক, ইদলিবে অন্য একটি জোট আত্মপ্রকাশ করেছে, যার নামজেইশ আল ফাতহ্”। যার সদস্য দলগুলোর মধ্যে জাওলানী ফ্রন্ট এবং ফাইলাক আশ-শাম অন্তর্ভুক্ত। নিম্নে, আপনারা দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জাওলানী ফ্রন্টের অন্যতম মিত্র ফাইলাক আশ-শাম কতৃক প্রকাশিত একটি আনুষ্টানিক ঘোষণাপত্র পড়বেন। এই ঘোষণাপত্র পড়ার পরে, বিষয়টা কোনভাবেই গোপন থাকা উচিৎ নয় যে, এই দল এবং তার কর্মকান্ড অত্র অঞ্চলের ত্বাওয়াগীতদের উদ্দেশ্য সাধন ছাড়া আর কিছুই নয়

ফাইলাক আশ-শামের মুরতাদরা তাদের গোমরাহীপূর্ণ ঘোষনাপত্রে যা বলেছে:
ফাইলাক আশ-শাম হতে একটি জরুরি বিবৃতি
পরম করুণাময় এবং অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি

সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সমগ্র জাহানের রব; এবং সালাত ও সালাম তাঁর মহান রাসূলের প্রতি। {আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করবেন, যারা আল্লাহর সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী শক্তিধর।} [আল হাজ্ব: ৪০]”

সিরিয়ান জনগণ ও বিপ্লব এবং সৌদী রাজতন্ত্র -সরকার ও জনগণ- উভয়ের মধ্যে বিদ্যমান সুগভীর একাগ্র ও ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্কের দ্বারা তাড়িত হয়ে, সৌদী রাজতন্ত্রের পাশে দাঁড়ানোর আরবী ও ইসলামী বাধ্যবাধকতার অপরিহার্য অনুসরণে, যে রাজতন্ত্র আরব এবং মুসলিমদের যাবতীয় বিষয় সমর্থনে কখনো একদিনও বিলম্ব করেনি, সর্বোপরি ইরানী সরকারের সাম্প্রদায়িক দুরভিসন্ধি প্রতিরোধে এবং উম্মাহর জন্য যে সংকট অপেক্ষা করছে তা মোকাবেলায় এহেন চরম ক্রান্তিলগ্নে উম্মাহর করণীয় সম্পর্কে আলোচনা কল্পে… ”

তাই, আমরা ফাইলাক আল শামের পক্ষ থেকে হারামাইন শরীফের সেবক বাদশাহ সালমান ইবন আবদুল আজিজ আল সৌদের নেতৃত্বে সৌদী রাজতন্ম্রের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ সহায়তা, নিরঙ্কুশ, অবিচল সমর্থন এবং পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করছি, যাতে করে অহংকার মত্ত অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করা যায়, যারা পাগলের মত ইয়েমেনের পবিত্র জমিনে হানা দিয়েছিল এবং বিদেশী ঘৃণ্য, বিভক্তকারী সাফাভী চক্রান্ত অনুযায়ী পবিত্র হারামাইনের জমিনে অনুপ্রবেশের স্পর্ধা দেখিয়েছিল। আমরা ঘোষণা করছি যে, এই গোঁড়ামিপূর্ণ অভিযানের লক্ষ্য উম্মাহকে বিভক্ত করা, শক্তি হ্রাস করে দুর্বল করা, এর সম্পদ লুন্ঠন করা এবং মক্কা আল মুকাররামাহ ও মাদীনা আল মুনাওয়ারায় অবস্থিত মুসলিমদের পবিত্র তীর্থস্থান দখল করা। এটা এমনই গুরুতর বিষয় যা কোন পরিস্থিতিতেই বরদাশত করা যায় না। তাই আমরা ফাইলাক আল শামের বীরগণের মধ্য হতে দুই হাজার যোদ্ধ প্রস্তুত করেছি, যারা পবিত্র হারামাইনের সেবক বাদশাহ সালমান ইবন আব্দুল আজিজ আল সৌদের নির্দেশের অধীনে পবিত্র হারামাইন শরীফের জমিনের নিরাপত্তা বিধান করবে এবং ভ্রাতৃপ্রতীম ইয়েমেন হতে উম্মাহর শত্রু ইরানী মদদপুষ্ট সশস্ত্র বাহিনীকে পরাজিত করে বিতাড়িত করবে। হক্ব সমর্থনের জন্য এবং যারা বিপ্লবের সময় সিরিয়ান জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিল, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আমরা এরূপ করছি। আমরা মুসলিমদের পবিত্র তীর্থস্থান রক্ষা করতে শামের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মধ্য থেকে দুই হাজার যোদ্ধ নিবেদন করছি। ও.আই.সিভুক্ত রাষ্ট্র সমূহের নিকট আমরা আবেদন করছি, এই সাফাভী চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য এবং যারা আমাদের পবিত্রতা ও পবিত্র স্থানে সীমালঙ্ঘনের অনুমোদন দেয়, যেকোন প্রচেষ্টায় তাদের প্রতিহত করার জন্য। বস্তুত ইরানের ঔদ্ধত্য এবং এর লেজুরবৃত্তি দৃঢ় প্রত্যয় () ছাড়া প্রতিহত হবে না এবং প্রত্যয়ের ভাষা ব্যতীত তা নিবৃত্ত হবে না। এটাই আমরা সর্বশক্তি ও প্রতিজ্ঞা নিয়ে পালন করছি এবং এ ব্যাপারে আমরা আল্লাহ তায়ালার নিকট বিজয় ও দৃঢ়তা চাই।”

“{আমার রাসূল ও বান্দাগণের ব্যাপারে আমার এই বাক্য সত্য হয়েছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্য প্রাপ্ত হয়। আর আমার বাহিনীই হয় বিজয়ী। } [আস-সাফফাত:১৭১-১৭৩]”

এবং আমাদের সর্বশেষ আহ্বান হলো, সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সৃষ্টিকূলের প্রতিপালক।”

ফাইলাক আশ শাম
২৫ রজব ১৪৩৬/ ১৪ই মে ২০১৫
এখানে তাদের গোমরাহ ঘোষণাপত্রের সমাপ্তি।

এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যখন মুরতাদরা (ত্বাগুত এবং রাফিদাহ) একে অন্যের সাথে লড়াই করে, তখন মুসলিমদের জন্য এক পক্ষের হয়ে অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করা বৈধ নয়। আল্লাহ তায়াল বলেন, {যারা ঈমানদার তারা জিহাদ করে আল্লাহর রাহেই। পক্ষান্তরে যারা কাফির তারা লড়াই করে শয়তানের পক্ষে, সুতরাং তোমরা জিহাদ করতে থাক } [আল-নিসা: ৭৬] সুতরাং কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয় রাফিদা নেতৃত্বের অধীনে আল সালুলের বিরুদ্ধে লড়াই করা কিংবা আল সালুলের নেতৃত্বে হাউথীদের বিরুদ্ধে লড়াই করা। যদি সে ত্বাগুত নেতৃত্বের অধীনে কাফির প্রশাসন রক্ষাকল্পে লড়াই করে, তবে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। তাই সকল মুসলিমের জানা উচিৎ যে, মুরতাদরা যখন একে অন্যের সাথে লড়ায়ে অবতীর্ণ হয়, তখন তার পক্ষ হতে তাদের বিরুদ্ধে বারাহ (বিচ্ছিন্নতা) ঘোষণা করা উচিৎ এবং যদি সক্ষম হয়- আল্লাহর রাহে উভয়ের বিরুদ্ধে জিহাদ করা তার জন্য অবশ্য কর্তব্য

এ ধরনের গোমরাহ ঘোষণাপত্র প্রকাশের নেপথ্য কারণ হল ত্বাগুতদের সাহায্য সহযোগিতার ওপর তাদের নির্ভরশীলতা। প্রথমত, ত্বাগুতরা তাদের আপাতনির্দোষ’, ‘নিঃশর্তসহায়তার ফাঁদ ফেলে, যাতে করে তারা ক্রমশঃ আপোষ-রফা করে, পরিশেষে যা মারাত্মক রিদ্দায় (ধর্মত্যাগ) পর্যবসিত হয়

তাই জিহাদের দাবীদার জাওলানী ফ্রন্ট কি কখনো তাদের মিত্র আল সালুলের নির্লজ্জ সেবকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে? কিংবা মারাত্মক ধর্মত্যাগী বক্তব্যের জন্য কি তারা সীমাহীন অজুহাত তৈরী করে রেখেছে? আল সালুল এখন প্রকাশ্যে ইদলিবের কিয়দংশ, হালাব এবং সাধারণভাবে শাম, এইসবসৈন্যবাহিনী” – তথা জাহরান আল্লুশ এবং ভ্রাতৃপ্রতীমইসলামিক ফ্রন্টএর মাধ্যমে দখল করে আছে। সবচেয়ে জঘন্য ব্যাপার হল, “জাইশ আল ফাতহএর উপদলগুলোকেআহলুস সুন্নাহএবংসত্যবাদী মুজাহিদিনহিসেবে জাওলানীর সাম্প্রতিক বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে

আল্লাহ যেন শামে আল কায়দার মুনাফিক ও মুরতাদ মিত্রদের স্বরূপ উন্মোচন করেন। ()

টীকা

১. এই জোটের ব্যাপারে জানতে হলে দাবিক-৮ হতেশামে আল কায়দার মিত্রসমূহদেখুন

২. সম্পাদকের মন্তব্য: এইখানেপ্রত্যয়’ (Resolve) শব্দের ব্যবহার আল সালুলের ঘোষিতপ্রত্যয়ের ঝড়” (Storm of Resolve) প্রবন্ধ নির্দেশ করে

৩. হিযবিয়্যাহ এবং ইরজাই হচ্ছে সে কারণ, যা সিরিয়ানআল কায়দাকে এসব মুরতাদ গোষ্ঠীদের মুহাজিরিন এবং আল আনসারের বিরুদ্ধে সহায়তা প্রদানকে অনুমোদন করে। “হিযবিয়্যাহ এবং ধূসর অঞ্চলপৃষ্ঠা ৬২-৬৬, দাবিক #, “জিহাদের দাবীদারদের ইরজাপৃষ্ঠা ৫২-৫৬, দাবিক #, প্রবন্ধ দুটি পড়ে দেখুন, কিভাবে জিহাদের দাবীদাররা পথভ্রষ্ট হয় এবং তা তাদের অন্ধকার পথে পরিচালিত করে


শামে আল- কায়েদার মিত্ররা (পর্বঃ ৩)

শুক্রবার ২ রবিউল আওয়াল ১৪৩৫ হিজরি (৩ জানুয়ারি ২০১৪) সিরিয়ার সাহওয়াতরা দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে যখন তাদের নেতারা তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য মিলিত হয়। প্রথম পদক্ষেপটি নেয় “জায়েশ আল মুজাহিদিন” এবং (জামাল মারুফের) “জাবহাত থুওয়ার সুরিয়া” । অতঃপর “ইসলামিক ফ্রন্ট” ও জাওলানি ফ্রন্ট। সাহওয়াতের শুরু থেকে জাওলানি ফ্রন্টের বড় বন্ধু ছিল ইসলামিক ফ্রন্ট যার কম্যান্ডার জাহরান ‘আল্লুশ

শাবান মাসে সাহওয়াত নেতাদের পছন্দের ঘাঁটি তুরস্কে ক্রুসেডার মেকক্লাথি জাহরান ‘আল্লুশের সাক্ষাৎকার নেয়। নিচের লিখাগুলো হচ্ছে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীদের লিখা সাক্ষাৎকারটির সারাংশ:

“ইসলামি বিদ্রোহীদের নেতার আমেরিকান মিডিয়াকে দেয়া প্রথম সাক্ষাতকারটি ছিল বাগাড়ম্বরপূর্ণ”।

“আমেরিকান মিডিয়াকে দেওয়া প্রথম সাক্ষাৎকারে ‘আল্লুশ ছিলেন সুকৌশলী”

“দামেস্ক থেকে ক্ষমতাসীন আলাভী গোত্রকে বের করে দেবার সিদ্ধান্ত থেকে তিনি সরে এসেছেন। সাক্ষাৎকারে তিনি তাদের ‘সিরিয়ার অংশ’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং যাদের হাত রক্তে রঞ্জিত কেবল তাদেরকেই দোষী করা হবে বলেন”।

“ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার দাবিকেও তিনি বাতিল করে দেন। তিনি বলেন কেবল সিরিয়াবাসীরাই সিদ্ধান্ত নিবে কি রকম রাষ্ট্র তারা চায়”।

“আমরা এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই যেখানে আমাদের অধিকারগুলো পূর্ণ হবে, সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নিদের উপর বৈষম্যেরও তিনি নিন্দা করেন। এরপর তিনি বলেন মানুষই সিদ্ধান্ত নিবে তারা কেমন রাষ্ট্র চায়। তিনি বলেন তিনি একটি টেকনোক্রেটিক[1] ও দায়িত্বশীল সরকার চান”।

“আগের অবস্থান থেকে সরে আসার কারণ মেকক্লাথি জানতে চাইলে ‘আল্লুশ বলেন, তার আগের বক্তব্যটি ছিল গ্বুতাতে তার বাস করার কারণে, যেখানে দুই বছর আগে একটি বিষাক্ত হামলায় শত শত মানুষ মারা যায়”

“আমরা আক্রমণের মুখে আছি। আমরা সবাই মনস্তাত্ত্বিক চাপের মধ্যে আছি। যখন আমি জেলে ছিলাম আর জেলার কারাবন্দীদের উপর নির্যাতন করত, অতঃপর সে চলে গেলে কারাবন্দীরা পরস্পর ঝগড়া ও মারামারি করত, তিনি বলেন”।

তার মুখপাত্র, ইসলাম ‘আল্লুশ বলেন, তিনি গ্বুতাতে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা কেবল অভ্যন্তরীণ ঘটনার জন্য, সৈন্যদের পরস্পর মুখোমুখি দাড় করাবার জন্য, মৌলবাদী ইসলামি শক্তির বিপক্ষে, যেমন দাওলাতুল ইসলাম। ‘অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বক্তব্য আছে। ‘অভ্যন্তরীণ বক্তব্য আমাদের সন্তানদের দাওলাতুল ইসলামে প্রবেশ রোধ করার জন্য’।

‘জাহরান কি তার চিন্তা পরিবর্তন করলেন?’ এটা খুব ভাল প্রশ্ন বলেন জসুয়া লেন্ডিস, ইউনিভার্সিটি অব অকলোহমার একজন সিরিয়ান এক্সপার্ট যিনি ‘আল্লুশ সম্পর্কে লিখেছেন। আল্লুশ ও তার সৈন্যরা বেশি কৌশলী হয়ে পরেছেন, তিনি বলেন, কমান্ডারের মুখপাত্রের সাথে টুইটারে কথা বলার পরে।

‘প্রত্যেকেই এটা জানে যে সরকার খুব দুর্বল ও পতন হওয়ার মুখে’, বলেন বাসাম বারাবান্দী, একজন সিরিয়ান কূটনীতিক যিনি ওয়াশিংটনে থাকেন। ‘এবং প্রত্যেক বড় খেলোয়াড়ই পশ্চিম ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে চাইছেন’।

“জাহরান বিজয়ী পক্ষে থাকতে চাইছেন”, তিনি বলেন।
লেন্ডিস বলেন, ‘আল্লুশ সেখানে থাকবেন। ‘তিনি একজন বিজয়ী হবেন’, তিনি বলেন। আল্লুশের জেইশ আল-ইসলাম আর অন্যান্য ইসলামিক গ্রুপ, ‘শক্ত সামর্থ্য দেশপ্রেমিক’ ... শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করবেন।

“নিজেকে নতুনভাবে উত্থাপন করাও ‘আল্লুশের ইস্তাম্বুলে আসার আরেকটি কারণ, যেখানে তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। অতঃপর তিনি জর্ডানে যান, যেখানে তিনি অন্যান্য বিদ্রোহী নেতা ও তাদের আন্তর্জাতিক সাহায্যদাতাদের সাথে আলোচনায় বসেন যারা দক্ষিণ সিরিয়ায় যুদ্ধ পরিচালনা করছে। তার যোদ্ধাদের অস্ত্র দরকার”।

মেকক্লারথির সাথে আলোচনায় তিনি প্রচলিত ধারাই সমর্থন করেন। “যদি আমরা সরকার উৎখাতে সমর্থ হই, তবে আমরা সিরিয়ার মানুষের উপরই ছেড়ে দিব কেমন রাষ্ট্র তারা চায়’, তিনি বলেন। আর সংখ্যালঘুদের সাথে একত্রে থাকার ব্যাপারে, এভাবেই তো আমরা সিরিয়ায় শতাব্দীর পর শতাব্দী থেকেছি। আমরা সংখ্যালঘুদের উপরে আমাদের ক্ষমতা বা তাদের দমিয়ে রাখতে চাই না। বরঞ্চ আমরা সরকারের সাথে যুদ্ধ করছি এই জন্যই যে যুগ যুগ ধরে সিরিয়ার শাসনক্ষমতায় থাকাকালীন তারা সংখ্যাগরিষ্ঠদের উপরে বৈষম্য করছে।

“আরেকটি সূত্র জানায়, ‘আল্লুশ তার ইমেজ উজ্জ্বল করার জন্য ইসলামের সাদা- কাল পতাকা পরিহার করে অন্যান্য বিদ্রোহীদের ব্যাবহার করা সিরিয়ার পতাকা ব্যাবহারে রাজি হয়েছেন”।

“জাহরান বলেন, জেইশ আল-ইসলামের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে সিরিয়ায় ওবামা প্রশাসনের বিশেষ দূত ডেনিয়েল রুবিন্সটেনের সাথে, স্টেট ডিপার্টমেন্টও যার সত্যতা স্বীকার করে।”


এই হচ্ছে ‘আল্লুশের মিত্রদের কথা। সারাংশ হচ্ছে এইঃ সে নিজের চেতনায় বিশ্বাসী, যা গণতন্ত্রের ভিত্তিপ্রস্তর। সে ধর্মের স্বাধীনতায় ও সকল ধর্মের সহাবস্থানে বিশ্বাসী, যা ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদের মূল ভিত্তি। ধর্মের মূলনীতির ব্যাপারে সে উদারমনা, ইসলামের বিরুদ্ধে ক্রুসেডে যোগ দেবার জন্য সে ইহুদী নেতাদের সাথে সাক্ষাত করে, সে সাহায্য পাবার আশায় ধর্মনিরপেক্ষ জাহিলিয়াতের ব্যানার তুলে ধরে। এবং তারপর ‘আল্লুশ হচ্ছে সিরিয়ায় আল- কায়েদার (জাওলানি ফ্রন্ট) একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু, জেইশ আল-ইসলাম থেকে প্রকাশিত অফিসিয়াল সাক্ষাৎকারে সে খোলামেলা ভাবেই জাওলানি ও আল- হারারির (জাওলানি ফ্রন্টের আরেক নেতা) প্রশংসা করে। আল- হারারিও ইন্টারনেট টুইটে তার প্রশংসা করে।

এই সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে ও তার বহু আগে যখন দাওলাতুল ইসলাম শামে বিস্তৃত হচ্ছিল, তখন থেকেই জিহাদিরা জাহরান ‘আল্লুশের এই বিচ্যুতি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। তারপরও জাওলানি ফ্রন্ট দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আল্লুশের ইসলামিক ফ্রন্টকে সমর্থন করে।[2]

এই সাক্ষাৎকারের পরেই জাওলানি ফ্রন্টের মিত্ররা এক ঘোষণায় জাওলানি ফ্রন্ট কর্তৃক শাবান মাসে কাল্ব লাওজাহ গ্রামে বিশের অধিক মুরতাদ দ্রুজকে হত্যার জন্য নিন্দা জানায়। যদিও তার কিছুদিন আগেই জাওলানি কাতারি তাগ্বুত চ্যানেল আল জাজিরায় এক সাক্ষাৎকারে প্রতিজ্ঞা করেছিলো যে সে তাদের কোন ক্ষতি করবে না আর এই একই মূলনীতি জাওয়াহিরির জিহাদি কাজের জন্য সাধারণ নীতিতেও রয়েছে। “প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা”য় জাওয়াহিরি এই কথা বলে। “চতুর্থঃ গোমরাহ দল সমূহ যেমন রাফিদা, ইসমাইলিয়্যাহ, কাদিয়ানী, আর গোমরাহ সুফিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যাবে না যতক্ষণ না তারা আহলুস সুন্নাহর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। আর যদি তারা আহলুস সুন্নাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তবে কেবল যুদ্ধরতদের বিরুদ্ধে লড়াই হবে যা একান্তই আত্মরক্ষামূলক। এইসব গোত্রের যারা যুদ্ধ করবে না, তাদের পরিবারবর্গ, উপাসনার স্থান, উৎসব কিংবা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হামলা করা যাবে না। তাদের মিথ্যা তরীকা, গোমরাহীপূর্ণ রীতি-নীতি প্রকাশ করা চালিয়ে যেতে হবে। আর যেসব স্থানে মুজাহিদদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে সেসব স্থানে ঐসব গোত্রকে দাওয়াতের পরে হিকমাহ সম্পন্ন আচরণ করতে হবে। জ্ঞান বাড়াতে হবে, দ্বিধা দূর করতে হবে, সৎ কাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ করতে হবে এমনভাবে যেন বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষা পায় যেমন মুজাহিদরা [উক্ত এলাকা থেকে] বিতাড়িত না হয়, কিংবা তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ অথবা ফিতনাহ সৃষ্টি না হয় যাতে শত্রুরা এর মাধ্যমে ঐ অঞ্চল দখল করতে পারে”। এর মাধ্যমেই জাওয়াহিরি তার বক্তব্য শেষ করেন।

জাওলানি তার সাক্ষাৎকারে বলে, “বর্তমানে আমরা তাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত নই, যারা আমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত নয়। এখানে কিছু দ্রুজ গ্রাম রয়েছে যারা বাসার আল- আসাদকে সমর্থন করে না, যুদ্ধও করে না। তারা মুক্তাঞ্চলে বাস করে, কেউ তাদের কোন ক্ষতি করে না”। যখন সাক্ষাৎকারের উপস্থাপক জিজ্ঞেস করে, “তবে কি আপনি তাদের গ্রামে আক্রমণ করেন নি, বাড়িঘর ধ্বংস করেন নি, তাদের সম্পত্তি আত্মসাৎ করেন নি, উপাসনালয় ধ্বংস করেন নি, কিছুই করেন নি এ পর্যন্ত? তখন সে বলে, “না, একেবারেই না, একদমই নয়। ... আর তাদের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের ব্যাপারে বলবো, তা কখনই হয় নি”।
  
তারা দুজনই দ্রুজদের বিরুদ্ধে জিহাদকে পরিত্যাগ করতে বলে।

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ)-কে একবার নুসাইরী এবং দ্রুজদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি বলেন, “সকল মুসলিমদের মতে দ্রুজ আর নুসাইরীরা হচ্ছে কাফির। না তাদের জবাইকৃত পশুর মাংস খাওয়া যাবে, না তাদের মেয়েদের বিয়ে করা যাবে। তাদের কাছ থেকে জিযিয়া নেওয়া যাবে না কারণ তারা ইসলাম পরিত্যাগকারি মুরতাদ, না মুসলিম, না ইহুদী, না খ্রিস্টান। তারা না দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজকে বাধ্যতামূলক মনে করে, না রমজানে রোযা রাখা, না হজ্জ পালন করা, না যা আল্লাহ ও তার রাসূল নিষেধ করেছেন যেমন মৃত পশু কিংবা মদ, আরও অনেক কিছু। আর সকল মুসলিমদের মতে তারা যদি দুটো সাক্ষ্যও দেয় [আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, মোহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল], পাশাপাশি তাদের ভ্রান্ত মতবাদ চালিয়ে যায় তবেও তারা কাফির। আর দ্রুজদের ব্যাপারে তারা হচ্ছে হাসতাকিম আদ দারজির অনুসারী, যিনি ছিলেন আল হাকিমের অনুসারী (একজন মুরতাদ উবায়দী শাসক)। আল হাকিম তাঁকে তায়মুল্লাহ ইবনে তালবাহ উপত্যকার মানুষের কাছে প্রেরণ করে তাকে ঈশ্বর হিসেবে বিশ্বাস করানোর জন্য। তারা তাকে বলত ‘সর্বজ্ঞানী, স্রষ্টা’ আর তার নামে শপথ করত। তারা এসেছে ইসমাইলিয়্যাহ গোত্র থেকে যারা মনে করে মোহাম্মাদ ইবনে ইসমাইল, মোহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহর শারীয়াহ বাতিল করে দিয়েছে। তারা শিয়াদের থেকেও খারাপ কাফির। তারা মনে করে পৃথিবী কখনো ধ্বংস হবে না এবং ইসলামের আদেশ- নিষেধকে তারা অস্বীকার করে। তারা বাতিনি কারামিতাহ গোত্র থেকে এসেছে [যারা বলে কুরআনের একটি গোপন অর্থ আছে যা প্রকাশিত অর্থ থেকে আলাদা] যারা ইহুদী, খ্রিষ্টান বা মুশরিক আরবদের থেকেও খারাপ কাফির। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে এরিস্টটল ও তার মত কিংবা মাজুসের মত দার্শনিক হতে। তাদের মতবাদ হচ্ছে দার্শনিক ও মাজুসদের মতবাদের একটি মিশ্রণ। তারা মুনাফিকদের মত শিয়া মতবাদ প্রচার করে”। [মাজমু আল ফতোয়া]

তিনি রাহিমাহুল্লাহ আরও বলেন, এই লোকদের কুফরি এমন যাতে মুসলিমরা কখনো সন্দেহ পোষণ করেন নি। বরঞ্চ যে তাদের কুফরি সম্পর্কে অবিশ্বাস করে সেও কাফির। তারা না আহলে কিতাব না মুশরিক। বরং তারা সর্বাধিক গোমরাহ কাফির, তাই তারা যে পশু জবাই করে তার মাংস হালাল নয়। তাদের নারীদের দাসী আর তাদের সম্পত্তি অধিকার করা যায়। তারা মুরতাদ খারেজি যাদের তাওবাহ কখনো গ্রহণযোগ্য নয়।[3] তাদেরকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানে হত্যা করতে হবে ও নির্ধারিত নিয়মে অভিশাপ দিতে হবে। তাদেরকে প্রহরী, রক্ষক বা জিম্মাদার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। তাদের আলেম ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে হত্যা করতে হবে। তাদের বাড়িতে ঘুমানো যাবে না, তাদের সাথে থাকা যাবে না, চলা যাবে না, তাদের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া যাবে না। তাদের উপরে হুদুদ কায়েম না করে আল্লাহর শারীয়াহ অগ্রাহ্য করা মুসলিম কর্তৃপক্ষের জন্য নিষিদ্ধ”। [মাজমু আল ফতওয়া]

বাতিনিয়াহদের (যাদের মধ্যে দ্রুজরাও রয়েছে) ব্যাপারে তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেন, যদি তাদের বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া যায় তবে তারা তাওবাহর লক্ষণ প্রকাশ করে কারণ তাদের মতবাদের মূলভিত্তি হচ্ছে তাক্বিয়্যাহ (নিজেদের বিশ্বাসকে গোপন রাখার স্বার্থে মিথ্যা বলা) এবং তাদের প্রকৃত অবস্থা গোপন। কাওকে চেনা যাবে আবার কাওকে চেনা যাবে না। তাই তাদের সাথে সতর্কতার সাথে চলতে হবে। তাদেরকে একসাথে থাকতে দেয়া যাবে না, অস্ত্র বহন করতে দেয়া যাবে না, তাদের মধ্য থেকে সৈন্য বানানো যাবে না। তাদেরকে ইসলামের বিধান মানার ক্ষেত্রে জোর করতে হবে, যেমন দিনে পাঁচবার সালাত আদায় করা ও কুরআন তিলাওয়াত করা। তাদের মধ্যে এমন কিছু মানুষ থাকবে যারা তাদের ইসলামের বিধান শিক্ষা দিবে ও তারা সেই শিক্ষকদের সাথে থাকবে। আর তাদের নেতাদের মধ্যে যারা তাওবাহর লক্ষণ দেখাবে তাদেরকে তাদের ভূমি থেকে উৎখাত করা হবে ও মুসলিমদের মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসা হবে যেখানে এই গোত্রের কোন প্রাধান্য নেই যাতে হয় আল্লাহ তাকে হেদায়াত দেন অথবা সে মুসলিমদের কোন ক্ষতি না করে মুনাফিক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে”। [মাজমু আল ফতওয়া][4]

এই হচ্ছে দ্রুজদের ব্যাপারে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ’র ফাতওয়া যে, তাদেরকে আহলুজ জিম্মা মনে করা যাবে না, কারণ তারা ইহুদী বা খ্রিষ্টানদের চেয়ে খারাপ, আর তারা যদি তাওবাহ করে এবং ইসলাম গ্রহণও করে সেক্ষেত্রে মুসলিম কর্তৃপক্ষের তাদের ব্যাপারে সাবধানী হতে হবে যেহেতু তারা তাক্বিয়্যাহ করতে পারে আর তাই তাদের ক্ষেত্রে সেরূপ পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলে চিন্তা করুন তাওবাহ না করলে কি করতে হতে পারে! বাতিনিয়াহদের (দ্রুজ ও নুসাইরীরা যার অন্তর্ভুক্ত) সর্বাধিক কুফরির ব্যাপারে ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অন্যান্য কাফিরদের (ক্রুসেডার ও তাতার) সাহায্য করার ব্যাপারে আরেকটি ফতওয়ায় তিনি বলেন, “অন্য সব কাফির জাতির (যেমন তাতার কিংবা ক্রুসেডার যেমন ফ্রেঞ্চ যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত) চেয়ে মোহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উম্মাহর সর্বাধিক ক্ষতি হয়েছে তাদের দ্বারা। এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে এইসব মানুষদের বিরুদ্ধে জিহাদ ও তাদের বিরুদ্ধে হুদুদ কায়েম করা সবচেয়ে বড় (আল্লাহর) আনুগত্য এবং অত্যাবশ্যক কাজ।

এটি মুশরিক কিংবা আহলে কিতাবের মধ্যে যারা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করছে না তাদের বিরুদ্ধে জিহাদের চেয়ে উত্তম, কারণ এদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা মুরতাদদের বিরুদ্ধে জিহাদের মধ্যে পড়ে। আস-সিদ্দিক ও তার সাথীগণ মুরতাদদের বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু করেছিলেন আহলে কিতাবের কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু করার পূর্বে। তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ মুসলিম ভূমির যে অংশটি দখল হয়ে গিয়েছে তাকে রক্ষা করে এবং যে কেউ মুসলিম ভূমিতে প্রবেশ করতে চায় সে আর সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। আর মুশরিক ও আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা আমাদের সাথে যুদ্ধ করে নি, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মানে ধর্মকে আরও বেশি প্রকাশ করা। সম্পদ দখল করার চেয়ে রক্ষা করার গুরুত্ব বেশি। আর অন্যদের চেয়ে তারা মুসলিমদের বেশি ক্ষতি করেছে। বরং তাদের ক্ষতিটা হচ্ছে মুশরিক ও আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা মুসলিমদের ক্ষতি করেছে তাদের মতই। বরং ধর্মের প্রতি তাদের ক্ষতি মুশরিক ও আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা যুদ্ধ করেছে তাদের ক্ষতির চেয়েও বেশি। তাই প্রত্যেক মুসলিমের উপরে এটা বাধ্যতামূলক তার সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা। তাদের সম্পর্কে যতটুকু জানে কোন কিছুই গোপন করা নাজায়েজ। বরং সে সেটা সবার সামনে প্রকাশ করবে যাতে প্রত্যেক মুসলিম তাদের প্রকৃত অবস্থা জানতে পারে। তাদের সেনাবাহিনী বা রাষ্ট্রের কর্মচারীদের মধ্যে রাখার জন্য সহযোগিতা করার অধিকারও কারো নেই। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের ব্যাপারে যে নির্দেশ দিয়েছেন সে ব্যাপারে চুপ থাকার অধিকারও কারো নেই। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের ব্যাপারে যে নির্দেশ দিয়েছেন তা রোধ করবার অধিকারও কারো নেই। এটা হচ্ছে ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে নিষেধ করা এবং কেবল আল্লাহ তায়ালার জন্যই জিহাদের একটি বড় দরজা”। (মাজমু আল ফতওয়া)

জাওলানি ফ্রন্টের দ্রুজ গোত্রের প্রতি উপরোক্ত ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তাদের মিত্ররা একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে। নিচে তাদের বিবৃতি প্রকাশ করা হলঃ

“কালব লাওজাহ গ্রামের মানুষের উপরে ঘটে যাওয়া হৃদয় বিদারক ঘটনার ব্যাপারে বিবৃতি”

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কুদসি হাদিসে বলেন, “আমি তোমাদের জন্য জুলুমকে হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্য তা অবৈধ করেছি, সুতরাং জুলুম করো না। এটি মুসলিম থেকে বর্ণিত”।

“আমাদের নিপীড়িত জাতি গভীর দুঃখের সাথে মুক্ত ইদলিব প্রদেশের কালব লাওজাহ গ্রামে দ্রুজ গোত্রের সন্তানদের উপরে ঘটে যাওয়া দুঃখজনক ঘটনার কথা শুনেছে, যাদের ব্যাপারে উত্তর সিরিয়া সাক্ষ্য দিচ্ছে যে তারা সিরিয়ার বিপ্লবে একটি উত্তম ও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছেন এবং ইদলিব প্রদেশের সর্বত্র থেকে আসা তাদের দেশের শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে, যারা আসাদ সরকারের অত্যাচার ও বিমান হামলার কারণে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিল”।

“ঐ জোটগুলো যারা এই ঘটনায় দুঃখিত ছিল তারা দ্রুত তাদের ভাই হারাকাত আস শাম আল ইসলামিয়ার মাধ্যমে একটি অফিসিয়াল প্রতিনিধি দল পাঠান যেহেতু তারা এই এলাকার কাছেই অবস্থান করে। ঐ প্রতিনিধিদল ঐ গ্রামের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাত করে ঘটনা তদন্তের এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার আশ্বাস দেয়”।

“যা ঘটেছে এতে পুরো জাতির সাথে সামরিক বিপ্লবী জোটগুলোও ব্যথিত ও শোকাহত। নিম্নোক্ত ব্যাপারটি আমরা পুনরায় ব্যক্ত করছিঃ

“আমরা এই বেদনাদায়ক ঘটনার নিন্দা জানাই যা আমাদের ব্যথাকে বাড়িয়ে তুলেছে যেহেতু আমরা দেখছি কিভাবে সিরিয়ার বিভিন্ন অংশে অপরাধী সরকার আমাদের জাতির উপরে বোমা ফেলছে।”

“কালব লাওজাহ গ্রামে যা হয়েছে তা আমাদের সত্য ধর্মের শিক্ষার বিপরীত, যা আমাদেরকে শিখায় মানুষের উপর নিপীড়ন বন্ধ করতে এবং কারণ ছাড়া গোত্র বা জাতিগত রক্তপাত বন্ধ করতে। মুক্ত অঞ্চলগুলোতে যাতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে এজন্য আমরা অন্য গোত্রগুলোর সাথে বসে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিব। যারা জড়িত তাদের সকলকেই আমরা একটি নিরপেক্ষ শারীয়াহ কোর্টের মুখোমুখি করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি”।

“আমরা আমাদের জাতির সন্তানদের এটাই বলতে চাই যে, আপনাদের রক্ষা ও নিরাপত্তা দিতে যা করা দরকার আমরা তার সবই করব। এটা আমরা করব আমাদের বিশুদ্ধ ধর্মের আদেশ পালনের জন্যই। আমাদের অস্ত্র কারো দিকে তাক করা হবে না কেবলমাত্র সরকার, দায়েস ও তাদের মিত্রদের মধ্যে যারা জাতির বিরুদ্ধে সন্ত্রাস করেছে ও অপরাধ সাধন করেছে”।

“আমরা সকল পক্ষের কাছ থেকে যুক্তি, সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল সাধনকে গুরুত্ব দেওয়া, শারীয়াহ ও মহান বিপ্লবের নীতিগুলো কথায় ও কাজে মেনে চলাটা আশা করি, কারণ বিপ্লব হচ্ছে জাতির বিপ্লব এবং এটা আল্লাহর ইচ্ছায় চলতে থাকবে। সুতরাং যেই এই বরকতময় বহরে যুক্ত হয়নি, ঘটনাগুলো তাকে অতিক্রম করবে এবং মহান সিরিয়ার জনগণ তাকে প্রত্যাখ্যান করবে।”

“এতে স্বাক্ষর করেছেনঃ ১.আল ইত্তিহাদ আল-ইসলামি লি আজনাদ আস-শাম- ২. কাতাইব থুওয়ার আশ-শাম, ৩. হারকাত আহরার আশ-শাম ৪. আল জাবহাহ আশ-শামিয়াহ- ৫.তাজাম্মু ফাস্তাকিম কামা উমিরত।”

“শুক্রবার, ২৫ শাবান ১৪৩৬ হিজরি; ইংরেজিঃ ১২ জুন ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ”

কয়েক ঘণ্টা পরে জাওলানি ফ্রন্ট একটি বিবৃতি প্রকাশ করে যা তাদের মিত্রদের অনুভূতিরই প্রতিফলন করে। এটা শুরু হয় এভাবেঃ

“ইদলিবের গ্রামাঞ্চল কালব লাওজাহ গ্রামে যা ঘটেছিল তার উপর বিবৃতি”

“সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি নিপীড়নকে নিষিদ্ধ করেছেন এবং তাঁর বান্দাদের জন্য একে হারাম করেছেন। শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম) এর উপর যিনি বলেন, ‘নিপীড়নের ব্যাপারে সাবধান হও। কারণ নিপীড়ন হচ্ছে শেষ বিচারের দিনের অন্ধকার’। শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক সাহাবীদের প্রতিও এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছেন। অতঃপর-

“জাবহাত আল নুসরা গভীর দুঃখের সাথে ২৩ শাবান ১৪৩৬ হিজরি, ইংরেজি ১০ জুন ২০১৫ ইদলিবের গ্রামাঞ্চল কালব লাওজাহ গ্রামে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি জানতে পারে যেখানে জাবহাত আল নুসরার কয়েকজন সদস্য তাদের নেতাদের পরামর্শ ছাড়াই গ্রুপের মূলনীতি বিরোধী কাজে লিপ্ত হয়। ঘটনাটি ঘটার সাথে সাথে জাবহাত আল নুসরার কিছু প্রতিনিধি ঐ ঘটনা অনুসন্ধানে যান এবং গ্রামের লোকদেরকে আশ্বস্ত করেন যে যা ঘটেছে তা ছিল একটা ভুল ও তা নেতাদের অগোচরে ঘটেছে। এই গ্রাম ও তার জনগণ আমাদের অঞ্চলসমূহে নিরাপদে থাকবে। যারা যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত ছিল সবাইকে একটি শারীয়াহ কোর্টের মুখোমুখি আনা হবে এবং রক্তপাতের মূল্য তাকে দিতে হবে, আর এটা কেবল আমাদের রবের শারীয়াহ অনুসারেই হবে যেহেতু আন-নুসরা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কেবল শারীয়াহ’র পতাকাকে উত্তোলিত করতে এবং এর বিধান সমূহকে বাস্তবায়িত করতে।”।

“জাবহাত আল নুসরা নিশ্চিত করছে যে শামে লড়াইয়ের শুরু থেকে এটি তার অস্ত্র ধরেছে কেবলমাত্র দুর্বৃত্ত নুসাইরী আর্মি, গোমরাহ খারেজী ও দুর্নীতিপরায়ণ জোটসমূহের বিরুদ্ধে যারা ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং মুসলিমদের জানমালের উপর আঘাত হেনেছে। বন্ধুর আগে শত্রুই এই ব্যাপারে সাক্ষ্য-প্রদান করে এবং সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার। আমরা সকলকে বলব প্রচার করার আগে প্রকৃত ঘটনাটি জানতে এবং অনুসন্ধান করতে। জাবহাত আল-নুসরার দরজা সবার জন্য খোলা। এরকম ভুল সকল জোটের ক্ষেত্রেই হতে পারে কিন্তু আল্লাহর অনুগ্রহে আমরা এটাকে কাটিয়ে উঠতে পারবো যতক্ষণ আমাদের ঘাড় আল্লাহ তায়ালার আইনের সামনে নত থাকে”।

“সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সৃষ্টি করেছেন। {আর আল্লাহ তার কাজে পরাক্রমশালী, যদিও বেশির ভাগ মানুষই তা জানে না}”

“জাবহাত আল নুসরাহ- আল মানারাহ আল বাইদাহ ইসলামিক মিডিয়া”
“প্রকাশের তারিখঃ শনিবার, ২৬ শাবান ১৪৩৬ হিজরি; ইংরেজি ১৩ জুন, ২০১৫”

সুতরাং জাওলানি ফ্রন্ট ও তার মিত্রদের কাছে মুরতাদ ও বিশ্বাসঘাতক দ্রুজদের রক্তপাত করাটা নিপীড়ন! আর যদি কেউ সেটা করেও থাকে তবে তাকে শাস্তি পেতে হবে তাদের অনুসরণ করা ‘শারীয়াহ’ দ্বারা! একটা ব্যাপারই শুধু বাকি, যারা এ কাজে জড়িত তাদেরকে তাদের মিত্রদের ‘নিরপেক্ষ শারীয়াহ’ কোর্টে নেয়াটা কি তাদের শারীয়াহর অংশ; আর যদি তারা এই কোর্টে না যায় তবে কি তারা শারীয়াহ থেকে দূরে সরে গেল?

এই ঘটনার এক মাস পরে লাবিব আন নাহাস- আহরার আস-শামের বৈদেশিক রাজনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির প্রধান- ১০ জুলাই ২০১৫ তে ওয়াশিংটন পোস্টে একটি আর্টিকেল লিখে, যার শিরোনাম ছিলো “সিরিয়ার বিপ্লবীদের ভুলভাবে তুলে ধরার মারাত্মক পরিণতি”। এখানে সে বলে,

“এটা এখন দৃশ্যমান যে, সিরিয়ার লড়াইয়ে ওবামা প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া একটি শোচনীয় ব্যর্থতা ... ছোট পরিসরে, ইরাক ও আফগানিস্তানের অভিজ্ঞতা থেকে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া, একইসাথে শুধু দাওলাতুল ইসলামকে নিয়ে পড়ে থাকা একচোখা মিডিয়ার শব্দ দূষণ, অর্জন যোগ্য সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যে চেয়ে অধিক গুরুত্ব পেয়েছে... সিরিয়ান বিদ্রোহীদের অযথা ‘চরমপন্থীঅথবামধ্যমপন্থীনামে নামকরণের মাধ্যমে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে এর ব্যর্থতা পরিষ্কার”

“ডিসেম্বর মাসে সেক্রেটারি অব স্টেট জন এফ কেরি বলেন, ‘সিরিয়ানদের একজন স্বৈরাচারী বা সন্ত্রাসীদের মধ্যে একটি বেছে নিতে হবে না’। কেরি বলেন, এখানে তৃতীয় আরেকটি ক্ষেত্র রয়েছে। ‘মধ্যপন্থী সিরিয়ান গোষ্ঠী যারা প্রতিদিনই আসাদ ও উগ্রপন্থীদের সাথে যুদ্ধ করে আসছে’। দুর্ভাগ্যক্রমে সুপারিশটি অর্থহীন হয়ে পরেছে কারণ যুক্তরাষ্ট্র ‘মধ্যপন্থী’ শব্দটিকে এত ছোট ও অযৌক্তিক আঙ্গিকে ব্যাখ্যা করেছে যে এতে বেশির ভাগ বিদ্রোহীরাই বাদ পড়ে গিয়েছে”।
“আমি যে গ্রুপটা থেকে এসেছি, আহরার আস-শাম এর একটি উদাহরণ। আমাদের নামের মানে ‘সিরিয়ার মুক্ত মানুষ’। আমরা নিজেদের একটি মূলধারার সুন্নি ইসলামিক গ্রুপ বলে মনে করি যেটা সিরিয়ানদের দ্বারা এবং সিরিয়ানদের জন্যই পরিচালিত। আমরা সিরিয়ানদের ন্যায়বিচারের জন্য যুদ্ধ করছি। যদিও আমাদের মিথ্যাভাবে দায়ী করা হয় আল কায়েদার সাথে যুক্ত থাকার জন্য এবং আল কায়েদার মতাদর্শ প্রচারের জন্য”।

“এর চেয়ে মিথ্যা আর কিছুই হতে পারে না। আমরা মনে করি সিরিয়ায় একটি জাতীয় ঐক্যের দরকার আর তা কেবল একটি গ্রুপের মতামত ও কর্তৃত্বের মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে না এবং একটি মতাদর্শেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। আমরা ক্ষমতার ভারসাম্যে বিশ্বাস করি যা সংখ্যাগরিষ্ঠের বৈধ মতামতকে শ্রদ্ধা জানাবে অপরদিকে সংখ্যালঘুদেরকেও রক্ষা করবে এবং সিরিয়ার ভবিষ্যতের জন্য একটি ইতিবাচক ও বাস্তবসম্মত ভূমিকা পালন করবে। আমরা সিরিয়ার জন্য একটি মধ্যপন্থী ভবিষ্যৎ কামনা করি যা এই রাষ্ট্রকে রক্ষা করবে এবং তার প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে গড়ে তুলবে যাতে সকলে উপকৃত হয় ...। সিরিয়ানরা আমাদেরকে বিপ্লবের এক অবিচ্ছেদ্য ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করে যদিও প্রথম দিন থেকেই ওবামা প্রশাসনের কাছে আমরা অন্যায়ভাবে উপেক্ষিত”।

“নিজেদের তৈরি করা গর্তেই তারা আটকে গেছে, হোয়াইট হাউসের নীতিনির্ধারকরা রাজস্বের মিলিয়ন মিলিয়ন ইউএস ডলার খরচ করেছে তথাকথিত ‘মধ্যপন্থী’দের সাপোর্ট করার সিআইএর ব্যর্থ প্রজেক্টে। কিন্তু এই মধ্যপন্থী গ্রুপগুলো প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে, শুধুমাত্র দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধেই নয়। উপরন্তু, আত্মবিসর্জন মূলকভাবে একদিকে নীতিগতভাবে বিপরীত দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই, অপরদিকে আসাদের বিরুদ্ধে লড়াই কোন যুদ্ধই ঠিকভাবে শেষ হচ্ছে না।”

“নৈতিকতাই যথেষ্ট আসাদকে “অপশন হিসেবে বাদ দেয়ার জন্য, এবং যুদ্ধের গতি- প্রকৃতিই বলে দিচ্ছে যে তার দিন শেষ হয়ে আসছে। তাই প্রশ্নটি হচ্ছেঃ কে শেষ হাসি হাসবে- দাওলাতুল ইসলাম না সিরিয়ার বিদ্রোহীরা। এই প্রশ্নটি ওয়াশিংটনকে এটা স্বীকার করতে বাধ্য করবে যে, দাওলাতুল ইসলামের উগ্রবাদী নীতিকে মোকাবেলা করতে পারে কেবল একটি স্থানীয় সুন্নি প্রতিনিধিত্ব। আর ‘মধ্যপন্থী’ কেমন হবে তা সিআইএ নির্ধারণ করবে না বরং করবে সিরিয়ানরা”।

“আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা না পাওয়ার হতাশা সত্ত্বেও আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। যে ব্যাপারগুলো নিয়ে আলোচনা করা দরকার তা হচ্ছে কিভাবে আসাদের শাসনের অবসান ঘটানো যায়, কিভাবে দাওলাতুল ইসলামকে পরাজিত করা যায় এবং কিভাবে দামেস্কে একটা দৃঢ় ও প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠন করা যায় যেটা বিচ্ছিন্নতা দূর করে সিরিয়াকে শান্তি, মতপার্থক্য দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক উন্নতির পথে নিয়ে যাবে। আমেরিকার জন্য গতি পরিবর্তন করার সুযোগ এখনও রয়েছে। কেরির জন্য ‘তৃতীয় সুযোগ’টি রয়েছে কেবলমাত্র যদি ওয়াশিংটন চোখ খুলে এবং তা দেখে”।

সুতরাং সে ‘আল- কায়েদা’ ও তার তথাকথিত ‘আদর্শ’কে অস্বীকার করলো এবং দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুই বছর ধরে তাগ্বুতকে সাহায্য করার পরে এখন খোলাখুলিভাবে ক্রুসেডারদের সহযোগিতা করার ঘোষণা দিলো। আর এই জোটটাই জাওলানি ফ্রন্টের মতে সবচেয়ে বেশি ‘ইসলামিক’ জোট, যাদেরকে তারা দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে সাহায্য করেছে বিশাল মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও।

সাহওয়াত জোটের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা মতপার্থক্য সৃষ্টি করুন যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদের মধ্যে বিরোধ চরমে উঠে। আর আল্লাহ তায়ালা তাদের মুনাফিকি, দ্বিমুখী নীতি ও জিহাদ থেকে তাদের গোমরাহীকে প্রকাশ করে দিন।


শামে আল কায়েদার মিত্ররাঃ পর্ব ৪
এক বছর আগে ১৪৩৫ হিজরিতে জাওলানি ফ্রন্টের মিথ্যাবাদী আবু আব্দুল্লাহ আশ-শামী পুরো পৃথিবীকে বলেছিল, “আমি তোমাদের (দাওলাতুল ইসলাম) বিরুদ্ধে মুবাহালা করছি মানুষকে তার আক্বিদার ব্যাপারে পরীক্ষা করার জন্য... বরঞ্চ তোমরা সর্বোত্তম মানুষদের পরীক্ষা করছ। আমি মুজাহিদিন বলতে মুজাহিদ গ্রুপগুলো যেমন ইসলামিক ফ্রন্ট, জেইশ আল মুজাহিদিন এদেরকেই বুঝাচ্ছি”। (আল মুবাহালাহ) “যুদ্ধ কেবল দুই পক্ষের মধ্যে হচ্ছে, এক পক্ষে দাওলাহ আর এক পক্ষে জারবা ও ইদ্রিস (দুইজন সিরিয়ার ন্যাশনাল কোয়ালিশনের নেতা), কথাটা সত্য থেকে অনেক দূরে। যারা উত্তরাঞ্চলে দাওলাহ গ্রুপের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বিশাল বোঝা নিয়েছে তারা হচ্ছে ইসলামিক ফ্রন্ট ও জেইশ আল-মুজাহিদিন। আর ইসলামিক ফ্রন্ট ও জেইশ আল-মুজাহিদিন দাওলাহ গ্রুপের বিরুদ্ধে যুদ্ধে দুই বড় খেলোয়াড়- তারা আমাদের কাছে মুরতাদ হিসেবে প্রমাণিত হয়নি। আর আমরা দাওলাহর চেয়ে তাদের সম্পর্কে বেশি জানি যেহেতু আমরা তাদের কাছেই অবস্থান করছি”। [ওয়া লাও আন্নাহুম ফা’আলু মা ইউ’আদুনা বিহ]

এই মুবাহালার অল্প কিছুদিন পরেই জেইশ আল-মুজাহিদিন ধর্মনিরপেক্ষ সিরিয়ান ন্যাশনাল কোয়ালিশন, এর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, এর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে তাদের সম্পর্ক ঘোষণা করে।[5] জেইশ আল-মুজাহিদিন তাদের মুরতাদ হওয়ার আরেকটি দলিল স্বরূপ একটি প্রচারপত্রে কিছুদিন আগে বলে, “জেইশ আল-মুজাহিদিন এর নেতারা তুরস্ক, তার সরকার ও জনগণের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে তুরস্কের একজন সৈন্য ও নাগরিক সন্ত্রাসী দাওলাহ ও পিকেকে পার্টির হাতে নিহত হওয়ায়। আমরা জেইশ আল-মুজাহিদিন তুরস্কের জনগণ ও সরকারকে সন্ত্রাসী দাওলাহ ও পিকেকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সংহতি ও পুরোপুরি সাহায্য করব ... আমরা তুরস্কের ভাইদের সাথে একি খন্দকে দাঁড়াব এবং এই হত্যাকে সিরিয়ার মানুষদের প্রতি তুরস্কের সমর্থনের প্রতি এক আঘাত হিসেবে বিবেচনা করব”। তারা তাদের বক্তব্যকে তুরস্কের জাহিলী পতাকা দ্বারা সজ্জায়িত করতে ভুলে নি!

তুরস্ক ক্রুসেডার ন্যাটো জোটের সদস্য। এটি ক্রুসেডার ও আমেরিকার পরিচালিত বিভিন্ন সমরাভিযানে অংশ নেয় যেমন ‘অপারেশন এন্ডুরিং ফ্রিডম-আফগানিস্তান’; ‘অপারেশন এন্ডুরিং ফ্রিডম- হর্ন অব আফ্রিকা’ (সোমালিয়া ও এর চারপাশের অংশে) এবং ‘অপারেশন ইনহেরেন্ট রিসলভ’ (ইরাক ও সিরিয়ায় দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে)। তুরস্কের সরকার মানবরচিত আইন প্রণয়ন, পরিচালনা ও বাস্তবায়ন করে। এর সেনাবাহিনী তুরস্কের সরকার ও তাগ্বুত মিত্রদের রক্ষায় নিয়োজিত। এর সরকার ও সেনাবাহিনী হচ্ছে মুরতাদের একটি নির্লজ্জ উদাহরণ, তারপরও জেইশ আল- মুজাহিদিন তুরস্কের সরকারকে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়তা করছে। ইমাম মোহাম্মাদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব রাহিমাহুল্লাহ বলেন ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবার একটি কারণ হচ্ছে মুশরিকদের মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহযোগিতা প্রদান। এর প্রমাণ হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, {হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেও তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই একজন হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে সৎ পথে পরিচালিত করেন না।} (সূরা মায়দাহঃ ৫১)

আর ইসলামিক ফ্রন্টের ক্ষেত্রে, আহরার আশ-শাম হচ্ছে এই বিভক্ত গ্রুপের অন্যতম প্রধান সদস্য। জাওলানি ফ্রন্টের নেতৃত্ব অনেক কষ্ট করে তাদেরকে ইসলামিক এমনকি জিহাদি হিসেবে চিহ্নিত করেছে, কিন্তু এর অফিসিয়াল নেতৃত্বের বর্তমান ঘোষণা শুধু জাওলানি ফ্রন্টের জিহাদের দাবিদারদেরকে অপমানিত করেছে। প্রকৃতপক্ষে তাদের মধ্যে একটা মনস্তাত্ত্বিক মিডিয়া যুদ্ধ চলছে নেতৃত্বের জন্য ভালবাসা ও স্বমতের প্রতি গৌরব থেকে, আর যখনি বরফ গলতে শুরু করবে, দুই পক্ষই তাদের গোপন সেলগুলোকে নিয়ে আসবে তাদের নেতৃত্বকে আই.ই.ডি ও সাইলেন্সার দিয়ে চুপিসারে হত্যা করার জন্য, এখনও তা শুরু না হলেও, অদূর ভবিষ্যতে তা হবেই। সবকিছুর পরেও, আহরার আশ-শামের মুরতাদরা একসময় গুরুত্বপূর্ণ সাহাওয়াত ও বিচ্যুত গোত্র হিসেবে গণ্য ছিল জাওলানি নেতৃত্বের কাছে।[6]

সিরিয়ার সাহাওয়াতের শুরু থেকে জাওলানি ফ্রন্ট আহরার আশ-শামকে মুজাহিদ হিসেবে প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করছে, যতক্ষণ পর্যন্ত জাওলানি ফ্রন্ট ও তার ভাবাদর্শে বিশ্বাসীরা জর্ডানিয়ান তাগ্বুতের ছায়ায় বিশ্রাম নিয়ে আহরার আশ-শামের বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগের পরিচালক লাবিব আন নাহাসের নির্লজ্জ আর্টিকেলগুলো পড়ে অস্বস্তি অনুভব করে। তার সাম্প্রতিক রচনা[7] যেটি ২১ জুলাই ২০১৫ তে ব্রিটিশ ক্রুসেডার পত্রিকা “টেলিগ্রাফে” প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম ছিলো “আমি একজন সিরিয়ান এবং আমি প্রতিদিন আই.এস.আই.এল এর বিরুদ্ধে লড়াই করি। এই হুমকিকে পরাজিত করতে পশ্চিমা শক্তিগুলোর বোমার চেয়ে বেশি কিছুর দরকার।” সেখানে সে বলে:

“রাক্কায় ... মানুষজন দেখছে (পশ্চিমের নির্লিপ্ততা)। তথাকথিত দাওলাতুল ইসলাম আজকের তুলনায় তখন একটি ছায়া মাত্র ছিলো। তারা আসাদ সরকার উৎখাতে পশ্চিমের গড়িমসির সুযোগে তাদের প্রোপাগান্ডা চালিয়ে নেয়। পশ্চিম আসাদ ও তার ইরানীয়ান শিয়াদের সাথে মিলে ষড়যন্ত্র করছিল এই অঞ্চলের সুন্নি আরবদের পরাজিত ও লাঞ্ছিত করার জন্য ...”

“এই বিপ্লবে বেশিরভাগ সিরিয়ানের লক্ষ ছিল মুক্তি, সংগ্রাম ও জীবনের আধুনিকীকরণ। আমরা আহরার আশ-শাম ও অন্যান্য সশস্ত্র বিপ্লবী যোদ্ধারা এই সব সিরিয়ানদের জন্যই লড়াই করছি। আমরা অস্ত্র হাতে নিয়েছি কারণ আমাদের সামনে আর কোন উপায় ছিল না। হয় আমরা নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতাম অথবা আমরা আমাদের মানুষের মুক্তির জন্য যুদ্ধ করতাম...”

“যতদিন পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলতে থাকবে ততই সিরিয়াকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে। আহরার আশ-শাম চায় আসাদের শাসনের অবসান, আই.এস.আই.এল এর পরাজয় এবং দামেস্কে একটি স্থিতিশীল ও প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার যেটা সিরিয়াকে শান্তি, সমৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নতির পথে নিয়ে যাবে। আমরা এমন একটা রাজনৈতিক ব্যবস্থা দেখতে চাই যা সিরিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠদের পরিচয় ও মতামতকে সম্মান করে এবং একই সাথে সংখ্যালঘুদের রক্ষা করে যাতে তারা দেশের ভবিষ্যতের জন্য একটা ইতিবাচক বাস্তব ভূমিকা পালন করতে পারে। আমরা সিরিয়ার ঐক্য ও সীমানা অখন্ডতাকে রক্ষিত দেখতে চাই ...”

“আমরা বুঝতে পারছি যে আমাদের লক্ষ কেবলমাত্র সামরিকভাবে অর্জিত হবে না। এর একটা রাজনৈতিক সমাধানও দরকার এবং আমরা জানি এর মানে হচ্ছে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া...”

“সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের বিষয়ে সরকারের নীতির পরিবর্তনের ব্যাপারে ইংগিত দিয়েছেন। তিনি বলেন যুক্তরাজ্য অবশ্যই আই.এস.আই.এল এর সাথে লড়াইয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সবই ঠিক আছে। জানুয়ারি ২০১৪ থেকে এখন পর্যন্ত আমরা আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ৭০০ যোদ্ধাকে হারিয়েছি এবং আমরা ও আমাদের মিত্ররা ৪৫ কিলোমিটার ফ্রন্টলাইন ধরে আছি আলেপ্পোতে। আমরা জানি আই.এস.আই.এল এর হুমকির সামনে দাঁড়ানো কতটা কঠিন ... আমরা জানি আই.এস.আই.এল কেবল একটা নিরাপত্তা বা মিলিটারি হুমকিই নয় বরং সামাজিক ও আদর্শগত লড়াই বিভিন্ন স্তরে যার মোকাবেলা করা উচিত আর এ কারণেই জাতীয় সুন্নি বিকল্পগোষ্ঠি গড়ে তুলতে হবে আসাদ ও আই.এস.আই.এল এর বিকল্প হিসেবে”।

আহরার আশ-শাম বিপ্লবের প্রেক্ষাপটের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত মূলধারার মূলধারার একটি সুন্নি ইসলামিক গ্রুপ, এবং তাই হচ্ছে সেই বিকল্প। কিন্তু যারা পশ্চিমের মুক্তধারার আদলে একটি সুন্নি ইসলামিক গ্রুপ দেখতে চান তাদের অবশ্যই নিরাশ হতে হবে। যেহেতু আমরা ইতিমধ্যেই জেনে গেছি রাজনৈতিক ধারণা ও সরকারের রূপরেখা মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি করা যায় না, এবং তা এখানে বিকশিত তাও আশা করা যাবে না, কারণ ঐতিহাসিক ঘটনা, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও সামাজিক কাঠামোতে (পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে) ব্যাপক ভিন্নতা রয়েছে। সেখানে যে কোন রাজনৈতিক গঠনে ধর্ম ও সামাজিক আচরণকে প্রাধান্য দিতে হবে যা এই সংঘাতের ধ্বংসস্তূপ থেকে বের হবে এবং এটা বেশিরভাগ সিরিয়ানের বিশ্বাসের সাথে মিলতে হবে ...”

“যেহেতু আর.এ.এফ (রয়াল এয়ার ফোর্স) আই.এস.এই.এল এর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের জন্য তৈরি, সেহেতু ব্রিটিশ সরকারের উচিত হবে জঙ্গিগোষ্ঠীদের মোকাবেলায় শুধু বোমা ফেলা ছাড়াও অন্য উপায় খুঁজে বের করা”।

আর এর মাধ্যমেই তার কূটবক্তব্য শেষ হয়। এর সারাংশ হচ্ছে এইঃ সে একটি জাতীয়তাবাদী, গণতান্ত্রিক ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে আত্মমর্যাদা, সংখ্যাগরিষ্ঠের হাতে ক্ষমতা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা (যার মধ্যে রাফেদি, নুসাইরী, দ্রুজ ও ইসমাইলিরা রয়েছে) আর জাতীয়তাবাদী সীমানার সুরক্ষার কথা বলেছে।

সে আহরার আশ-শামকে দাওলাতুল ইসলামের একটি মধ্যপন্থী বিকল্প হিসেবে উল্লেখ করেছে, যেই বিকল্প ক্রুসেডে দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে পশ্চিমকে সহযোগিতা করবে। সে দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ ক্রুসেডারের যুদ্ধকে প্রশংসা করেছেন এবং তাদের উপদেশ দিয়েছেন যে বিমান হামলাই যথেষ্ট নয় আরও বেশি কিছু করতে হবে!

এই আর্টিকলের পরে আহরার আশ-শামের রাজনৈতিক অফিস ১১ আগস্ট ২০১৫ তে একটি বিবৃতি দেয়, “উত্তর সিরিয়ায় একটি নিরাপদ অঞ্চল”, এতে তারা বলে-
“সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পর সহযোগিতা করবে এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সহযোগিতা করবে না”(আল মায়দাহঃ ২)

“এটি একটি অকাট্য সত্য বিষয় যে, গত চার বছর যাবত তুরস্কের সরকার এবং তুরস্কের জনগণ যেভাবে সিরিয় জনগণকে এবং সিরিয় বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য সাহায্য করে এসেছে প্রত্যেক ক্ষেত্রে তা ভাবার বিষয়।
তাদের এই সু-বিস্তৃত সাহায্য সত্ত্বেও তুরস্কের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে এবং তুরস্কের সরকারের উপর দেশীয় ও বৈদেশিক বিরাট চাপ চেপে বসেছে। 
অথচ তুরস্ক সমসময়ই আমাদের জনগণকে এবং আমাদের বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য নৈতিক ও মানবিকভাবে সাহায্য করে এসেছে। আর এ ব্যাপারে তারা সবসময় অটল ছিল। তুরস্কের এই সু-বিচারপূর্ণ ও দায়িত্বশীল অবস্থানের কারণে তুরস্ক সিরিয় বিপ্লবের অতীব গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তারা এই দুই দেশের জনগণের মধ্যে সাধারণ স্বার্থের নতুন পথ বের করেছে, হয় দেশীয় স্বার্থ নয়তো আঞ্চলিক স্বার্থ।
সম্প্রতি সাধারণ স্বার্থের একটি হচ্ছে দায়েশের (দাওলাতুল ইসলামের) বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। দায়েশ মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি করবার মাধ্যমে বিপ্লবের অগ্রযাত্রাকে তছনছ করে দিয়েছে এবং সেই সাথে আবার তুরস্কের নিরাপত্তা ও অস্তিত্বের ব্যাপারে হুমকি প্রদান করেছে।
বাশার আল-আসাদের সাম্প্রদায়িক নীতি এবং দায়েশের মূর্খ নীতি সিরিয়াকে আন্তর্জাতিক সংঘর্ষ ও প্রক্সি যুদ্ধের রণক্ষেত্রে পরিণত করেছে। ফলে সিরিয় জনগণের মিত্রদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।
নীতিগত অবস্থান বজায় রাখার জন্য বিদেশী নির্দেশনা ও কর্তৃত্বকে বাদ দেয়ার পর আজ নতুন বাস্তবতা উন্মোচিত হয়েছে, যা এখন থেকে সাধারণ কল্যাণের নীতি অনুযায়ী এবং সামগ্রিকভাবে দেশের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ অনুযায়ী মোকাবেলা করা হবে।
আহরার আশ-শাম দেশীয় ও আঞ্চলিক ঘটনার উপর ব্যাপক দৃষ্টিপাত করার পর, এসবের উপর ভিত্তি করে; রাজনৈতিক কিংবা সামরিক যে কোনো বিষয়ে সিরিয় জনগণ এবং তাদের মিত্রদের স্বার্থ অনুযায়ী কাজ করে এবং ইরানের হুমকির মুখে সুন্নিদের একতার বিষয়টি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, তারা এটাও বিশ্বাস করে যে, উত্তর সিরিয়ায় তুরস্কের একটি নিরাপত্তা বলয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা এমন একটি বিষয়, যা সিরিয় জনগণের স্বার্থের যোগান দেবে।
নিরাপত্তা বলয়টি মানবিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে, যার ফল দুই দেশই ভোগ করবে। এছাড়া তুরস্কের জাতীয় নিরাপত্তাকে শক্তিশালী করতে এবং দায়েশ ও পি.কে.কে -দের সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিনতাবাদী পরিকল্পনা বন্ধ করতে এই নিরাপত্তা বলয়টির ব্যাপক প্রয়োজন রয়েছে... উত্তর সিরিয়ার নিরাপত্তা জোন শরণার্থীদেরকে তাদের বাসস্থানে ফিরে আসতে সহায়তা করবে এবং বিপ্লবের শত্রুদের চক্রান্তকে নস্যাৎ করে দিবে। আহরার আশ- শাম ইসলামিক মুভমেন্ট তুরস্ক ও সশস্ত্র বিপ্লবী গ্রুপগুলোর সহায়তায় এই নিরাপত্তা জোনকে পুরোপুরি সহায়তা করবে। সিরিয়া ও তুরস্কের মানুষের বন্ধন ও সাধারণ লক্ষকে অটুট রাখতে এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ভিত্তিপ্রস্তর সৃষ্টিতে আমরা এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাই।”[8]

এভাবেই আহরার আশ-শাম তুরস্কের কাফির সরকার ও তার সেনাবাহিনীর প্রতি নিজের হাতকে সুপ্রসারিত করেছে এবং সিরিয়ায় তাদের একজন এজেন্ট হিসেবে নিজেদের মনোনীত করেছে। সুতরাং জাওলানি ফ্রন্টের জিহাদি ব্যক্তিত্বরা কি মুরতাদ হওয়া থেকে তাওবাহ করবে এবং তাদের সবচেয়ে কাছের মিত্রের বিরুদ্ধে বারা ঘোষণা করবে যাকে তাদের নেতারাই একসময় বলতো “ভবিষ্যতের সাহাওয়াত”? অথবা হিজবিয়ার জোরে “ওজরের” পিচ্ছিল ঢালে কি তারা পড়তেই থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সর্বোচ্চ ফিতনাহ মসীহ-আদ-দাজ্জালের ব্যানারের পিছনে যুদ্ধ করবে নেতৃত্ব, বিভক্তি ও বিচ্যুতির জন্য?[9]

আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করি সকল ক্রুসেডার ও তাগ্বুতের এজেন্টের বিরুদ্ধে দাওলাতুল ইসলামের মুজাহিদদের সহায়তা করার জন্য যতক্ষণ না খিলাফাহর ব্যানার ইস্তাম্বুল ও ভ্যাটিকান সিটির উপর উড়তে থাকে।


শামে আল-কায়দার মিত্ররা: শেষ পর্ব

জাতীয়তাবাদী “ইসলামীসাহওয়াতদের অ-ইসলামীকরণশুরু হওয়ার পর থেকে, শামে আল-কায়দার মিত্রদের মধ্য থেকে আরব ও তুর্কি তাওয়াগ্বিতদের অনুগত দলগুলো কর্তৃক জাতীয়তাবাদী ও গণতান্ত্রিক ঘোষণাপত্র প্রকাশ ব্যতীত একটি মাসও পার হয় নি। ক্রুসেডারদের দ্বারা আদেশপ্রাপ্ত তাওয়াগ্বিতরা সাহাওয়াতদের চাপ দিতে থাকে অধিক থেকে অধিকতর আপোষ সূচক ঘোষণা প্রকাশের জন্য যাতে সামরিক এবং বেসামরিক সাহায্য তাদের পর্যন্ত পৌঁছতে পারে এবং সেই সাথে তারা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সহায়তা এবং আকাশ পথে ক্রুসেডারদের পক্ষ থেকে সাহায্যপ্রাপ্ত হতে পারে।

এই আপোষ বন্ধ হবে না, এভাবেই তাদের দ্বীন ত্যাগ অধিক থেকে অধিকতর স্পষ্ট শুরু করে, এমনকি সবচেয়ে গোমরাহ মুরজিয়াদের১ কাছেও। তা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে জাওলানি ফ্রন্টের কিছু লোক অনুধাবন করে যে তাদের মিত্ররা এতই নির্লজ্জ যে তাদের আর প্রকাশ্যে সমর্থন করা যাবে না।২ আর তাই পূর্বের জোট পিছু হটল, গুরুত্বহীন বা উপেক্ষিত হল, এবং তা এমন পর্যায়ে পৌঁছালো যে জাওলানি ফ্রন্ট তাদের সীমান্ত-ফাঁড়িগুলো সর্বসমক্ষে শামিয়াহ ফ্রন্টের কাছে হস্তান্তর করে, যারা আমেরিকান ক্রুসেডর ও তুরস্কের তাওাগ্বিতের প্রকাশ্য মিত্র। এটি নিছক কোন অদৃশ্য সামরিক চাপে সৈন্য প্রত্যাহার ছিল না বরং তা ছিল জাওলানি ফ্রন্টের নেতৃত্ব কর্তৃক সমন্বিত হস্তান্তরকরণ যা তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের কর্তৃক প্রকাশিত ছবি দ্বারা প্রমাণিত। এই সৈন্য প্রত্যাহারকরার কারণ ছিল জাওলানি ফ্রন্টের মুহাজিরিনদেরসামনে এমন এক ভাবমূর্তি তৈরি করা য, তাদের নেতৃত্ব আমেরিকার দালালদের সাথে কাজ করে না।

কিন্তু (প্রশ্ন হলো) কোন “জিহাদীগ্রুপ কি মুসলিমদের সাথে যুদ্ধরত ক্রুসেডারদের দালালদের কাছে নিজেদের এলাকা হস্তান্তর করতে পারে?

যাই হোক, গত কয়েক মাসে শামে আল কায়দার জাতীয়তাবাদী মিত্ররা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাপত্র প্রকাশ করে। এই তিনটি ঘোষণাপত্রেই রয়েছে জাতীয়তাবাদ এবং গণতন্ত্রের তীব্র দুর্গন্ধ।

গত “১৫ই সেপ্টেম্বর ২০১৫তারিখে সিরিয়ান রেভ্যুলুশনারী ফ্যাকশনসএকটি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করে, যাতে তারা বলে:

সিরিয়ার বিপ্লবী যুদ্ধরত দল সমূহের মুখপাত্রগণ একটি বৈঠকে সমবেত হন এবং ১৭ই আগস্ট, ২০১৫ তারিখে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রেসিডেন্সিয়াল বিবৃতি এবং সিরিয়ায় নিযুক্ত জাতিসংঘের দূত, স্টাফেন দি মিস্তুরা, কর্তৃক প্রস্তাবিত পরিকল্পনার ব্যাপারে আলাপ আলোচনা করেন। বৈঠকে উপস্থিত দলসমূহ সম্মত হন যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিল কর্তৃক প্রকাশিত বিবৃতি একটি উদ্দেশ্য সম্পন্ন রাজনৈতিক সমঝোতার ও সকল দলসমূহের মধ্যে বিশ্বস্ততা তৈরির পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। উপস্থিত দলসমূহ নিম্ন বর্ণিত বিষয় সমূহের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছান:

১. আমরা রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনামূলক একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করার এই আহবানকে স্বাগত জানাই যা জেনেভা কমিউনিক অনুযায়ী, একটি অন্তর্বর্তীকালীন পরিচালনা কমিটি প্রতিষ্ঠা করার জন্য শর্ত প্রদান করে যা রাজনৈতিক সমাধানের বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছানো মাত্র তার কার্যক্রম শুরু করবে এবং অতঃপর তা প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি সহ সকল নির্বাহী কর্তৃত্ব গ্রহণ করবে।

২. বাশার আল-আসাদ ও তার সরকারের সকল স্তম্ভ সমূহের সরে যাওয়া, এবং নতুন সিরিয়ায় বা অন্তর্বর্তীকালীন পর্যায়ে তাদের কোন স্থান বা ভূমিকা থাকবে না, এই পূর্বশর্তের উপর আমরা জোর প্রদান করছি।

যেকোন রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আমরা একে মৌলিক পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচনা করছি।

৩) ২১৩৯ প্রস্তাব বাস্তবায়নকরণ যা সকল দলকে বেসামরিক লোকেদের উপর আক্রমণ বন্ধ করার আহবান করে; এবং জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বাছবিচারহীন অস্ত্র চালনা থেকে বিরত থাকার আহবান করে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বেসামরিক লোকদের উপর নির্বিচারে বোমাবর্ষণ ও বিস্ফোরক ব্যারেল দ্বারা আক্রমণ, এছাড়াও দমন মূলক বিনাবিচারে গ্রেফতার, অত্যাচার ও অপহরণ করা তাৎক্ষনিকভাবে বন্ধ করতে হবে, সেই সাথে সকল বন্দীদের তৎক্ষণাৎ মুক্তি দিতে হবে।

৪) আমরা ইউএন নিরাপত্তা পরিষদের ২০১৪ সালের ২১৬৫ প্রস্তাবের উপর জোর দিতে চাই যা সিরিয়ান দ্বন্দ্বে জড়িত সকল দলসমূহকে তাৎক্ষনিকভাবে ও কোন বাধা ব্যতিরেকে জনহিতৈষী সাহায্য পৌঁছে দেয়ার জন্য অনুমতি প্রদান করে, যাতে করে মানুষের নিকট এরূপ সাহায্য সরাসরি পৌঁছানো সম্ভব হয়।

৫) আমরা সিরিয়ায় আসাদ সরকারের জড়োকৃত ও গ্রহণকৃত সন্ত্রাসী বাহিনীসমূহকে উপেক্ষা করব না বা তাদের প্রতি নীরব থাকব না, কারণ তারা প্রকৃতপক্ষে গণহত্যা ও জনগণকে জোরপূর্বক স্থানচ্যুতির সাথে সাথে জনসংখ্যাতাত্ত্বিক পরিবর্তনের উদ্ভব ঘটাচ্ছে; তন্মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সাম্প্রদায়িক রক্ষীবাহিনী, ইরানি রিপাবলিকান গার্ডস এবং লেবানিজ হিযবুল্লাহ। আমরা এই দলগুলোকে সন্ত্রাসবাদী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আহবান করছি।” 

৬) সিরিয়ান জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান প্রদর্শন; যেহেতু ভবিষ্যৎ সিরিয়ার সংবিধান প্রতিষ্ঠার শক্তির উৎস এবং এর অনুচ্ছেদসমূহ অনুমোদন করার ক্ষমতা সিরিয়ার জনগণের কাছে নিহিত। এর অর্থ এমন কোন মূলনীতি তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া যাবেনা যা তাদের স্বাধীন ইচ্ছা বাজেয়াপ্তকরণ স্বরূপ।
৭) আমরা সিরিয়ান আন্দোলনের সাথে জড়িত যেকোন বিষয়ে ইরানের সাথে পরামর্শ প্রত্যাহার করার আহবান জানাচ্ছি, যেহেতু ইরান বস্তুত সন্ত্রাসবাদী রক্ষীবাহিনীর সমর্থন করে ও সিরিয়ার জনগণের মধ্যকার সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বকে উস্কে দিয়ে সিরিয়ার জনগণকে রক্তাক্ত করার দায়ে অভিযুক্ত, এছাড়াও ইরান জেনেভা কমিউনিক কে স্বীকৃতি প্রদান করেনা (যদিও এই কমিউনিক কে ইউএন নিরাপত্তা পরিষদ অনুবন্ধ ২১১৮ পূর্ণ সমর্থন করে) ।”

৮) রাষ্ট্রীয় পরিষেবামূলক প্রতিষ্ঠানসমূহের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রতি আমরা জোর দিচ্ছি কারণ তা একটি জরুরী ও অপরিহার্য বিষয়। এখন পর্যন্ত, আমরা সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর কাজ বজায় রাখা বাতিল করছি। আমরা নিরাপত্তামূলক যন্ত্রপাতি বিলীন করা এবং সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগের কাঠামোকে পুনর্বিন্যাস করার জন্য আহবান করছি।

৯) জেনেভা কমিউনিকের উপর ভিত্তি করে ইউএন নিরাপত্তা পরিষদ রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা ও রাজনৈতিক পরিবর্তন আনয়নের জন্য আহবান জানিয়েছে। পরিবর্তন পরিচালনামূলক বিভাগের প্রতিষ্ঠাকরণ সম্পর্কে কমিউনিকে অতি স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখিত আছে। অতঃপর, আমরা জাতিসংঘের দূতের প্রতি আহবান জানাচ্ছি জেনেভা কমিউনিক বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরাসরি অংশগ্রহণের জন্য; এমন পন্থায় যা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারসমূহ দ্বারা পরিবৃত, সময়সাপেক্ষ এবং জেনেভা কমিউনিক অকার্যকারী যেকোন প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ বা কমিটি ফিরিয়ে আনা ব্যতীত।

১০) আমরা বাস্তবিক অঙ্গীকার প্রদানের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করছি যা সকল দলকে বাধ্য করবে তা বাস্তবায়ন করতে যার প্রতি সবাই একমত; যেহেতু বিগত পাঁচ বছরে সিরিয়ার সরকার সকল অনুবন্ধের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না থাকার প্রতি অভ্যস্ত ছিল।
১১) সিরিয়ার সীমানার মধ্যে রাশিয়ার গুরুতর স্পষ্ট হস্তক্ষেপ রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছানোর প্রচেষ্টাকে দুর্বল করছে।

১২) জাতিসংঘ এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কে সিরিয়ার বিপর্যয়ের সকল দায়দায়িত্ব নেয়ার জন্য এবং সিরিয়ার জনগণের স্বার্থের সাথে আনুষঙ্গিক অনুবন্ধগুলো বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে আন্তরিকভাবে কাজ করার জন্য আমরা আহবান করছি।

শামে আল-কায়েদার প্রধান মিত্র দলসমূহ এই প্রজ্ঞাপনটি স্বাক্ষর করেছে, যার মধ্যে মিথ্যাবাদী আবু আব্দুল্লাহ আশ-শামী (জাওলানি ফ্রন্টের নেতা যার মিথ্যাচার সর্ববিদিত মুবাহালাহ কে প্ররোচিত করেছে) এর দ্বারা প্রশংসিত কিছু দল রয়েছে। তাছাড়া সেসব দল যারা জায়শ আল-ফাতহজুন্দ আল-মালহিমএর সদস্য, জাওলানি ফ্রন্ট এই উভয় জোটেরই সদস্য। যে দলগুলো এই প্রজ্ঞাপন স্বাক্ষর করেছে তাদের মধ্যে রয়েছে ফ্রি সিরিয়ান আর্মি”, “হারাকাত নূর আদ-দীন যিনকি”, “শামিয়াহ ফ্রন্ট”, “ফায়লাক আশ-শাম, “জায়শ আল-মুজাহিদিন”, “আল-ইত্তিহাদ আল-ইসলামী লি আজনাদ আশ-শামএবং আহরার আশ-শাম৪।
এই প্রজ্ঞাপনটিই এই সকল ফিরকাগুলোর জাতীয়তাবাদী ও তাগ্বুতি পরিচয় বহন করে যার জন্য আর কোন মন্তব্যের প্রয়োজন নেই। ষষ্ঠ অনুচ্ছেদটি পৌত্তলিক ধর্ম গণতন্ত্রের বাস্তবায়ন করার জন্য প্রকাশ্য আহবান করেছে, শারী'আহ'র জন্য নয়।

এরপর “১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫তারিখে, একটি নথি প্রকাশিত হয় যার শিরোনাম সিরিয়ান বিপ্লবের পাঁচ মূলনীতিএবং যা সাইক্স পিকো এর জাহিলি পতাকা দ্বারা সুসজ্জিত। নথিটিতে তারা বলেঃ
বৃহত্তর সিরিয়ার জনগণ ও সমগ্র পৃথিবীর স্বাধীন মানুষের প্রতি একটি ঘোষণা। আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু। স্বৈরশাসন, দুর্নীতি, ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে, এবং ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা, ও ছিনিয়ে নেয়া সম্মান ও স্বাধীনতার পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে সিরিয়ার বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল। এই বিপ্লব সিরিয়ান সরকারের বিভিন্ন প্রকার দমননীতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিরোধ করেছে। এই বিপ্লবের সূচনাকারী সিরিয়ার জনগণ, ইসলাম ও সকল স্বর্গীয় ধর্ম এবং আন্তর্জাতিক আইন ও কাঠামো দ্বারা প্রদত্ত তাদের মানবাধিকার ও জাতীয় অধিকারসমূহ ছাড় দিতে সক্ষম নয়। তারা এই পথে বহাল থাকবে, সকল স্থিরকৃত লক্ষ্যে অটল থাকবে, সকল নীতিসঙ্গত পন্থার মাধ্যমে। এই পন্থাগুলোর মধ্যে একটি রাজনৈতিক সমাধান অন্তর্ভুক্ত যা নিম্নোক্ত নির্ধারিত মূলনীতিসমূহ অনুসারে হবেঃ ১) বাশার আল-আসাদ ও তার সরকারের সকল স্তম্ভকে নির্মূল করা এবং তাদের যথাযথ বিচারব্যবস্থার আওতায় আনা। ২) স্বৈরশাসক সুলভ গোয়েন্দা বিভাগ ও সামরিক যন্ত্রপাতি বিচ্ছিন্নকরণ এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অক্ষুণ্ণ রেখে সৎ জাতীয় আদর্শের ওপর ভিত্তি করে নিরাপত্তা ও সামরিক বিভাগ গঠন। ৩) সিরিয়া হতে সকল বিদেশী ও গোত্রীয় সন্ত্রাসী আগ্রাসনকে বিতাড়ন, যার মধ্যে রয়েছে ইরানি রেভ্যুলুশনারী গার্ড, হিযবুল্লাহ, আবুল-ফাদল আল-আব্বাস রক্ষীবাহিনী এবং দাওলাতুল ইসলাম।৫ ৪) সিরিয়াকে এক দেশরূপে ও এর জনগণের একতার সংরক্ষণ ও এর স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও এর জনগণের পরিচয় সংরক্ষণকরণ। ৫) রাজনৈতিক এজেন্ডা ও গোষ্ঠীতন্ত্রের উপর ভিত্তি করে ক্ষমতার কোন ভাগ করা হবে না।
রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে কৃত আলাপ-আলোচনা যে মাধ্যমেই হোক না কেন তাতে যদি সিরিয়ার জনগণের স্বপ্নের প্রতিফলন না থাকে তাহলে তা হবে তাদের উদ্দেশ্যকে উপেক্ষা করার প্রয়াস। উপরন্তু, তা সময়ের অপচয় বলে গণ্য হবে। তাছাড়াও, পুনর্নির্মাণ কাজ, সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধ, জাতীয় নিরাপত্তা ও শান্তি অর্জন এবং সাংবিধানিক কাঠামো প্রতিষ্ঠাকরণ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সমাধান কল্পে গৃহীত প্রচেষ্টা যদি আমাদের সিরিয়ার মহৎ জনগণের নির্দিষ্ট মূলনীতি অনুযায়ী না হয় তাহলে তা সিরিয়ানদের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না, কারণ এর মাধ্যমে সমস্যার গোঁড়াকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র তাদের বিপ্লবকে খর্ব ও উপসর্গের নিরীক্ষণ করা হবে। যদিও আমরা সিরিয়াকে রক্ষা করার যেকোন প্রয়াসকে মূল্যায়ন করি, তবে আমরা বিশ্বাস করি যে প্রধান ইস্যুকে বিলম্ব করানো যা হল আসাদ ও তার রক্ষীবাহিনীর প্রস্থান, ঐক্যবদ্ধ, স্বাধীন, জাতীয় সিরিয়ান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকরণ এই ইস্যুতে যেকোন বিশ্বাসযোগ্য প্রতিশ্রুতির অঙ্গীকার না করা হলে তা শুধুই এই সমস্যার জটিলতা বৃদ্ধি করবে ও ক্ষতগুলোকে গভীরতর করবে। নিরাপত্তা পরিষদ যা আইনত, রাজনৈতিক ও নীতিগত ভাবে বিশ্ব শান্তি সংরক্ষণের জন্য দায়ী তা সিরিয়ার জনগণকে রক্ষা করতে, তাদের মহৎ লক্ষ্য অর্জন করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে এবং তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নির্বিচারে, নৃশংস হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ আমরা দেখছি যে সিরিয়ান সরকারকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা চলছে, এমনকি একে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সিরিয়ার অংশ বানানোর জন্য গুরুতর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। আমরা এও লক্ষ্য করছি যে প্রেসিডেন্সিয়াল বিবৃতির পূর্বে ও পরে সংঘটিত এবং ক্রমাগতভাবে ঘটে যাওয়া ভয়ংকর হত্যাযজ্ঞকে নিরাপত্তা পরিষদ উপেক্ষা করছে। যে জাতীয় বাহিনীগুলো এই নথিতে স্বাক্ষর করেছে তারা সিরিয়ান জনগণের এই গৌরবান্বিত বিপ্লবের নির্দিষ্ট মূলনীতির উপর অটল থাকার প্রতি তাদের দৃঢ়তা পুন:ব্যক্ত করেছে এবং এই মূলনীতির যেকোনো প্রকার সীমালঙ্ঘনকে তারা সিরিয়ানদের অধিকার, তাদের রক্ত ও ত্যাগের প্রতি অবজ্ঞা হিসেবে গণ্য করবে, এবং সেই প্রয়াস কখনও সফল হবে না, কারণ তা এমন এক বুনিয়াদ গ্রহণ ও আরোপ করে যা আইনত, রাজনৈতিক ও নীতিগতভাবে বর্জিত।

এই নথিটি জাওলানি ফ্রন্টের প্রধান মিত্র দলসমূহ স্বাক্ষর করেছে। তন্মধ্যে অন্তর্ভুক্ত “ফ্রি সিরিয়ান আর্মিএর দলসমূহ, “হারাকাত নূর আদ-দীন যিনকি”, “শামিয়াহ ফ্রন্ট”, “ফায়লাক আশ-শাম”, “জায়শ আল-মুজাহিদিনআল-ইত্তিহাদ আল-ইসলামী লি আজনাদ আশ-শাম। ধর্মনিরপেক্ষ সিরিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিল, ধর্মনিরপেক্ষ সিরিয়ান ন্যাশনাল কোয়ালিশনের অন্তর্ভুক্ত আঞ্চলিক প্রাদেশিক কাউন্সিলসমূহ, খালিদ খাওজাহ (সিরিয়ান ন্যাশনাল কোয়ালিশন প্রধান), ‘আব্দুল-জাব্বার আল-আকিদি (প্রাক্তন সরকারী কর্নেল, বর্তমানে নাস্তিক পি.কে.কে এর মিত্র), এবং এমনকি জর্জ সাবরা ও মাইকেল কাইলো (খৃস্টান বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদ)।
 
খুব সম্ভবত এই ঘোষণাটির সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয়টি হল প্রথম মূলনীতিটি, যেহেতু বাশার আল-আসাদ ধর্মত্যাগী নুসাইরী দল ও ধর্মত্যাগী বাথ পার্টির একজন মুরতাদ তাগ্বুত; তাই তাকে হত্যা করা বাধ্যতামূলক যদিও সে কখনও কোন মুসলিমকে হত্যা না করে থাকত। তাহলে সে যত নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তার পর তা আরও কতটা বেশি বাধ্যতামূলক! তার অপরাধ এতটাই সুস্পষ্ট যে তার ধর্মত্যাগ ও অপরাধ প্রমাণের জন্য কোন বিচারকার্যেরও প্রয়োজন নেই শুধুমাত্র ক্রুসেডারদের ধর্মে ব্যতীত, যাদেরকে এই জাতীয়তাবাদী দলসমূহ সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করে।

এরপরে “৩ অক্টোবর ২০১৫তারিখে আরেকটি তৃতীয় নথি প্রকাশিত হয়। সেখানে তারা বলেঃ

নিম্ন স্বাক্ষরিত বিদ্রোহী দলগুলোর রাজনৈতিক দপ্তরসমূহ ও সিরিয়ান কোয়ালিশনের রাজনৈতিক কমিটি এক আলোচনা সভায় বসে এবং জাতিসংঘের দূত স্টাফান দি মিস্টুরা কর্তৃক প্রদত্ত ওয়ার্কিং গ্রুপসপদক্ষেপ নামক প্রস্তাবসমূহকে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পর্যবেক্ষণ করে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতা যা সিরিয়ার রণক্ষেত্রকে গ্রাস করছে তা এবং সুগভীর ক্ষেত্র ও রাজনৈতিক প্রভাবজনিত সাম্প্রতিক সংবেদনশীল উন্নয়ন গভীরভাবে পর্যালোচনা করার পর, এবং আরও কয়েক হাজার সিরিয়ানদের জীবন নাশকারী একটি নতুন ব্যর্থ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সূচনার সম্ভাবনার দরুন আমাদের উদ্বেগ হতে, এবং দেশের অবকাঠামোর অবশিষ্টাংশের অধিক ধ্বংস হওয়ার কারণে, আমরা নিম্নোক্ত বিষয়গুলো দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করছিঃ

প্রথমঃ আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা, বিপ্লবের লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্য একটি রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছানো, সিরিয়ান জনগণের পরিচয় সংরক্ষণ ও তাদের দুর্দশা সমাপ্তির জন্য তাদের কৃত প্রতিশ্রুতির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তবে এই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অবশ্যই এটা নিশ্চিত করতে হবে যে বর্তমান সরকারের অথবা এর মাথা ও স্তম্ভগুলোর পুনর্জন্ম যাতে না হয়, যাদের হাত সিরিয়ানরা রক্তে রক্তাক্ত, তাদেরকে এই ক্রান্তিকালীন বা ভবিষ্যৎ সিরিয়ার রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যাতে কোন পদ না দেয়া হয়।

দ্বিতীয়ঃ প্রকৃতপক্ষে কোন বাস্তব ফলাফল না পাওয়া সত্ত্বেও বিপ্লবী বাহিনীগুলো ও বিরোধী দল সর্বদা জাতিসংঘের দূতের সাথে ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রেখেছে, তারা জোর দিয়ে ঘোষণা করছে যে সিরিয়ার জনগণের স্বার্থে তারা জাতিসংঘের সাথে এই ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখবে।
তৃতীয়ঃ ইরানের সামরিক সাহায্য, রাশিয়ার রাজনৈতিক প্রচারণা এবং আন্তর্জাতিক কমিউনিটি কর্তৃক ঘাতক সরকারকে এখনও পর্যন্ত জোরপূর্বক প্রদত্ত এক বৈধতার সাহায্যে সিরিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে সরকারের অপরাধ যজ্ঞের পাঁচ বছর পর তাদের আন্দোলনকে সমর্থন করার জন্য সিরিয়ার জনগণ আন্তর্জাতিক কমিউনিটির সক্ষমতার উপর সম্পূর্ণরূপে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। বর্তমানে বহু বিস্তৃতরুপে যে চরম সন্ত্রাস চলছে তা যেকোন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বিবেচনাধীন করতে হবে যার মাধ্যমে সিরিয়ার জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তন্মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে, সিরিয়ার বর্তমান সরকারের প্রধান ও এর স্তম্ভগুলোকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় কোন ভূমিকা দেয়া যাবে না এই ঘোষণা দেয়া।”   

চতুর্থঃ কোন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বাশার আল-আসাদ এর কোন স্থান নেই যা নিম্নোক্ত আইনসিদ্ধ ও বাস্তবিক কারণেঃ বাশার আল-আসাদ সম্পূর্ণ অবৈধ উপায়ে ক্ষমতা দখল করেছে। বাশার আল-আসাদ সেই মুহূর্তে একজন যুদ্ধাপরাধীতে পরিণত হয়েছে যখন সে শান্তিপূর্ণভাবে অধিকার দাবিকারী সিরিয়ানদের হত্যা করা শুরু করেছে। সে নিরপরাধ বেসমারিক লোকদের ওপর অবৈধ রাসায়নিক অস্ত্র চালিয়েছে। এই সব অপরাধ যজ্ঞ নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো দ্বারা লিপিবদ্ধ হয়েছে যাতে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ না থাকে। বাশার আল-আসাদ ও তার সরকার কোন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় জড়াতে চরম অনাগ্রহ দেখিয়েছে, কোন পূর্বঘোষিত যুদ্ধবিরতি মান্য করেনি এবং মানবাধিকার ইস্যুগুলোতে আন্তর্জাতিক কমিউনিটির সাথে কোন রকম সহযোগিতা করেনি। এই সবকিছু তাকে অবিশ্বাসযোগ্য ও অনাস্থাভাজন পাত্রে পরিণত করেছে। যেখানে বাশার আল-আসাদ ও তার সরকার আইএসআইএস এর বিরুদ্ধে তাদের কথিত যুদ্ধে ব্যর্থ হয়েছে বা এই চরমপন্থি সংগঠনের বিরুদ্ধে কোন বুদ্ধিবৃত্তিক বা ভূখণ্ডে জয় লাভ করতে অক্ষম হয়েছে, সেখানে তাদের দুই পক্ষের মধ্যে পূর্ণ সহযোগিতা এবং আইএসআইএস এর আবির্ভাবে আসাদ সরকারের ভূমিকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে।৬ বাশার আল-আসাদ বিদেশী রক্ষীবাহিনীদের জন্য সিরিয়ার দরজা খুলে দিয়েছে যারা নিকৃষ্টতম সাম্প্রদায়িক গণহত্যা চালাচ্ছে এবং বাগাড়ম্বরপূর্ণ সাম্প্রদায়িকতার ইন্ধন দিচ্ছে, এর মাধ্যমে সে নিজেকে দেশকে একত্রিত করার যেকোন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়ার যোগ্যতা হতে বঞ্চিত করেছে। সর্বশেষে, বাশার আল-আসাদ সিরিয়াকে রাশিয়া ও ইরানের হানাদারদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে, যার ফলে সে দেশের ইতিহাস, এর ভবিষ্যৎ ও এর সম্মানের প্রতি ক্ষমার অযোগ্য এক প্রতারণার অবতারণা করেছে।

পঞ্চমঃ সিরিয়ানদের হত্যার জন্য দায়ী নিরাপত্তা সংস্থার বিলুপ্তি করণ ও সামরিক প্রতিষ্ঠানের পুনর্বিন্যাসকরণ যেকোন রাজনৈতিক সমাধানের একটি অপরিহার্য অংশ বলে আমরা মনে করি। এই অবরুদ্ধ ও ক্ষয়প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানটি ইরানের নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক রক্ষীবাহিনীতে পরিণত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে, এটি জাতীয় সেনাবাহিনীর কেন্দ্র গঠন করতে পারে না, না এটি দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সিরিয়ার জনগণের বিশ্বাস অর্জন করতে পারে।
ষষ্ঠঃ একটি অন্তর্বর্তীকালীন পরিচালক কমিটি গঠন বস্তুত ক্ষমতার পূর্ণ হস্তান্তরকরণের একটি প্রক্রিয়া যেখানে বাশার আল-আসাদ ও তার সরকারের স্তম্ভগুলোর কোন স্থান নেই। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সংরক্ষণ ও তাদের বিভক্তিকরণ প্রতিহত করার বিষয়ে আমরা জোর দিচ্ছি যেহেতু এগুলো সিরিয়ার জনগণের অধিকারভুক্ত, এবং দেশকে অধিকতর বিশৃঙ্খলায় পতিত হওয়া থেকে রোধ করার জন্য আমরা গুরুত্ব প্রদান করছি।
সপ্তমঃ আমরা মনে করি প্রস্তাবিত ওয়ার্কিং গ্রুপসনামক উদ্যোগে সিরিয়ার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক জাতিসংঘের অনুচ্ছেদগুলোর অধিকাংশই বিশেষত ২১১৮, ২১৬৫ ও ২১৩৯ অনুচ্ছেদগুলোকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এই উদ্যোগ বস্তুত একটি জটিল রাজনৈতিক প্রক্রিয়া যার জন্য একদিকে সিরিয়ার জনগণ ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অর্থায়নকারী পক্ষ, তথা জাতিসংঘ এর মধ্যে আস্থা তৈরি করা প্রয়োজন। আস্থা তৈরি শুধুমাত্র উপরে উল্লেখিত জাতিসংঘের অনুচ্ছেদগুলোর বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সম্ভব যা সিরিয়ার সরকার এপর্যন্ত বর্জন করেছে।
অষ্টমঃ আমরা মনে করি ওয়ার্কিং গ্রুপসনামক উদ্যোগটির বর্তমানে যে রূপে আছে এবং এর অস্পষ্ট গঠন প্রক্রিয়া, বর্তমান সরকারকে পুনর্গঠন করার জন্য যথার্থ পরিবেশ সৃষ্টি করছে। এর পরিবর্তে, গ্রুপগুলোতে অংশগ্রহণকারীদের নির্বাচন করার যোগ্যতা ও সমাধানের নিমিত্তে চূড়ান্ত দূরদৃষ্টি সম্বন্ধীয় স্পষ্ট মূলনীতিসমূহের উপর ভিত্তি করে এই ওয়ার্কিং গ্রুপসগঠন করা উচিত।
 
নবমঃ আমরা সিরিয়াতে রাশিয়ার সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির নিন্দা করি এবং বিদেশী হস্তক্ষেপের জন্য সিরিয়াকে জ্বলন্ত উনুনে পরিণত করার জন্য সিরিয়ান সরকারকে সম্পূর্ণরূপে দায়ী বলে গণ্য করি। এই সামরিক হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক কমিউনিটির নীরবতাও দায়ী এবং তা দ্বারা এও রূপায়িত হয় যে সিরিয়ার জনগণ ও রাশিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের কোন সম্ভাবনা নেই। এই হস্তক্ষেপ বৃদ্ধি স্পষ্টত প্রমাণ করে যে রাশিয়া রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তার কৃত প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে একেবারেই গুরুত্বহীন বা আন্তরিকতাবিহীন, সে কখনই সৎ মধ্যস্থতাকারী ছিল না বরং সে ছিল দ্বন্দ্ব সৃষ্টিকারী পক্ষ ও অপরাধী সরকারের প্রধান মিত্র।
 
দশমঃ বিপ্লবী বাহিনীগুলো ও এর প্রতিষ্ঠানসমূহ যেখানে আমাদের জনগণের প্রতি তাদের অঙ্গীকার দৃঢ়তার সাথে পুন:ব্যক্ত করে, সেখানে আমরা প্রতিজ্ঞা করছি যে আমাদের সারিসমূহ নিকটবর্তী করার ও পূর্বের ভুলগুলো সংশোধন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আমরা আরও শপথ করছি যে এই বিপ্লব এর মূলনীতিসমূহ ও এর হারানো বীরদের প্রতি সৎ থাকবে, এবং আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন ও মৌলিক মূলনীতিগুলোর সংরক্ষণ করার মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি করব। আমরা আরও প্রতিজ্ঞা করছি যে আমাদের জনগণের দুর্দশা দূর করব, বিজয় ত্বরান্বিত করব এবং আমাদের রাজনৈতিক ও সামরিক সামর্থ্যকে এর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করব।
অতঃপর, “ওয়ার্কিং গ্রুপসউদ্যোগের বর্তমান স্বরূপ প্রয়োগসিদ্ধভাবে ও আইনত অগ্রহণযোগ্য যে অব্ধি না উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোকে বিবেচনা করা হয় এবং এই উদ্যোগের গঠননীতিকে আকার দেয়ার অনিশ্চয়তাসমূহ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

এই পথভ্রষ্ট ঘোষণা যা থেকে জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্রের দুর্গন্ধ আসে আবারো শামে জাওলানি ফ্রন্টের প্রধান মিত্রদলগুলো দ্বারা স্বাক্ষরিত হয়েছে যার মধ্যে “আহরার আশ-শামও আছে। সেই সাথে তাতে সিরিয়ান ন্যাশনাল কোয়ালিশন (তাগ্বুত সিরিয়ান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার”) এবং নাস্তিক পি.কে.কে এর কিছু মিত্র দলগুলোরও স্বাক্ষর আছে। এবং এই ফিরকাগুলোর ধর্মীয় মতবাদে ওয়ালা ও বারার অস্তিত্ব নেই, যা জাওলানি ফ্রন্টের মিত্র এই সকল জাতীয়তাবাদী ইসলামিকফিরকাগুলোর প্রকৃত স্বরূপ। এরা সব মুরতাদ পার্টি যাদের দলীয় স্বার্থ ব্যতীত কোন ধর্ম নেই। যদি তাদের দলের সাফল্য অথবা তাদের নেতৃত্ব সংরক্ষণের জন্য তাদেরকে জাতিসংঘ, গণতন্ত্র বা জাতীয়তাবাদের পূজা করতে হয়, তাহলে তারা তাও করে। কারণ সহজ সরল যোদ্ধাদের আকৃষ্ট করা তাদের প্রয়োজন, স্থানীয় পর্যায়ে তারা কদাচিৎ ইসলামিকবার্তা নিবেদন করে বা কুরআনের কিছু বাণী এখানে সেখানে ব্যবহার করে। কিন্তু, তাদের চূড়ান্ত ব্রত হল একটি জাতীয়তাবাদী, গণতান্ত্রিক তাগ্বুতের প্রতিষ্ঠাকরণ। এই কারণে, জাওলানি ফ্রন্টের একটি জিহাদিমিত্রদল – “জুন্দ আল-আকসা” – ফিরকাগুলোর এই অবস্থা আর সহ্য করতে পারে নি এবং জায়শ আল-ফাতহহতে নিজেদের অপসারণের ঘোষণা দিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। তারা সরে যাওয়ার তাদের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদান করে যা নিম্নরূপঃ

জায়শ আল-ফাতহ হতে আমাদের সাম্প্রতিক অপসারণের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। ক) জায়শ আল-ফাতহ এর কয়েকটি দল কিছু উদ্দেশ্য সমর্থন করে যা ইসলামী শারী'আহ'র সাথে সাংঘর্ষিক। সর্বশেষ প্রকাশিত ডি মিস্তুরা বিবৃতিতে এই বিষয়টি পরিষ্কার হয় যেখানে ষষ্ঠ শর্ত অনুযায়ীঃ সিরিয়ার জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান প্রদর্শন; যেহেতু ভবিষ্যৎ সিরিয়ার সংবিধান প্রতিষ্ঠার শক্তির উৎস এবং এর ধারাসমূহ অনুমোদন করার ক্ষমতা সিরিয়ার জনগণের হাতে নিহিত। যার অর্থ এমন কোন মূলনীতি তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া যাবেনা যা তাদের স্বাধীন ইচ্ছা বাজেয়াপ্তকরণ স্বরূপ!এই বিবৃতিতে অন্যান্য কিছু শর্ত রয়েছে যেগুলোকে আমরা শারী'আহ বিরোধী বলে গণ্য করি যার মধ্যে রয়েছে তুরস্কের হস্তক্ষেপ এবং অন্যান্য কিছু পরাজিতন্মন্য বিবৃতি।এরপর তারা জায়শ আল-ফাতহতে কিছু শর্তের বিনিময়ে পুনরায় যোগ দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করে, তন্মধ্যে রয়েছে, “জায়শ আল-ফাতহ এর অন্তর্ভুক্ত সকল দলগুলোকে শারী'আহ বাস্তবায়নের সাথে সাংঘর্ষিক সকল উদ্দেশ্যের প্রতি তাদের অবস্থান খোলাখুলি ভাবে ও স্পষ্টরূপে ব্যাখ্যা করতে হবে।যদিও তাদের এই বিবৃতিতে এই জাহিলি ফিরকাগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা দেয়ার বিষয়টি ছিল না, তবুও এতে প্রমাণিত হয় যে অবস্থা এখন এতটাই পরিষ্কার যে দাবিকের তরফ হতে কোন ব্যাখ্যা দেয়ারও প্রয়োজন নেই।
জাওলানি ফ্রন্ট কি এখন তাদের প্রতারণা ও স্বধর্মত্যাগের জন্য তওবা করবে এবং তাদের এই জাতীয়তাবাদী “ইসলামীমিত্রদের কাছ থেকে নিজেদের দূরে রাখবে যাদের জাতীয়তাবাদী ধর্মত্যাগের বিষয়ে খুব ভালভাবে জানা থাকা সত্ত্বেও তাদের সাথে দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে গিয়ে বন্ধুত্ব করেছে? তারা কি এখন ঐ ফিরকাগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে এবং দাওলাতুল ইসলামের সারিতে ফিরে আসবে? মনে হচ্ছে, তাদের পক্ষালম্বনতা ও নেতৃত্বের প্রতি ভালবাসা তাদেরকে ছাড়িয়ে গিয়েছে, এবং তারা সাহওয়াতের সারিতে বহাল থাকবে যে অব্ধি না তাদের মিত্ররাই তাদের বিপক্ষে চলে যায়। এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞানী।
পরিশেষে, এটা হল মুরতাদ সাহওয়াহ জোট জাতীয়তাবাদী ফিরকাসমূহ ও তাদের জিহাদি দাবীদার মিত্রদলসমূহ এবং শামের ভেতরে ও বাইরে তাদের ন্যায় অন্যরা, যারা দাওলাতুল ইসলামের বিপক্ষে একত্রিত হয়েছে, যাদের উপর শায়খ আবু মোহাম্মাদ আল-আদনানী (হাফিযাহুল্লাহ) তাকফির করেছেন যখন তিনি বলেন, “আমরা অনুরূপভাবে শাম ও লিবিয়ার বিরোধী দলগুলোর প্রতি পুনরায় আহ্বান জানাচ্ছি। দাওলাতুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার পূর্বে গভীর ভাবে চিন্তা করার জন্য আমরা তাদের আহবান জানাচ্ছি, সেই দাওলাতুল ইসলাম যা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দ্বারা পরিচালিত। যারা ফিতনায় পতিত তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নেয়ার পূর্বে মনে রাখবেন, দাওলাতুল ইসলামের ভূখণ্ড ব্যতীত পৃথিবীর বুকে অন্য কোথাও পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর রাহে শারী'আহ'র বাস্তবায়ন হয়নি। মনে রাখবেন, যদি আপনারা এই ভূখণ্ডের এক হাত, একটি গ্রাম অথবা একটি শহরও দখল করতে পারেন, তাহলে সেখানে আল্লাহ্‌র আইনের পরিবর্তে মানবরচিত আইন বাস্তবায়িত হবে। অতএব নিজেকে প্রশ্ন করুন, ‘যে ব্যাপ্তি আল্লাহর আইনকে মানবরচিত আইন দ্বারা প্রতিস্থাপন করে অথবা এর পেছনে ভূমিকা রাখে, তাহলে সেই ব্যক্তির প্রতি রায় কি হবে?’ হ্যাঁ, এর মাধ্যমে আপনি একজন কাফির হয়ে যাবেন। সুতরাং সতর্ক হন, দাওলাতুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামলে আপনি কুফরিতে পতিত হবেন, যদিও তা আপনি উপলব্ধি করতে পারেন অথবা না পারেন” (হে আমাদের সম্প্রদায়, আল্লাহর পথে আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দিন)।

এর পরবর্তী এক বিবৃতিতে, তিনি পুনরাবৃত্তি করেন যে দাওলাতুল ইসলাম তাদের বিবিধ স্বতন্ত্র উদ্দেশ্য সমূহের কারণে কোন পার্থক্য করে না। এর কারণ হল এই ফিরকাগুলো শুধুমাত্র এক জোটে আবদ্ধ আর তন্মধ্যে প্রাধান্যতা হল জাতীয়তাবাদী ধর্মত্যাগের জন্য, এক বাস্তবতা যা তাদের সর্বনিম্ন সারিভুক্ত সৈনিকদের কাছে আর গোপনীয় নয়। সেই অনুপাতে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ যতই শারী'আহবাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যএর উপর জোর দিক না কেন, দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের জোটের মধ্যকার আধিপত্য অবশ্যই শারী'আহ'র জন্য নয়, বরং এটা তাদের জন্য যারা শারী'আহকে জোরপূর্বক বাধা প্রদান করে এবং শারী'আহ'র অধিকাংশ সুনির্দিষ্ট বিধানগুলো যেমন ওয়ালাও বারাএর প্রকাশ, হুদুদের বাস্তবায়ন এবং হিসবাহ এর কাজ (সৎ কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ করা) এর ঘোর বিরোধী। সুতরাং, তাদের জোট হল এক মুরতাদের জোট , এবং এর অন্তর্ভুক্ত কোন স্বতন্ত্র ব্যক্তি এই ভেবে অব্যাহতি পাবে না যে তার উদ্দেশ্য ভাল ছিল।
 
অতঃপর, শায়খ আবু মোহাম্মাদ আল-আদনানী বলেন, “হে মুরতাদ বিশ্বাসঘাতক আর লাঞ্ছনার দল সমূহ, হে আবর্জনা, তোমাদের উদ্দেশ্যে বলছি। এখনও কি তোমাদের সময় হয়নি বছরের পর বছর ইরাকে তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণের? শামে প্রাপ্ত শিক্ষা থেকে কি তোমরা লাভবান হও নি? ... আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা তোমাদের (ফিরকাসমূহের সৈনিকদের) দিকে অগ্রসর হচ্ছি। আল্লাহর কসম আমরা তোমাদের জন্য পরিতাপ অনুভব করি। অতঃপর আমাদের এই কথাগুলোকে গুরুত্বের সাথে নাও এবং বুঝো ... আমরা জানি যে তোমাদের নিয়্যাত, লক্ষ্য এবং পরিস্থিতি ভিন্ন-ভিন্ন। তোমাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক আমাদের দ্বীনের কারণে আমাদের সাথে যুদ্ধ করে, কারণ আল্লাহর বিধানের প্রতি তাদের বিদ্বেষ, তাগ্বুতদের প্রতি তাদের সমর্থন আর মানব রচিত বিধানের প্রতি ভালোবাসার দরুন তারা দাওলাতুল ইসলাম চায় না। তোমাদের মধ্যে এরা সংখ্যায় নগণ্য, ওয়া লিল্লাহিল হামদ। তোমাদের মধ্যে অনেকেই আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার দাবি করা সত্ত্বেও আমাদের সাথে যুদ্ধ করছো। আসলে তোমরা গোমরাহিতে পতিত হয়েছো এবং সঠিক পথের সন্ধান পাও নি। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ এই ভেবে আমাদের সাথে যুদ্ধ করে যে আমরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে এক নিষ্ঠুর দুশমন। অন্যরা দুনিয়া বা বেতনের আশায় আমাদের সাথে যুদ্ধ করে। কেউ কেউ আমাদের সাথে যুদ্ধ করে অহংকার আর সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্য এবং অন্যান্যদের ভিন্ন-ভিন্ন নিয়্যাত আর কু-উদ্দেশ্য রয়েছে। কিন্তু জেনে রাখো, আমরা এই সকল নিয়্যাত আর উদ্দেশ্য সমূহের উপর ভিত্তি করে কোন পার্থক্য করি না এবং পাকড়াও করার পর তোমাদের উপর আমাদের বিধান একটাই: হয় তোমাদের মগজ ভেদকারী একটি বুলেট অথবা তোমাদের গর্দানে একটি ধারালো ছুরি” [কাফিরদেরকে বলে দিন, “তোমরা পরাভূত হবে”]

যারা স্বদিচ্ছা পোষণ করে তারা যদি সত্যবাদী হয়ে থাকত, তাহলে তারা সাহওয়াত জোট পরিত্যাগ করত, স্বধর্মত্যাগের কারণে তওবা করত, তাদের পূর্বের মিত্রদের বিরুদ্ধে তাকফির ঘোষণা করত এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করত, দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে নয়। শায়খ আবু মোহাম্মাদ আল-আদনানী সাহওয়াহ সৈনিকদের উপদেশ দিয়েছেন, “হে দল সমূহের সৈনিকরা, আল্লাহর ইচ্ছায় তোমরা যেখানেই থাকো না কেনো আমরা আসছি, এমনকি কিছু সময় পরে হলেও আমরা আসবো। আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসি নি, তাই মুজাহিদিনদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িও না। যারাই তাদের অস্ত্র ত্যাগ করবে এবং তাওবাহ করবে, তাদের জন্য নিরাপত্তা। যারাই মসজিদে অবস্থান করবে এবং তাওবাহ করবে, তাদের জন্য নিরাপত্তা। যারাই নিজেদের ঘরে অবস্থান করবে এবং দরজা বন্ধ রেখে তাওবাহ করবে, তাদের জন্য নিরাপত্তা। দল এবং ব্রিগেড সমূহকে যারাই ত্যাগ করবে এবং তাওবাহ করবে, তাদের জন্য নিরাপত্তা। মুজাহিদিনগণের বিরুদ্ধে তাদের বিগত শত্রুতা আর সীমালঙ্ঘন সত্ত্বেও তাদের জান-মালের ব্যাপারে তারা নিরাপত্তা পাবে। হে আল্লাহ, আমরা বার্তা পৌঁছে দিয়েছি, আপনি সাক্ষী থাকুন [কাফিরদেরকে বলে দিন, “তোমরা পরাভূত হবে”]

ক্রুসেডর, তাগ্বুত, তাদের দালাল ও তাদের মিত্রদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও আল্লাহ মুজাহিদিনদের শামে বিজয় দান করুন।  



[1] তা গণতন্ত্রেরই আরেক আধুনিকায়িত রূপ, যার মধ্যে “আধুনিক পশ্চিমা উদার গণতন্ত্রের” অনেক বৈশিষ্ট্য বিদ্ধমান।
[2] জাওলানির শুরা কাউন্সিলের একজন সাবেক সদস্য দাবিককে জানান যে, যখন যাওয়াহিরি জাওলানিকে মুরতাদ ইসলামিক ফ্রন্টের সাথে যোগ দিতে বলে, তখন সে তা অস্বীকার করে কারণ, যাওয়াহিরি জানেন না ভিতরে কি হচ্ছে। যখন জাওলানিকে আহরার আশ শামের নেতৃত্ব বাধ্য করে যাওয়াহিরির কথা মেনে নিতে তখন তিনি চুক্তির শর্ত হিসেবে বলেন যে জাহরান ‘আল্লুশকে ইসলামিক ফ্রন্টের নেতৃত্ব ছেড়ে দিতে হবে, যদিও সে সাহওয়াতের শুরু থেকে দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ‘আল্লুশেরর ইসলামিক ফ্রন্টকে সাহায্য করে আসছে।
[3] বাতিনিয়াহদের (যার মধ্যে দ্রুজরাও রয়েছে) তাওবাহ মুসলিম কর্তৃপক্ষ কবুল করতে পারবে কিনা এব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেন, যদি তাদের মধ্যে তওবা করার লক্ষণ প্রকাশ পায় তবে তাওবাহ কবুল করা যাবে কিনা এ ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তাওবাহ কবুল করার পক্ষে যারা রয়েছেন তারা বলেন দ্রুজরা ইসলামের শারীয়াহ মেনে চললে তারা তাদের সম্পত্তি নিজেদের কাছে রাখতে পারবে। তাওবাহ কবুল করার বিপক্ষে যারা রয়েছেন তারা বলেন দ্রুজদের সম্পত্তি তাদের নিকটাত্মীয় নয় বরং বায়তুল মালে জমা হবে। [মাজমু আল ফতওয়া]
[4] আর ঐসকল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে যাদের মধ্যে মুরতাদ থেকে তওবা করার ফলে ও দ্বীনি শিক্ষা লাভের ফলে সততা, ন্যায়নিষ্ঠতা ও দ্বীন পালনের ব্যাপারে প্রবল আগ্রহ দেখা যায় তাহলে আল্লাহ ভালো জানেন, উদাহরণস্বরূপ তুলাইহাহ আল আসাদি এর ঘটনা যিনি খলিফা আস-সিদ্দিকের সময়ে নবুওয়াতের মিথ্যা দাবি করেন ও পরে তওবা করেন এবং কাদেসিয়া ও নাহওয়ানদে পারস্যের বিপক্ষে যুদ্ধ করেন ও শাহাদাত বরণ করেন খলিফা আল ফারুকের সময়ে। তার জীবনী দেখুন ‘সিয়ার আলম আন নুবালা’ তে।
[5] দাবিক ২ এর ২৪-২৫ পৃষ্ঠা
[6] দাবিক ১০ এর পৃষ্ঠা ৭৫।
[7] তার পূর্বের আর্টিকেল দাবিক ১০ এর পৃষ্ঠা ১২- ১৩ তে।
[8] এখানে লক্ষণীয় যে বিভিন্ন সাহওয়াত গ্রুপদের বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে তারা সিরিয়ার মানুষদের ব্যাপারে যত্নশীল কিন্তু তারা জানে তুরস্কের নিরাপদ জোন তৈরির লক্ষই হচ্ছে খিলাফাহর মুজাহিদদের উপরে বিমান হামলা করা অথচ তারাই নুসাইরীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কঠোর। এই গ্রুপগুলোই আবার নাস্তিক পিকেকে কে ব্যাবহার করে তুর্কি তাগুতের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধ করার জন্য, কিন্তু ভুলে যায় যে তারা একই পিকেকের সাথে হালাবে যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি করেছে যার কিছু ধারায় এটি উল্লেখ ছিল যে ক্ষমতা ভাগাভাগি হবে অর্থাৎ কিছু স্থানে পিকেকের শাসন থাকবে। হালাবে আহরার আস- শাম অপারেশন রুম ও শামিয়া ফ্রন্টের পিকেকের সাথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হয়েছিল। এই চুক্তিতে জায়েস আল মুজাহেদিন ও আহরার আস- শামকে ভাই হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। যদি তারা সত্যিই নাস্তিক পিকেকে কে নিয়ে চিন্তিত হত, যেমনটি তারা বলে থাকে তবে শান্তিচুক্তি করার বদলে তারা তাদের সাথে দাওলাতুল ইসলামের ন্যায় যুদ্ধে লিপ্ত হত।
[9] কিছুদিন আগে রবার্ট ফোর্ড (সিরিয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত) এক প্রবন্ধ লিখেছে, যার শিরোনাম, “হ্যাঁ, কথা হয়েছে সিরিয়ার আহরার আস-শামের সাথে” যেখানে সে দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে আহরার আস-শামকে সরাসরি সাহায্য পাঠাতে বলে, তাগ্বুতের মাধ্যমে পরোক্ষ সহযোগিতার প্রায় দুই বছর পরে। এর কিছুদিন পরেই ডেইলি বিস্ট এ একটি আর্টিকেল প্রকাশিত হয়, শিরোনাম “শয়তানের সাথে চুক্তি- পেত্রাউসঃ আল কায়েদা যোদ্ধাদের ব্যাবহার করুন আই.এস.এই.এস এর সাথে লড়াইয়ে” যেখানে দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জাওলানি ফ্রন্টকে সহায়তা করার ডেভিড পেত্রাউস (ইরাকে ক্রুসেডারদের সাবেক কমান্ডিং জেনারেল এবং ইরাকি সাহওয়াতের সহ- প্রতিষ্ঠাতা) এর চিন্তাটা প্রকাশ পায়। এর পরপরই মিথ্যাবাদী আবু আব্দিল্লাহ আশ-শামি তুরস্ক, আমেরিকা ও উপসাগরীয় অঞ্চলের পক্ষের বিভিন্ন সাহওয়াতের সাথে তার সহযোগিতার পেছনে যুক্তি তুলে ধরে বলে যে কেউ সাহওয়াতকে তাকফির করতে পারবে না, কারণ হিসেবে সে বিভিন্ন ক্রুসেডার ও মুরতাদদের সাথে সহযোগিতার পক্ষে মিথ্যা অজুহাত তুলে ধরে! এরপর সে মিথ্যা বলে ও দাবি করে দাওলাতুল ইসলাম নিজেও তুরস্কেকে ‘সহযোগিতা’ করেছে এবং এর ‘প্রমাণ’ হিসেবে সে ৪৬ তুর্কি কারাবন্দির বিনিময়ে ২০০ মুহাজিরের মুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে! এটা কি ‘সহযোগিতা’ না মুসলিম বন্দিদের মুক্তির বিধান পালনের জন্য চেষ্টা। সে এই লজ্জাজনক মিথ্যাটি বলে যদিও সে জানে যে, মুরতাদ তুর্কি সরকার ও তার সৈন্য দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ন্যাটো ও আমেরিকার নেতৃত্বে কোয়ালিশনের অংশ এবং তুরস্ক মুহাজিরদের বন্দি করে ও আমেরিকার সাথে একসাথে হালাবে দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে বোমাবর্ষণ করে সাহওয়াতকে (যারা জাওলানি ফ্রন্টের মিত্র) সহযোগিতার জন্য, এমনকি মাঝে মাঝে জাওলানি ফ্রন্টের সুবিধা হয় এমন স্থানেও বোমা হামলা হয়! সুতরাং তাদেরকে এটাই বলা যায়, “যদি তোমরা নির্লজ্জ হও তবে তোমাদের যা খুশি কর” [আল মাসুদ থেকে বর্ণিত- বুখারি] আশ-শামি তার যত ইচ্ছে মিথ্যা বলতে পারে কিন্তু সত্য সুস্পষ্ট। সাহওয়াতের ভেড়াগুলো কখন জেগে উঠবে এবং অনুধাবন করবে তারা কেবল ক্রুসেডারদের স্বার্থের জন্যই কাজ করছে।

মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৬

‘ইরজা’ সবচেয়ে ভয়ংকর বিদআত এবং শামের জিহাদে এর প্রভাব


দাবিক-৮ হতে সংকলিত

আল হায়াত মিডিয়া সেন্টার – বাংলা বিভাগ কর্তৃক অনুবাদিত

পি ডি এফ ডাউনলোড লিংক 

 

ইরজা

সবচেয়ে ভয়ংকর বিদআত
(এবং শামের জিহাদে এর প্রভাব)
সালাফদের আলেমগণ ইরজার বিদআতের ব্যাপারে চরমভাবে সতর্ক করেছেন, যেহেতু এটা একটা ভয়ংকর বিদআত, যা মুসলিমদের দ্বীনকে হালকা করে দিয়েছিল এভাবে যে, বড় বড় গুণাহসমূহ এবং এমনকি কুফরও নগণ্য মনে করা হত। ইরজার মাধ্যমে মুসলিম সাধারণ জনগণ তাদের ধর্ম চর্চা ছেড়ে দিতে লাগল এবং তাদের ঈমানী কাজগুলোকে দুনিয়াবী ব্যবসা এবং –আরও খারাপ ভাবে- বিদআতী কাজ দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে লাগল। এমনকি তারা দ্বীন শিক্ষা থেকে ঘুরে গেল, যেন দ্বীনী বিষয়ে সামান্য ধারণা তাদের জন্য যথেষ্ট ছিল এবং দুনিয়াবী শিক্ষার উপরে জোর দিল। ধীরে ধীরে অজ্ঞতা এমন পর্যায়ে গেল যেভাবে আল-ফুদাইল ইবনে লাইয়াদ (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন-মৃত্যু ১৮৭ হিজরী) বর্ননা করেছেন, “তোমার অবস্থা কেমন হবে যদি তুমি ঐ সময়ে পৌঁছাও এবং যখন দেখবে যে মানুষ সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করে না অথবা মুমিন ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্য করে না অথবা বিশ্বাসী ও বিশ্বাসঘাতকের মধ্যে পার্থক্য করে না অথবা মূর্খ ও জ্ঞানীর মধ্যে পার্থক্য করে না। তারা ভালোকে ভালো বা খারাপকে খারাপ বলে জানবে না” [আল-ইবানাহ আল-কুবরা]।
ইবনে বাত্তাহ (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন-মৃত্যু ৩৮৭ হিজরী) আল ফুদাইলের কথায় এ বলে মন্তব্য করেন যে, “নিশ্চয় আমরা আল্লাহর এবং আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করব। আমরা সেই যুগে পৌঁছে গেছি, শুনেছি, তার বেশির ভাগই জেনেছি এবং স্বচক্ষে দেখেছি। যদি একজন মানুষ, যাকে আল্লাহ যথেষ্ট জ্ঞান এবং গভীর সূক্ষ্মদৃষ্টি দিয়েছেন, ইসলাম ও এর মানুষের অবস্থা সম্পর্কে গবেষণা করে, পর্যবেক্ষণ করে এবং গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করে –সবচেয়ে ধোঁকার পথ এবং সবচেয়ে সরল পথ অনুসরণের মাধ্যমে- তার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, অধিকাংশ এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মানুষ তাদের পিঠ ঘুরিয়ে নিয়েছে। তারা তাদের উদ্দেশ্য থেকে সরে গেছে এবং সঠিক প্রমাণ থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অনেক মানুষের পরিসমাপ্তি এভাবে ঘটেছে যে, তারা তা উত্তম মনে করে যা পূর্বে অপবিত্র মনে করত, আর তা হালাল মনে করে যা পূর্বে হারাম মনে করত এবং তা ভালো মনে করে যা পূর্বে খারাপ মনে করত। এ ধারণা –আল্লাহ তোমাকে রহম করুন- মুসলিমদের চরিত্র থেকে বা এই দ্বীন সম্পর্কে সূক্ষ্মদৃষ্টি সম্পন্নদের কাজ থেকে বা যারা নিশ্চিত ভাবে এই দ্বীনে বিশ্বাস করত তাদের আমল থেকে আসে নি’ [আল-ইবানাহ আল-কুবরা]।
ইবনে বাত্তাহ আরও বলেছেন, “আমাদের যুগের মানুষেরা পাখির ঝাঁকের মত। তারা একে অপরকে অনুসরণ করে। যদি কোন মানুষ এসে নবুওয়াত দাবী করত -যদিও সে জানত যে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শেষ নবী- অথবা দাবী করত যে সে রব, সে তার আহবানে অনুসরণকারী এবং সাহায্যকারী খুজে পেত” [আল-ইবানাহ আল-কুবরা]।
কারণ উম্মাহর ক্ষেত্রে যা ঘটে গেছে তা এই বিপদজনক বিদআতের জন্য,এ ব্যাপারে সকল মুয়াহহিদ মুজাহিদের জন্য সূক্ষ্মদৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন, বিশেষ করে যখন এটা জিহাদের সাথে সম্পর্কিত থাকে।
         সালাফগণ এবং ইরজার বিরুদ্ধে তাদের কড়া সতর্কবার্তা
যে সালাফগণ ইরজার উত্থান দেখেছেন তারা অনেক আগেই এর বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তারা জানতেন যে এটা দ্বীনের ‘ইলম ও আমল’ উভয়ের ক্ষেত্রে এগুলোর বর্জনের দিকে নিয়ে যাবে।
সাইদ ইবনে জুবায়ের (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন-মৃত্যু ৯৫ হিজরী) বলেন, “মুরজিয়ারা হল কিবলার ইহুদী”। (১) [আস-সুন্নাহ – আব্দুল্লাহ ইবনে আল-ইমাম আহমাদ]
ইবরাহীম আন-নাখাই (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন-মৃত্যু ৯৬ হিজরী) বলেন, “আমি এ উম্মতের জন্য আজারিকাহ (খারেজীদের একটি দল) এর ফিতনা থেকে মুরজিয়াদের ফিতনাকে বেশি ভয় করি”। [আস-সুন্নাহ – আব্দুল্লাহ ইবনে আল-ইমাম আহমাদ]
তিনি আরও বলেন, “ আমি মুসলিমদের জন্য আযারিকাহ এর সংখ্যা থেকে মুরজিয়াদের বেশি ভয় করি। [আস-সুন্নাহ – আব্দুল্লাহ ইবনে আল-ইমাম আহমাদ]
তিনি আরও বলেন, “আমার মতে মুরজিয়াদের থেকে খারেজীরা বেশি ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য”। [আস-সুন্নাহ – আব্দুল্লাহ ইবনে আল-ইমাম আহমাদ]
তিনি আরও বলেন, “মুরজিয়ারা ইসলামকে খুবই পাতলা কাপড়ের চেয়েও হালকা ভাবে নিয়ে ইসলাম ত্যাগ করেছে”। [আস-সুন্নাহ – আব্দুল্লাহ ইবনে আল-ইমাম আহমাদ]
তিনি আরও বলেন, “মুরজিয়ারা একটা মতাদর্শ আবিষ্কার করেছে, তাদেরকে আমি উম্মাতের জন্য ভয় করি। তাদের অনিষ্ট অত্যন্ত বড়, তাই তোমরা তাদের ব্যাপারে খুব সতর্ক থাক”। [আশ-শারীয়াহ আল-আজুরি]।
তিনি আরও বলেন, “মতাদর্শের ক্ষেত্রে মুরজিয়াদের চেয়ে বোকা আর কাউকে আমি জানি না”। [আস-সুন্নাহ – আব্দুল্লাহ ইবনে আল-ইমাম আহমাদ]
মুজাহিদ (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন-মৃত্যু ১০৪ হিজরী) বলেন, “তারা মুরজিয়া হয়ে শুরু করে, তারপর কাদারিয়া হয় (যারা তাকদির কে অস্বীকার করে), তারপর মাজুসীতে (অগ্নিউপাসক) পরিণত হয়”। [আল-লালিকাই]
কাতাদাহ (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন-মৃত্যু ১১৮ হিজরী) এবং ইয়াহিয়া ইবনে আবি কাছির (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন-মৃত্যু ১২৯ হিজরী) বলেন, “মুরজিয়াদের থেকে বেশি বিপদজনক, যাকে আমরা ভয় করি, আর কিছু নাই। [আস-সুন্নাহ – আব্দুল্লাহ ইবনে আল-ইমাম আহমাদ]
মুহাম্মাদ ইবনে আলি ইবনে আল-হুসাইন (আল্লাহ তাঁদেরকে রহম করুন-মৃত্যু ১১৮ হিজরী) বলেন, “দিনে ও রাতে মুরজিয়াদের থেকে বেশি ইহুদীদের অনুরূপ আর কেউ নাই। [আল-লালিকাই]
আয-যুহুর (আল্লাহ তাঁদেরকে রহম করুন-মৃত্যু ১২৪ হিজরী) বলেন, “ইসলাম আগমনের পরে এর মানুষের জন্য ইরজার থেকে বেশি ভয়ংকর কিছু আর আবিষ্কৃত হয়নি”। [আশ-শারীয়াহ আল-আযুরি]
মানসুর ইবনে আল-মুতামির (আল্লাহ তাঁদেরকে রহম করুন-মৃত্যু ১৩৩ হিজরী) বলেন, “মুরজিয়াহ এবং রাফিদারা আল্লাহর শত্রু”। [আল-লালিকাই]
মুগিরাহ আদ-দাব্বিহ (আল্লাহ তাঁদেরকে রহম করুন-মৃত্যু ১৩৩ হিজরী) বলেন, “আল্লাহর কসম, যিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নাই,আমি দ্বীনের জন্য ফুসাকদের (পাপী) থেকেও মুরজিয়াদের বেশি ভয় করি”। [আস-সুন্নাহ – আব্দুল্লাহ ইবনে আল-ইমাম আহমাদ]
আল-আমাশ (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন-মৃত্যু ১৪৮ হিজরী) বলেন, “আল্লাহর শপথ, যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নাই,আমি মুরজিয়াদের থেকে বেশি অশুভ আর কাউকে দেখিনি”। [আস-সুন্নাহ – আব্দুল্লাহ ইবনে আল-ইমাম আহমাদ]
সুফিয়ান আছ-ছাওরি (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন-মৃত্যু ১৬১ হিজরী) বলেন, “ইরজার ধর্ম একটি আবিষ্কৃত ধর্ম”। [আস-সুন্নাহ – আল-খাল্লাল]
তিনি কুরআনের পাতা উল্টাতে উল্টাতে আরও বলেন, “মুরজিয়াদের চেয়ে এর (কুরআন) থেকে দূরবর্তী আর কেউ নাই”। [আল-লালিকাই]
শারিক (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন-মৃত্যু ১৭৭ হিজরী)বলেন, “মুরজিয়ারা সবচেয়ে বেশি কলুষিত। রাফিদারা মোটামুটি কলুষিত ছিল কিন্তু মুরজিয়ারা আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলে”। [আস-সুন্নাহ – আব্দুল্লাহ ইবনে আল-ইমাম আহমাদ]
ইবনুল-মুবারক (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন-মৃত্যু ১৮১ হিজরী) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, “কার উত্থান আগে হবে, দাজ্জাল না পশু? তিনি উত্তর দিলেন, “দাজ্জাল অথবা পশুর উত্থানের থেকেও জাহমিয়াদেরকে বুখারার বিচারক নিয়োগ দেওয়া বেশি বিপদজনক”। তখন বিচারক ছিল চরমপন্থী মুরজিয়া। [আস-সুন্নাহ – আব্দুল্লাহ ইবনে আল-ইমাম আহমাদ]
আন-নাদর ইবনে শুমাইলকে (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন-মৃত্যু ২০৪ হিজরী) ইরজা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তাই তিনি জবাবে বলেন, “এটি একটি ধর্ম যা রাজা বাদশাদের প্রবৃত্তির সাথে মিলে যায়, যার মাধ্যমে মুরজিয়ারা রাজাদের দুনিয়া লাভ করে এবং তাদের ধর্মের কিছু অংশ হারায়”। [আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া] (২)
যদি সালাফগণ ইরজার বিরুদ্ধে এত হুঁশিয়ারি দিয়ে থাকেন, তাহলে মুসলিমরা কীভাবে এই নতুন আবিষ্কারকে একেবারে উপেক্ষা করতে পারে?
ইরজা এর উৎপত্তি এবং অর্থ
ইরজা ছিল খারেজীদের বক্রতার বিরুদ্ধে একটা প্রতিক্রিয়া। মুরজিয়ারা খারেজীদের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে ছিল সুন্নাহকে আকঁড়ে না ধরে, এটা করার ফলে, তারা তাদের নিজেদের দল তৈরি করল। এর সবচেয়ে ভাল ব্যাখ্যা দিয়েছেন সালাফগনের আলেম, সাইদ ইবনে জুবায়ের (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন), যিনি বলেন, “মুরজিয়াদের ধর্ম হল সাবিয়ানদের মত। তারা ইহুদীদের কাছে গেল এবং জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমাদের দ্বীন কী?’ তারা বলল, ‘ইহুদীবাদ’। তারা জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমাদের কিতাব কী?’ তারা বলল, ‘তাওরাহ’। তারা জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমাদের নবী কে?’ তারা বলল, ‘মুসা’। তারা জিজ্ঞাসা করল, ‘যারা তোমাদের অনুসরণ করে তাদের জন্য কি আছে?’ তারা বলল, ‘জান্নাহ’। তখন তারা খ্রিস্টানদের কাছে গেল এবং জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমাদের দ্বীন কী’? তারা বলল, ‘খ্রিস্টধর্ম’। তারা জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমাদের কিতাব কী’? তারা বলল, ‘ঈঞ্জিল’। তারা জিজ্ঞাসা করল, “তোমাদের নবী কে’? তারা বলল, ‘ঈসা’। তারা জিজ্ঞাসা করল, ‘যারা তোমাদের অনুসরণ করে তাদের জন্য কি আছে’? তারা বলল, ‘জান্নাহ’। তখন তারা ঘোষণা দিল, “আমরা এই দুই ধর্মের মধ্যবর্তী”। [আল-লালিকাই]
মুরজিয়ারা খারেজীদের প্রতিরোধ (বিরোধিতা) করে যারা সকল ফরজ আমলকে এবং সকল পাপের বর্জনকে জরুরী বানিয়েছে মুসলিম হওয়ার জন্য, তারা তাদের নিজস্ব উদ্ভাবনের মাধ্যমে জবাব দেয়, দাবী করে যে সকল ফরজ কাজের আমল এবং সকল পাপের বর্জন একজনের ঈমানকে প্রভাবিত করে না, এমনকি যদি কেউ ইসলামের ভিত্তিকে সম্পূর্ণ ভাবে ছেড়ে দেয়! তারা ঈমানের বাস্তবতা থেকে আমলকে বাদ দেয় ঈমানের সংজ্ঞা থেকে আমলকে ‘বিলম্ব’ করানোর মাধ্যমে এবং এটা ইরজা শব্দের আভিধানিক মূল, কেননা ইরজা মানে “একটি বিলম্ব”।
তাদের আবিষ্কারের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য, অভিব্যক্তি এবং ব্যবহারিক ফলাফল আছে – যার মধ্যে কিছু আলোচনা করা হবে- কিন্তু এটা প্রথমে স্মরণ করা প্রয়োজন যে ঈমানের সংজ্ঞার ব্যাপারে উলামাদের বাহ্যিক ঐক্যমত এবং দু’য়াত এটা মনে করে না যে তারা তাদেরকে ইরজা থেকে মুক্ত করেছেন। এটা সম্পূর্ণ পরিস্কার হয়ে যায় যখন কেউ সমসাময়িক সালাফী দরবারী আলেমদের বিবৃতি গবেষণা করে, যারা বলে যে মানবসৃষ্ট আইনে শাসন করা এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে কুফফারদের পক্ষ নেওয়া বড় কুফরী কিন্তু সৌদি সরকারের উপর এই তাত্বিক বিধান বাস্তবায়ন করে না। বরং তারা সালাফগণ ও উলামাদের বিবৃতিকে প্যাঁচায়, যাতে একটা অব্যাহতি এবং তাদের প্রভুদের কুফরীর সমর্থন আবিষ্কার করা যায়। অনুরুপভাবে, এ যুগে অনেকেই ছিলেন যারা হাদীসশাস্ত্রে বিশেষজ্ঞ এবং নিয়মিত ভাবে সালাফগণের দেওয়া ঈমানের সংজ্ঞা অক্ষরে অক্ষরে পুনরাবৃত্তি করেন,“ঈমান হল কথা ও কর্ম; এটা কমে ও বাড়ে”। তারপরেও তারা পরিষ্কার ভাবে এ সংজ্ঞার বিরোধিতা করে এ বলে যে, যদি কোন মুসলিম সম্পূর্ণ ভাবে একসাথে সালাত, যাকাত, সিয়াম এবং হজ ছেড়ে দেয় এবং আল্লাহকে বিদ্রুপ করে তারপরেও সে মুসলিম থাকতে পারে এবং অবশেষে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এভাবে তারা ইসলামকে একটি অবাস্তব দাবীতে পরিণত করেছে।
সালাফগণের দেওয়া ইরজার সংজ্ঞা
প্রকৃত মুরজিয়ারা ঈমানের সংজ্ঞা থেকে আমলকে বাদ দিয়েছে, শুধু অন্তর ও জিহবার স্বীকারোক্তিকে আবশ্যক করেছে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল, এই সাক্ষ্যদানের মৌখিক স্বীকারোক্তি। তারা আরও দাবী করে যে ঈমান বাড়ে না বা কমে না। তাদের এ ঈমানের বুঝে অনেক ইঙ্গিত, ফলাফল এবং রুপান্তর রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় হল যে, ফরয কাজ গুলো সম্পূর্ণ বর্জন করলে কারও ঈমান আক্রান্ত হয় না, মুনাফিকি বলে কোন কিছু থাকে না এবং আবশ্যক ভাবে প্রত্যেক মুসলিমের জানা আছে এমন বিখ্যাত ও সুপরিচিত ঘটনার উপেক্ষা করা তুচ্ছ হয়ে যায়।
মুরজিয়াদের মতে আত্মসমর্পণ তুচ্ছ
মুরজিয়ারা আহলুস সুন্নাহর বিরোধিতা করে এ বলে যে, নিজের অঙ্গ-প্রত্তঙ্গ কে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করা জরুরী না।
সুফিয়ান ইবনে উয়াইনাহ (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন – মৃত্যু ১৯৯ হিজরী) কে ইরজা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তাই তিনি জবাবে বলেন, “মুরজিয়া বলে যে ঈমান হল স্বীকারোক্তি। আমরা বলি ঈমান হল স্বীকারোক্তি ও কর্ম। মুরজিয়ারা তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দেয় যে, স্বীকার করে যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই যদিও সে অন্তরে ফরয কাজগুলোকে বর্জন করতে মনস্থ করে। (৩) তারা ফরয কাজ বর্জন করাকে অন্য সব পাপের মত সাধারণ পাপ মনে করে, যদিও এগুলো এক নয়, যেমন ইস্তিহলাল ছাড়া গুনাহ (গুনাহকে হালাল মনে করা) হল সাধারণ পাপ আর মূর্খতা বা অজুহাত ছাড়া সচেতন ভাবে পাপ করা কুফরী। আদম (আলাইহি সালাম), ইবলিস (আল্লাহ তাকে অভিশাপ করুন) ও ইহুদী রাব্বীদের ঘটনা যা পরিষ্কার করে দেয়। আদমের ক্ষেত্রে আল্লাহ তাঁকে ঐ গাছ থেকে ফল খাওয়া নিষেধ করেন এবং এটা তার জন্য হারাম করে দেন, তারপরেও তিনি ইচ্ছাকৃত ভাবে তা থেকে খান, যাতে তিনি (আদম) ফেরেশতা বা অমর হয়ে যান, তাই তাঁকে কুফর ব্যতীত অবাধ্য বলা হয়। ইবলিসের (আল্লাহ তাকে অভিশাপ দিন) ক্ষেত্রে, আল্লাহ তাকে শুধু একটা সিজদা ফরয করলেন, কিন্তু সে ইচ্ছা করে প্রত্যাখ্যান করল, এজন্য তাকে কাফির বলা হয়। ইহুদী রাব্বীদের ক্ষেত্রে, তারা নবীর(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বর্ননা জানত এবং জানত যে তিনি নবী ও রাসূল-যেভাবে তারা তাদের নিজের সন্তানকে জানত- এবং মৌখিক ভাবে স্বীকার করত কিন্তু তাঁর শারীয়াহ তারা অনুসরণ করেনি, তাই আল্লাহ তাদেরকে কাফির বলেছেন। তাই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা আদম (আলাইহি সালাম) ও অন্যান্য নবীদের পাপের মত। প্রত্যাখ্যানের সাথে ফরজকে বর্জন করলে তা কুফরী হবে যেমন ইবলিসের কুফরী। আর সচেতন ভাবে কিন্তু অস্বীকার না করে করলে তখন তা ইহুদী রাব্বীদের কুফরীর মত কুফরী হবে। এবং আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন। [আস-সুন্নাহ – আব্দুল্লাহ ইবনে আল-ইমাম আহমাদ]
আল-হুমায়দি (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন – মৃত্যু ২১৯ হিজরী) বলেন, “আমাকে ঐ মানুষদের সম্পর্কে বলা হয় যারা বলে, ‘যে কেউ সালাত, যাকাত, সিয়াম ও হজ্জ কে স্বীকার করে, কিন্তু এর মধ্যে কোন একটা মৃত্যু অবধি পালন করে না এবং তার পিঠ কিবলার দিকে করে মৃত্যু পর্যন্ত সালাত আদায় করে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে মুমিন থাকবে যতক্ষণ সে ফরয কাজগুলো অস্বীকার না করে, যদি সে জানে যে এই ফরয গুলোকে অস্বীকার না করা তার ঈমানকে নিশ্চিত করে এবং সে ফরযগুলোকে এবং কিবলার দিক মেনে নেয়’। আমি বলি এটা প্রকাশ্য কুফরী এবং এটা আল্লাহর কিতাব, রাসূলের সুন্নাহ এবং মুসলিম উলামাদের বিপক্ষে। আল্লাহ (তায়ালা) বলেন, “{তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম।}” [আল-বাইয়িনাহঃ৫] [আল-লালিকাই]। ইমাম আহমাদ আরও বলেন, “যে কেউ তদ্রুপ বলে, সে আল্লাহকে অস্বীকার করল, আল্লাহর আদেশ ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যা নিয়ে এসেছেন তা প্রত্যাখ্যান করল”। [আল-লালিকাই]
ইসহাক ইবনে রাহাবেহ (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন – মৃত্যু ২৩৮ হিজরী) বলেন, “মুরজিয়ারা ঐসব ক্ষেত্রে চরমপন্থায় পড়ে যায় যখন তাদের কেউ বলে, ‘যে কেউ ফরয সালাত, রমজানের সিয়াম, যাকাত, হজ্জ এবং সাধারণ ফরয কাজগুলির ফরযিয়াত অস্বীকার না করে বর্জন করে, তখন আমরা তাকে তাকফির করি না এবং তার বিষয়টা পরকালে আল্লাহর সাথে জড়িত, কেননা সে ফরজকে স্বীকৃতি দেয়’। এরাই হল মুরজিয়াহ যাদের ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। [মাসাইল আল ইমাম আহমাহ ওয়া ইসহাক ইবনে রাহাবেহ]
সালাফগণ প্রমাণ হিসেবে আরও পেশ করেন, “{অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবাহ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।}” [আত-তাওবাহঃ৫] এবং “{অবশ্য তারা যদি তওবাহ করে, সালাত কায়েম করে আর যাকাত আদায় করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই। আর আমি বিধানসমূহে জ্ঞানী লোকদের জন্যে সর্বস্তরে বর্ননা করে থাকি।}” [আত-তাওবাহঃ১১] এই আয়াতগুলি নির্দেশ করে যে মুশরিকদের তাওবার জন্য সালাত প্রতিষ্ঠা করা এবং যাকাত আদায় করা শর্ত।
আলেমগণ প্রমাণ হিসেবে ঐ সব আয়াত ব্যবহার করেন যেগুলো নির্দেশ করে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে সম্পূর্ণ ফিরে যাওয়া –তাঁর আনুগত্য সম্পূর্ণ বর্জন করা- কুফরী। “{বলুন, আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য প্রকাশ কর। বস্তুতঃ যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ কাফেরদিগকে ভালবাসেন না।}” [আল-ইমরানঃ৩২] (৪)
তাঁরা প্রমাণ হিসেবে বুখারি ও মুসলিম দ্বারা উমার ও আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত এ হাদিসও ব্যবহার করেন। এতে জিবরীল (আলাইহি সালাম) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলেন, “হে মুহাম্মাদ, আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন”। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “ইসলাম হল এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, সালাত প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত আদায় করা, রমজানে রোজা রাখা এবং হজ্জ পালন করা যদি তুমি সমর্থ হও”। অন্য এক বর্ননায় জিবরীল (আলাইহি সালাম) জিজ্ঞাসা করেন, “যদি আমি সেগুলো করি তাহলে কি আমি মুসলিম?” তিনি জবাব দেন, “হ্যাঁ”। [সহীহঃ ইবনে মানদাহ থেকে বর্ণিত]
তাঁরা প্রমাণ হিসেবে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ হাদিসও উল্লেখ করেন, “আমাকে ঐসব লোকের সাথে লড়াই করতে বলা হয়েছে যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত আদায় করে। যদি তারা সেগুলো করে তাহলে তাদের রক্ত ও সম্পদ আমার কাছ থেকে সুরক্ষিত হল, ইসলামের বিধান ব্যতীত এবং তাদের হিসাব আল্লাহর সাথে”। [আল-বুখারি ও মুসলিম]
তাঁরা প্রমাণ হিসেবে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ হাদিসও উল্লেখ করেন, “যে আমাদের সালাত আদায় করে, আমাদের কিবলার সম্মুখীন হয় এবং আমাদের জবেহকৃত পশুর মাংস খায়, তখন সে আল্লাহ ও রাসূলের কাছ থেকে সুরক্ষা পেল”। [আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহ) থেকে আল-বুখারি দ্বারা বর্ণিত]
তাঁরা প্রমাণ হিসেবে সাহাবাদের এ ইজমাও পেশ করেন যে সালাত পরিত্যাগ করা রিদ্দাহ (দ্বীনত্যাগ) এবং সাহাবাদের এ ইজমাও ব্যবহার করেন যেখানে তাঁরা যাকাত দিতে অস্বীকারকারী গোত্রগুলোকে মুরতাদ হিসেবে ঘোষণা করেন। পরবর্তী ঘটনাগুলো ঐসব দলের কুফরী প্রমাণ করে যারা ক্ষমতার জোরে শরীয়াতের প্রকাশ্য ও বিখ্যাত হুকুমগুলির বিরোধিতা করে, যেমন: খামর (অ্যালকোহল) এর নিষেধাজ্ঞা, ব্যাভিচারের নিষেধাজ্ঞা এবং রিবার (সুদ) নিষেধাজ্ঞা।
আল-মারওয়াজি (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন – মৃত্যু ২৯৪ হিজরী) বলেন, “তখন আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত হাদিসগুলো উল্লেখ করলাম যেখানে তার কুফরী ঘোষণা করা হয় যে সালাত ত্যাগ করে, তাকে দ্বীন থেকে বের করে দেয় এবং এটা করতে যে বাধা দেয় তাকে হত্যা করতে অনুমতি দেয়। এরকম একই বর্ননা সাহাবাদের (রাদিআল্লাহু আনহুম) থেকে আমাদের কাছে পৌঁছেছে। তাদের থেকে এর বিরোধী কোন কিছু আমাদের কাছে আসেনি”। [তাযিম ক্বাদর আস-সালাহ]
আল-ফুদাইল ইবনে লিয়াদ (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন – মৃত্যু ১৮৭ হিজরী) বলেন, “ আল্লাহ বলেন, {তিনি তোমাদের জন্যে দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারিত করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না} [আশ-শুরাঃ১৩]। তাই দ্বীন হল বিবৃতি (ঈমানের) আমলের মাধ্যমে যা আল্লাহ বর্ননা করেছেন এবং যেভাবে তিনি তার নবী ও রাসূলদেরকে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে আদেশ দিয়েছেন। সেখানে বিভক্ত হয়ে যাওয়া হল আমলকে বর্জন করা এবং কথা ও কাজের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যাওয়া। আল্লাহ বলেন, “{অবশ্য তারা যদি তওবা করে, সালাত কায়েম করে আর যাকাত আদায় করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই। আর আমি বিধানসমূহে জ্ঞানী লোকদের জন্যে সর্বস্তরে বর্ননা করে থাকি}” [আত-তাওবাহঃ১১]। তাই আল্লাহ শিরক থেকে তওবার ক্ষেত্রে কথা ও আমল, সালাত প্রতিষ্ঠা করা ও যাকাত আদায় করার মাধ্যমে উভয়কে বাধ্যতামূলক করেছেন। আহলে রায়গণ (ভুল ব্যাখ্যা) বলেন, ‘সালাত ঈমান থেকে বা যাকাত বা অন্য কোন ফরয আমল থেকে আসেনি’। তারা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা আরোপের মাধ্যমে এবং তার কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহর বিরোধিতার মাধ্যমে তা করে। যদি তারা সত্য বলত তাহলে আবু বকর মুরতাদদের সাথে যুদ্ধ করতেন না”। [আস-সুন্নাহ – আব্দুল্লাহ ইবনে আল-ইমাম আহমাদ]
আল-কাসিম ইবনে সালাম (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন – মৃত্যু ২২৪ হিজরী) বলেন, “যদি তারা যাকাতকে প্রতিরোধ করে স্বীকার করার পরেও, তাদের জিহবার মাধ্যমে তা বলে, সালাতকে প্রতিষ্ঠা করে শুধু যাকাত দিতে আপত্তি প্রতিরোধ করে, এই প্রতিরোধ তাদের পিছনের সবকিছু (আমল) নাকচ করে দেয় সেই সঙ্গে তাদের ঈমানের স্বীকৃতি ও সালাত, যেমন সালাতকে অস্বীকার করলে তাদের স্বীকৃতি নাকচ হয়ে যায়। এটার সাক্ষ্য বহন করে আবু বকর সিদ্দিকের (রাদিআল্লাহু আনহু) এবং তার অধীনে মুহাজির ও আনসারগণের ‘যাকাতের বিরুদ্ধে আরবদের প্রতিরোধের’ বিরুদ্ধে জিহাদ। তার জিহাদ ছিল রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদের মত, কেননা রক্ত ঝরানোর ক্ষেত্রে, পরিবারকে দাস বানানোর ক্ষেত্রে এবং সম্পদ দখলের ক্ষেত্রে এই দুই জিহাদের মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল না। এবং তারা অস্বীকার না করে শুধু যাকাত প্রতিরোধ করতে চেয়েছিল”। [আল-ঈমান]
ইবনে আবি আসিম (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন – মৃত্যু ২৮৭ হিজরী) বলেন, “আবু বকর আস-সিদ্দিক আমার মতে রাসুলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পরে সাহাবাদের মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী ছিলেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে গুণান্বিত, সবচেয়ে দুনিয়াত্যাগী, সবচেয়ে সাহসী এবং সবচেয়ে উদার ছিলেন। এর প্রমাণ হিসেবে মুরতাদদের ব্যাপারে তার বিবৃতি, যখন নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবাগণ তার সাথে তর্ক করলেন যাতে তিনি মুরতাদদের দ্বীন থেকে কিছু গ্রহণ করেন, কিন্তু তিনি আল্লাহ যা তাদের উপরে ফরয করেছেন তার থেকে কম গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন বলে জানান। তিনি দেখলেন যে কিছু আয়াতের সাথে কুফরী করায় তাদের রক্তকে হালাল করে দেয়, তাই তিনি তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সংকল্প করলেন, এবং তিনি জানতেন যে এটাই ছিল হক্ব” [আস-সুন্নাহ]। প্রাথমিক তর্কের পরে যা ইবনে আবি আসিম উল্লেখ করেছেন, সাহাবাদের হুঁশ ফিরে আসল। উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহ) বলেন, “আল্লাহর কসম, যখনই আমি দেখলাম যে আল্লাহ জিহাদ শুরু করার ব্যাপারে আবু বকরের হৃদয় খুলে দিয়েছেন, আমি বুঝতে পারলাম যে তিনি হক্বের উপরে আছেন”। [আল-বুখারী ও মুসলিম]
সুলায়মান আল আশ-শেইখ (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন) বলেন, “শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেন, যখন তাঁকে তাতারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যদিও তারা সাহাদাতাইনের (ইসলামের সাক্ষ্যদান) উপরে টিকে ছিল এবং ইসলামের ভিত্তির উপরে টিকেছিল বলে দাবী করত, ‘প্রত্যেক দল যারা সুস্পষ্ট ও নির্দিষ্ট আইনের বিরোধিতা করে এসব লোকের মধ্য থেকে বা অন্যদের মধ্য থেকে, তখন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ফরয হয়ে যায়, যতক্ষণ না তারা এই আইনগুলো মেনে নেয়, যদিও তারা শাহাদাতাইন ঘোষণা দেয় এবং এর কিছু আইন অনুসরণ করে, ঠিক যেরকম ভাবে আবু বকর ও সাহাবাগন (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) যাকাত দিতে অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। তাদের পরে ফুকাহাগণ এতে সম্মত হয়েছেন’। তারপর তিনি বলেন, ‘যেকোনো বিদ্রোহী দল যারা সালাত, সিয়াম বা হজ্জের যেকোনো একটি অস্বীকার করে অথবা রক্ত ঝরানো, সম্পদ অপহরণ করা, মদ, জুয়া, ব্যাভিচার এর নিষেধাজ্ঞাকে মানতে অস্বীকার করে বা কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ বা আহলে কিতাবের উপর জিযিয়া ধার্য করার বিরোধিতা করে বা দ্বীনের অন্য কোন ফরয বা নিষেধকে মানতে বিরোধিতা করে, ঐসব বিধান যাতে কেউ অজ্ঞতার অজুহাত দিতে বা ছেড়ে দিতে না পারে এবং যা অস্বীকারের মাধ্যমে কেউ কুফরী করে, তখন এ নিয়মের কারণে ঐসব বিদ্রোহী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হয় যদিও তারা এর মৌখিক স্বীকৃতি দেয়। এটা এরকম যাতে, আমি জানি যে, উলামাদের মধ্যে কোন দ্বিমত নাই’। তিনি বলেন, ‘এরা -সবচেয়ে বিজ্ঞ আলেমদের মতে- বুগাতদের (বিদ্রোহী) মত একই স্তরের নয়। বরং তারা ইসলামে বাড়াবাড়ি করেছে ওদের স্তরে যারা যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে’। … তাই যদি কোন ব্যক্তি ইসলামের প্রত্যেক আইনের উপর টিকে থাকে কিন্তু জুয়া, সুদ বা ব্যাভিচারের (৫) নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে, সে একজন কাফির যার বিরুদ্ধে লড়াই করা ফরয, তার ঘটনা কতইনা বড় (কুফরী) যে আল্লাহর সাথে শিরক করে, যাকে আন্তরিক ভাবে আল্লাহর কাছে দ্বীন সমর্পন করতে বলা হয় এবং বা’রা ও কুফরী ঘোষণা করতে বলা হয় এমন সবকিছুর বিরুদ্ধে যাদেরকে আল্লাহর বদলে ইবাদত করা হয় কিন্তু অহংকার বশত সে তা প্রত্যাখ্যান করে। তাই সে কাফিরদের অন্তর্গত”। [তাইসির আল-আযিয আল-হামিদ]
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন) আরও বলেন, “সাহাবাগণ বলেননি যে, ‘তোমরা কি স্বীকার কর যে এটা ফরয, নাকি তোমরা এটাকে অস্বীকার কর’? এটা খুলাফা ও সাহাবাদের থেকে জানা যায় না। বরং, আস-সিদ্দিক উমারকে (রাযি আল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘আল্লাহর কসম, যদি তারা আমাকে একটা ছোট রশি দিতেও অস্বীকৃতি জানাতো যা তারা আল্লাহর রাসূলকে(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দিত, আমি তাদের বিরুদ্ধে এ বিরোধিতার কারণে যুদ্ধ করতাম’। তাই তিনি এটা দিতে অস্বীকার করার জন্য যুদ্ধের অনুমতি দিলেন, এর ফরযিয়াতকে অস্বীকৃতির জন্যে নয়। এরকম বলা হয়ে থাকে যে, তাদের মধ্যে একটি দল এর ফরযিয়াতকে স্বীকার করত কিন্তু কৃপণতার জন্য দিয়েছিল না, কিন্তু তা সত্বেও খালিফাহহ একই ভাবে তাদের মোকাবেলা করেছেন যেঃ তাদের যোদ্ধাদেরকে হত্যা করা, তাদের পরিবারকে কৃতদাস বানানো এবং তাদের সম্পদ গণিমত হিসেবে নেওয়া এবং এটা সাক্ষ্য দেওয়া যে তাদের যোদ্ধারা জাহান্নামী। এবং (খালিফাহ) তাদের সবাইকে মুরতাদ হিসেবে চিহ্নিত করতেন”। [আল-কালিমাত আন-নাফি’আহ – আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দিল-অয়াহাব]
পরিশেষে, সালাত ত্যাগ করা যদি রিদ্দাহ হয় তাহলে বড় শিরকের দ্বারা (তাওহীদ) ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাওয়া কত বড় ব্যাপার (রিদ্দাহ)! একইভাবে, শক্তির মাধ্যমে যাকাতের প্রতিরোধ যদি কুফরী হয় তাহলে ‘গনতন্ত্রপন্থী পৌত্তলিক ধর্ম’কে দাওয়াহ করা এবং এর জন্য যুদ্ধ করা কত বড় কুফরী!!
 মুরজিয়াদের মতে অজ্ঞতার উপকারিতা
কিছু মুরজিয়াদের মতে মৌলিক জ্ঞান ঈমানের জরুরী অংশ নয়, এমনকি যখন এ জ্ঞান খুবই প্রচলিত ও পরিচিত।
এটা বলা হয়ে থাকে যে, মসজিদ আল-হারামে একজন ইরজায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, যদি একজন নিচের এ কথা বলে সে কি মুমিন, “আমি জানি যে কাবা সত্য এবং এটা আল্লাহর ঘর কিন্তু আমি জানিনা যে এটাই সেটা কি না [ আরেকটা বর্ননায়ঃ এটি তা কিনা যা মক্কায় আছে বা খুরাসানে যা আছে তা]”। সে উত্তর দিল, “সে একজন মুমিন”। [সুফিয়ান আছ-ছাওরি বলেন, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহর দৃষ্টিতে সে একজন কাফির, যতক্ষণ না সে জানে যে মক্কায় অবস্থিত এটাই কাবা”]। তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হল যে, যদি সে নিচের কথা বলে সে কি একজন মুমিন, ‘আমি জানি যে মুহাম্মাদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সত্য এবং তিনি একজন রাসূল [অন্য বর্ননায়ঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দিল্লাহ একজন নবী] কিন্তু আমি জানি না যে তিনি কিনা যিনি কুরাইশ থেকে মদিনায় এসেছিলেন বা অন্য মুহাম্মাদ [অন্য বর্ননায়ঃ একজন ব্যক্তি যে খুরাসানে ছিল] [অন্য বর্ননায়ঃ আমি জানিনা যে তার কবর মদিনায় আছে কি নাই]”। সে জবাব দিল, “সে একজন মুমিন”। [সুফিয়ান আছ-ছাওরি বলেন, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহর চোখে সে একজন কাফির”]। [আব্দুল্লাহ ইবনে আল-ইমাম আহমাদ, আল-খাল্লাল, এবং আল-লালিকাই থেকে বর্ণিত]। আল-হুমাইদি এবং ইমাম আহমাদ উভয়ে এ ঘটনার প্রেক্ষিতে মন্তব্য করেন যে, “যে এটা বলে সে কুফরী করেছে” [আল-লালিকাই]। এও বলা হয়ে থাকে যে তার উত্তরের কারণে উত্তরদানকারীকে তাওবাহ করতে বাধ্য করা হয়েছিল [আল-লালিকাই]। (৬)
অজ্ঞতার অজুহাতের (আল-ওযর বিল জাহল) (৭) ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ধারণা ঈমানের এ ভুল ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত যে ঈমান বাড়ে না বা কমে না এবং শুধু অন্তর ও মুখের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে অপরিবর্তনীয়(শুধু অন্তর ও মুখের মাধ্যমে স্বীকৃতি) থাকে। যারা এ বিশ্বাস রাখত তারা এ বাস্তবতার সম্মুখীন হত যে, মানুষের বিভিন্ন পরিমাণে এ ব্যাপারে সচেতনতা, জ্ঞান এবং স্বীকৃতি আছে যা নির্দেশ করে যে ঈমান বাড়ে ও কমে। (৮) তাই কিছু মুরজিয়া এ বলে জবাব দিল যে, ঈমান হল আল্লাহ ও তার রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে অনির্দিস্ট স্বীকৃতি –অন্তর ও মুখ দ্বারা- কোন বিস্তারিত বর্ননা ছাড়া। তাই যদি কেউ স্বীকৃতি দিত যে মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল কিন্তু তাঁর সম্পর্কে বা তাঁর দ্বীন সম্পর্কে কিছুই জানে না, তারপরেও সে মুমিন বলে মনে করা হত, যদিও এ তথ্য ছিল প্রচলিত, সুপরিচিত এবং সহজে শিক্ষণীয় ও সুলভ, এবং এমনকি যদি ঐ ব্যক্তির এই প্রয়োজনীয় এবং প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করার প্রচুর সময় ও সুযোগ ছিল!
অজ্ঞতার অজুহাতের ব্যাপারে ধারণা, যা প্রত্যেক বিষয়, প্রত্যেক পরিবেশ এবং প্রত্যেক ব্যক্তিকে দিকনির্দেশ করে, অজ্ঞতার প্রাথমিক ভুল ধারণার কারণে এ অজুহাত প্রদান করে এবং এভাবে তার জন্য দ্বীনের মৌলিক জ্ঞান অর্জনের চেয়ে অজ্ঞ থাকা অধিক সুবিধাজনক হয়। আশ-শাফি (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন) বলেন, “যদি অজ্ঞ ব্যক্তিকে তার অজ্ঞতার কারণে মাফ করে দেওয়া হত, তাহলে অজ্ঞতা জ্ঞানের চেয়ে ভালো হত, কারণ অজ্ঞতা তাকে দায়িত্বের বোঝা থেকে অব্যাহতি দিবে এবং বিভিন্ন শাস্তি থেকে তার অন্তরকে উপশম করবে। এভাবে দাসের জন্য কোন অজ্ঞতার অজুহাত নাই, যখন তার কাছে পৌঁছে যায়[প্রমাণ] এবং সামর্থ্য থাকে, {যাতে রাসূলগণের পরে আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ করার মত কোন অবকাশ মানুষের জন্য না থাকে} [আনি-নিসাঃ১৬৫]”। [আল-মানসুর ফিল-ক্কাওয়াইদ]
আশ-শাফি ব্যাখ্যা করেন যে একটা সাধারণ জ্ঞান প্রচলিত আছে যে, “অজ্ঞ হওয়ার কারণে কোন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে মাফ করা হবেনা, যেমন প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, মানুষের উপরে আল্লাহ রমজানে যে সিয়াম ফরয করেছেন, তাদের সম্পদের উপরে যাকাত এবং তাদের কে যে ব্যাভিচার, খুন, চুরি এবং মদ থেকে নিষেধ করা হয়েছে এবং একই ভাবে এটা বিবেচ্য যে, ইবাদতকারীদের বোঝা ও শেখার দায়িত্ব এবং তাদের থেকে বিতরণ এবং তাদের সম্পদ এবং আল্লাহ তাদেরকে যা থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে দায়ী থাকতে হবে। এ জ্ঞান আল্লাহর কিতাবে স্পষ্টভাবে পাওয়া যায় এবং মুসলিমদের মধ্যে ব্যাপক ভাবে প্রচলিত। তাদের সাধারণ লোক এটা প্রচার করে তাদের পূর্ববর্তী সাধারণ মুসলিমদের থেকে। তারা এটা রাসুলুল্লাহ থেকে বর্ননা করে। তারা এর বর্ননায় বা এর ফরয হওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য করে না। এই সাধারণ জ্ঞান ভুলভাবে বর্ননা করা বা ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া যাবেনা এবং এব্যাপারে অনৈক্য সম্ভব নয়”। [আর-রিসালাহ]
আশ-শাফির কথাগুলো ইসলামের প্রকাশ্য আইন গুলোর নির্দেশনা দেয়, তাহলে তাওহীদের ফরযিয়াত আরও কত বেশি পরিষ্কার?
আল-বারবারি (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন – মৃত্যু ৩২৯ হিজরী) বলেন, “ উমার ইবনে খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহ) বলেন, ‘তার জন্য কোন ক্ষমা নাই যে পথ নির্দেশনা মনে করে পাপ(বক্রতা) করে অথবা বক্রতা মনে করে পথ নির্দেশনাকে ত্যাগ করে, কারণ বিষয়গুলো পরিষ্কার হয়ে গেছে, প্রমাণ দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে এবং অজুহাত শেষ হয়ে গেছে’”। [শারহে আস-সুন্নাহ]
আলেমগণ কুরআন থেকে অনেক আয়াত উল্ল্যেখ করেন এটা প্রমাণ করার জন্য যে, কাউকে মুসলিম মনে করা হবে না যখন সে অজ্ঞতা বশত তাওহীদ ও ঈমানের ভিত্তিকে মুছে দেয় এবং ফিতরাহ ও কুরআনের বিরোধিতা করে। {একদলকে পথ প্রদর্শন করেছেন এবং একদলের জন্যে পথভ্রষ্টতা অবধারিত হয়ে গেছে। তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করেছে এবং ধারণা করে যে, তারা সৎপথে রয়েছে} [আল-আরাফঃ৩০]। {বলুনঃ আমি কি তোমাদেরকে সেসব লোকের সংবাদ দেব, যারা কর্মের দিক দিয়ে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত? তারাই সে লোক, যাদের প্রচেষ্টা পার্থিব জীবনে বিভ্রান্ত হয়, অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্ম করেছে। তারাই সে লোক, যারা তাদের পালনকর্তার নিদর্শনাবলী এবং তাঁর সাথে সাক্ষাতের বিষয় অস্বীকার করে। ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়। সুতরাং কেয়ামতের দিন তাদের জন্য আমি কোন গুরুত্ব স্থির করব না।} [আল-কাহাফঃ১০৩-১০৫]। {আর মুশরিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দেবে, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পায়, অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেবে। এটি এজন্যে যে এরা জ্ঞান রাখে না।} [আত-তাওবাঃ৬] । {আহলে-কিতাব ও মুশরিকদের মধ্যে যারা কাফের ছিল, তারা প্রত্যাবর্তন করত না, যতক্ষণ না তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আসত। অর্থাৎ আল্লাহর একজন রসূল, যিনি আবৃত্তি করতেন পবিত্র সহীফা,যাতে আছে, সঠিক বিষয়বস্তু।} [আল-বাইয়িনাহঃ১-৩]। {আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ আদৌ তারা ঈমানদার নয়। তারা আল্লাহ এবং ঈমানদারগণকে ধোঁকা দেয়। অথচ এতে তারা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না অথচ তারা তা অনুভব করতে পারে না। তাদের অন্তঃকরণ ব্যধিগ্রস্ত আর আল্লাহ তাদের ব্যধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুতঃ তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ আযাব, তাদের মিথ্যাচারের দরুন। আর যখন তাদেরকে বলা হয় যে, দুনিয়ার বুকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করো না, তখন তারা বলে, আমরা তো মীমাংসার পথ অবলম্বন করেছি। মনে রেখো, তারাই হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী, কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করে না।আর যখন তাদেরকে বলা হয়, অন্যান্যরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আন, তখন তারা বলে, আমরাও কি ঈমান আনব বোকাদেরই মত! মনে রেখো, প্রকৃতপক্ষে তারাই বোকা, কিন্তু তারা তা বোঝে না।} [আল-বাকারাঃ৮-১৩]। {মুমিনগণ! তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর তোমাদের কন্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উঁচুস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরূপ উঁচুস্বরে কথা বলো না। এতে তোমাদের কর্ম নিস্ফল হয়ে যাবে এবং তোমরা টেরও পাবে না।} [আল-হুজুরাতঃ২]। (৯)
অতএব, অজ্ঞতার কারণে কোন অজুহাত নেই মুসলিম দাবীদারদের জন্য যারা এ সাক্ষ্য দেয় যে -আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল- এর অর্থ এবং তাৎপর্য (তাওহীদ চর্চার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি আন্তরিকতা এবং তাঁর প্রতি আত্মসমর্পন তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অনুসরণের মাধ্যমে) এর ব্যাপারে। (১০) বাকি খুঁটি গুলোর ক্ষেত্রে, একজন নতুন মুসলিম সেসবের মধ্যে কিছু ব্যাপারে অজ্ঞ থাকতে পারে, কিন্তু সাময়িক অবস্থার প্রেক্ষিতে তা ক্ষমা যোগ্য, কারণ সে জ্ঞান অর্জন করতে বাধ্য যাতে সে এই অজ্ঞতা দূর করতে পারে, কেননা ইসলাম ভঙ্গের অন্যতম কারণ হল, যে বিষয়ে আলেমগণ বলেছেন যে, “না জানার মাধ্যমে বা আমল না করার মাধ্যমে আল্লাহর(তায়ালা) দ্বীন থেকে ঘুরে যাওয়া”। প্রমাণ হল আল্লাহর এ বানী, {যে ব্যক্তিকে তার পালনকর্তার আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ দান করা হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে যালেম আর কে? আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব।} [আস-সাজদাহঃ২২] [নাওয়াকিদ আল-ইসলাম – ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আব্দিল-ওয়াহহাব]।
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আব্দিল-ওয়াহহাব (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন) আরও বলেন, “তুমি যা উল্ল্যেখ করেছ…তোমার সন্দেহ এই তাগুতগুলো এবং তাদের অনুসারীর অবস্থার ব্যাপারে এবং তাদের উপর প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কিনা, এটা তো আশ্চর্যের বিষয়! তোমার কিভাবে সন্দেহ থাকে যখন আমি এটা বার বার পরিষ্কার করে দিয়েছি? ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয়নি যে একজন নও-মুসলিম এবং যে ব্যক্তি যাযাবর ভুমিতে লালিত পালিত হয়েছে অথবা বিষয়টি সন্দেহযুক্ত…এ ক্ষেত্রে, তাকে তাকফির করা যাবে না, যতক্ষণ না তাকে এ বিষয়ে জানানো হয়। যেহেতু, দ্বীনের মূলনীতি হচ্ছে, আল্লাহ তাঁর কিতাবে পরিষ্কার ও ব্যাখ্যা করেছেন, তখন আল্লাহর দেওয়া প্রমাণ হল তাঁর কুরআন, তাই যার কাছে কুরআন পৌঁছেছে তাঁর কাছে প্রমাণও পৌঁছেছে”। [আর-রাসাইল আশ-শাখসিয়াহ]
 মুরজিয়াদের মতে মুনাফিকির অস্তিত্ব নেই
কিছু মুরজিয়াদের দৃষ্টিতে মুনাফিকির কোন অস্তিত্ব নাই, বড় আকারেও নাই বা ছোট আকারেও নাই।
সুফিয়ান আছ-ছাওরি (আল্লাহ তাকে রহম করুন) বলেন, “আমাদের ও মুরজিয়াদের মধ্যে পার্থক্য তিনটা বিষয়ে। আমরা বলি ঈমান হল মৌখিক স্বীকৃতি ও আমল, অপরদিকে তারা বলে এটা আমল ছাড়াই মৌখিক স্বীকৃতি। আমরা বলি যে ঈমান বাড়ে ও কমে, অপরপক্ষে তারা বলে যে এটা বাড়ে না বা কমে না। আমরা বলি মুনাফিকির অস্তিত্ব আছে, তারা বলে মুনাফিকির কোন অস্তিত্ব নাই”। [সিফাত আন-নিফাক – আল-ফিরিয়াবি] (১১)
আল-হাসান আল-বাসরি (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন – মৃত্যু ১১০ হিজরী) কে ঐসব লোকের ব্যাপারে বলা হয়েছিল যারা বলে যে মুনাফিকির অস্তিত্ব নাই এবং যারা মুনাফিকিকে ভয় করেনা, তিনি বলেন, “আল্লাহর কসম, আমি মুনাফিকি থেকে মুক্ত এটা জানা আমার কাছে এই পৃথিবী সোনা দিয়ে ভরে দিলেও তার থেকে বেশি মূল্যবান হত”[আস-সুন্নাহ আল-খাল্লাল]। তিনি আরও বলেন, “এ রকম মুমিন কখনই ছিল না বা হবে না যে সে মুনাফিকিকে ভয় করেনা। এবং এ রকম মুনাফিক কখনই ছিল না বা হবে না যে সে মুনাফিকিকে ভয় করে। যে তার নিজের জন্য মুনাফিকিকে ভয় করে না সে একজন মুনাফিক” [সিফাত আন-নিফাক – আল-ফিরিয়াবি]।
আইয়ুব আস-সিখতিয়ানি (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন – মৃত্যু ১৩১ হিজরী) এর সামনে এক মুরজিয়া বলল, “শুধুমাত্র কুফর এবং ঈমান আছে”, এটা নির্দেশ করল যে কোন মুনাফিকি নাই। আইয়ুব তাকে বললেন, “চলে যাও এবং কুরআন পড়! প্রতিটি আয়াত যা মুনাফিকি সম্পর্কে বলে, আমি ভয় করি যে তা আমার উপরে পড়ে”! [আল-ইবানাহ আল-কুবরা – ইবনে বাত্তাহ]
হুযায়ফা ইবনে আল-ইয়ামান (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) ঐসব দলের ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন যেগুলো ভবিষ্যতে আসবে। তিনি বলেন, “একটা দল বলবে, ‘আমরা আল্লহতে বিশ্বাসী এবং সমান ভাবে ফেরেশতাতেও বিশ্বাসী। আমাদের মধ্যে কোন কাফির বা মুনাফিক নাই’। তাদেরকে দাজ্জালের সাথে একত্রিত করা আল্লাহর জন্য উপযোগী”। [আস-সুন্নাহ – আল-খাল্লাল]
ইবনে মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহ) বলেন, “তারা বলে, ‘আমাদের মধ্যে কোন কাফির বা মুনাফিক নাই’। আল্লাহ তাদের পা ভেঙ্গে দিন”।[আল-ইবানাহ আল-কুবরা – ইবনে বাত্তাহ]
ইমাম আহমাদ (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন) মুনাফিকির আলামত সমূহের মধ্যে মুরজিয়ারা যে বিষয়গুলোকে অস্বীকার করে তা তালিকাভুক্ত করেছেন; তারপর তিনি বলেন, “সতর্ক হও যে, মুরজিয়ারা তোমাকে তোমার দ্বীনের বিষয়গুলো থেকে পিছলিয়ে দিবে” [আস-সুন্নাহ – আল-খাল্লাল]।
মুরজিয়ারা মুনাফিকিকে দুইটা উপায়ে অস্বীকার করে। একদল -কারামিয়াহ- দাবী করে যে ঈমান হল শুধু মৌখিক স্বীকৃতি, যদিও তার অন্তরে বড় মুনাফিকি থাকে। তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সময়ের মুনাফিকদেরকে মুমিন মনে করে, যদিও তারা বিশ্বাস করে যে ঐ মুমিনরা (মুনাফিক) জাহান্নামে যাবে। অন্য দল দাবী করে যে, ঈমান বাড়ে না বা কমে না। তারা ছোট মুনাফিকিকে অস্বীকার করে বলে যে, যেহেতু এর অস্তিত্ব একজনের ঈমানকে কমিয়ে দেয়। যাহোক, মুনাফিকির অস্তিত্ব- ছোট ও বড় উভয়- কুরআন এবং সুন্নাহ থেকে বর্নিত পরিষ্কার বিষয়। সুরা আল-মুনাফিকিন ও আত-তাওবা ছাড়াও এমন অনেক আয়াত ও হাদিস আছে যেগুলো এ বিষয়ে বর্ননা দেয়।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “মুনাফিকের উদাহরণ হল দুইটি ভেড়ার পালের মধ্যবর্তী একটা দ্বিধাগ্রস্ত মেষ শাবকের মত। এটা একসময় এই পালের সাথে যায়, আবার অন্য সময় অন্য পালের সাথে যায় [ইবনে উমার থেকে মুসলিম বর্ননা করেন]। অন্য বর্ননায়, “সে জানেনা যে কোন পালকে অনুসরণ করতে হবে”[সহীহঃ ইবনে উমার থেকে আন-নাসাই বর্ননা করেছেন] এ হাদিস নির্দেশ করে যে মুনাফিকরা ঈমান ও কুফরের মাঝামাঝি অংশে বিচরণ করে।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরও বলেন, “ নিশ্চয়, আমার উম্মাতের মুনাফিকদের অধিকাংশই এর ক্কুররাতে আছে’”[হাসানঃআব্দুল্লাহ ইবনে আমর থেকে ইমাম আহমাদ বর্ননা করেছেন]। আল-বুখারি (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন) বলেন যে, এই মুনাফিক ক্কুররার মধ্যে আছে, “তাদের ক্কুররা যারা আল্লাহর গুণাবলীকে মুছে দেয়, জাহমিয়ারা, যারা ভ্রান্ত আকাঙ্ক্ষার মানুষ, এছাড়া অন্যরাও”[খাল্ক আফ’আল আল-ইবাদ]। এই ক্কুররা শব্দটা সাহাবাদের সময় দ্বীনের উলামাদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হত, যেসব আলেম কুরআন মুখস্ত, তিলাওয়াত এবং বুঝার জন্যে বিখ্যাত ছিলেন, হাদিসে এসেছে যে, “ক্কুররাগণ- ছোট হোক বা বড়- উমরের শুরা পরিষদের সদস্য ছিলেন” [সহীহ আল-বুখারি]।
রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
“আমি আমার উম্মাহর জন্য সবচেয়ে বেশি ভয় করি বাকপটু মুনাফিকদের নিয়ে”
[সহীহঃ উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহ) থেকে ইমাম আহমাদ বর্ননা করেছেন]
এই বাকপটু মুনাফিকরা বিভ্রান্তিকর আলেমদের মধ্য থেকে আসে যা উপরের হাদিসে বর্ননা করা হয়েছে। আবু যার (রাদিয়াল্লাহু আনহ) বলেন যে যখন তিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে হাঁটছিলেন, তিনি তিনবার বললেন, “এমন কিছু আছে যা আমি আমার উম্মাতের জন্য দাজ্জালের থেকেও বেশি ভয় করি”। আবু যার (রাদিয়াল্লাহু আনহ) জিজ্ঞাসা করলেন, “কি এমন জিনিস আছে যাকে আপনি উম্মাতের জন্য দাজ্জালের থেকেও বেশি ভয় করেন”? তিনি জবাব দিলেন, “বিভ্রান্তকারী ইমামগণ”। [সহীহঃআবু যার (রাদিয়াল্লাহু আনহ) থেকে ইমাম আহমাদ বর্ননা করেন]।
বিদআতের অনুসারীদের মধ্যে ছোট মুনাফিকির অনেক বৈশিষ্ট্য আছে –যা একটি কবীরা গুনাহ- এছাড়াও তাদের মধ্যে অনেকেই পরিপূর্ণ মুনাফিক এবং ধর্মদ্রোহী। এটা এ কারণে যে বিদআতের গোড়া হল কুফর এবং এটা কুফরের প্রবেশ পথ। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন) বলেন, “বিদায়া’ কুফর থেকে উদ্গত, কারণ কোন আবিষ্কৃত মত নাই সেটা ছাড়া যেটা কুফরীর শাখাগুলোর আরও একটি শাখা উন্মুক্ত করে দেয়”[মিনহাজ আস-সুন্নাহ]। বিদআত পবিত্র ইসলাম ও ভয়ানক কুফরীর মাঝে অবস্থান করে…মুনাফিকির আরেকটা ধুসর এলাকা।
আল-ফুদাইল ইবনে লাইয়াদ (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন) বলেন, “যখন আমি সুন্নাহ অনুসারীদের থেকে কাউকে দেখি, তখন মনে হয় যেন রাসুলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবীদের থেকে কাউকে দেখি এবং যখন বিদআতের অনুসারীদের মধ্য থেকে কাউকে দেখি, তখন মনে হয় যেন মুনাফিকদের মধ্য থেকে কাউকে দেখি”[শারহে আস-সুন্নাহ – আল-বারবাহারি]। তিনি আরও বলেন, “মুনাফিকির একটা লক্ষণ হল যে, কোন একজন মানুষ কোন বিদআতির সাথে হাঁটবে এবং বসবে”[আল-ইবানাহ আল-কুবরা – ইবনে আল-বাত্তাহ]। আবু কিলাবা (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন – মৃত্যু ১০৪ হিজরী) বলেন, “আমি বিদআতের অনুসারীদের জন্য মুনাফিকি ছাড়া কোন উদাহরণ খুজে পাইনি, কারণ আল্লাহ মুনাফিকিকে বর্ননা করেন পরস্পরবিরোধী কথা ও পরস্পরবিরোধী কাজ হিসেবে”। [আস-সুন্নাহ – আল-খাল্লাল]
ইবনে তাইমিয়্যাহ (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন) আরও বলেন, “যখন বিদআতিরা শক্তি অর্জন করে, তখন তারা কাফিরদের মত হয়ে যায় মুমিনদেরকে হত্যা করা, হালাল বলার ক্ষেত্রে এবং তাদেরকে তাকফির করার ক্ষেত্রে, যেমন খাওয়ারেজি, রাফিদাহ, মুতাযিলাহ, জাহমিয়াহ এবং অন্যান্য শাখা যা করে। তাদের মধ্যে কিছু যুদ্ধ করে যখন তারা শক্তিশালী দলে পরিণত হয়, খাওয়ারেজি ও যায়েদীদের মত, অন্যরা তাদের বিরোধীদের হত্যা করার চেষ্টা করে ক্ষমতার মাধ্যমে বা প্রতারণার মাধ্যমে। যখন তারা দুর্বল তখন তারা মুনাফিকদের মত একইরকম। তারা মুনাফিকি ও ধোঁকা ব্যবহার করে মুনাফিকদের মতই। এটা এ কারণে যে বিদআত কুফর থেকে উদ্গত, কারণ যখন মুশরিকীন ও আহলে কিতাবরা শক্তি অর্জন করে, তারা মুমিনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং যখন তারা দুর্বল তখন তারা (মুনাফিক), তাদের (মুমিন) সাথে মুনাফিকির মত আচরণ করে”। [আল-ফাতওয়া আল-কুবরা]
অনুরুপভাবে, সাল্লাম ইবনে আবি মুতি (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন – মৃত্যু ১৭৩ হিজরী) বলেন যে, সালাফদের আলেম “আইয়ুব (আস-সিখতিয়ানি) সকল বিদআতীদেরকে খারেজী হিসেবে গণনা করতেন; তিনি বলতেন, ‘খারেজীরা নামে আলাদা হয় কিন্তু তরবারীতে একই হয়’”। [আল-লালিকাই]
এবং বিদআতীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার বিধান সুপরিচিত যখন তারা অস্ত্র হাতে নেয় । চতুর্থ ন্যায়পরায়ণ খালিফাহ আলি ইবনে আবি তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহ) এর সুন্নাহ ছিল যে তিনি খারেজীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। তিনি ইসলামের দাবীদারদের উপর রাসুলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুন্নাহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যাদের অন্তর বিদআত ও মুনাফিকিতে রোগাগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিল।
খারেজীদের প্রতিষ্ঠাতা (যুল-খুওয়াসিরাহ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলেছিল, “হে মুহাম্মাদ, ন্যায়বিচার কর”! উমার ইবনুল-খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহ) বললেন, “হে রাসূল, আমাকে এই মুনাফিককে খুন করতে দিন”। তিনি জবাব দিলেন, “আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি মানুষের এ কথা থেকে যে আমি আমার সাহাবীকে হত্যা করি। এ ব্যক্তি এবং তার সাথীরা কুরআন পড়ে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী পার হয়না। তারা দ্বীন থেকে এভাবে বের হয়ে যাবে যেভাবে তীর ধনুক থেকে বের হয়”। [জাবির ইবনে আব্দিল্লাহ থেকে মুসলিম বর্ননা করেছেন]। এখানে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহ) এর ঐ মানুষকে মুনাফিক বলার সমালোচনা করেননি, বরং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুনাফিকের একটা বৈশিষ্ট্য বর্ননা করে উমারকে (রাদিয়াল্লাহু আনহ) সমর্থন করেছেনঃ ধর্মীয় কাজ যার কোন বাস্তবতা নাই অন্তরে – কুরআন তিলাওয়াত যা কণ্ঠনালী পার হয়না। তখন তিনি উমারকে (রাদিয়াল্লাহু আনহ) বাঁধা দিলেন এ ভ্রান্ত দলের প্রতিষ্ঠাতা কে মারতে, এ কারণ দেখিয়ে যা তিনি বিখ্যাত মুনাফিক আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই (ইবনে সালুল) কে হত্যা না করার সময় বলেছিলেন, যে বলেছিল, “যদি আমরা মদিনাতে ফিরে যায়, তাহলে বেশি সম্মানিতরা বেশি লাঞ্ছিতদেরকে বিতাড়িত করবে”। যখন উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহ) ইবনে সালুলকে হত্যার অনুমতি চাইলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে তা করতে নিষেধ করলেন “যাতে মানুষ না বলে যে মুহাম্মাদ তাঁর সাহাবীদেরকে হত্যা করে” [জাবির ইবনে আব্দিল্লাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহ) হতে বুখারি ও মুসলিম বর্ননা করেছেন]। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “তারা (খারেজী) ইসলামের মানুষদেরকে হত্যা করবে কিন্তু মূর্তিপূজারীদেরকে একাই ছেড়ে দিবে। যদি আমি ঐ সময়ে পৌঁছাই, আমি তাদেরকে হত্যা করব (যতক্ষণ না তারা বিলুপ্ত হয়ে যায়) যেভাবে আদ জাতি ধ্বংস হয়েছিল” [আবু সাইদ আল-খুদরি থেকে আল-বুখারি ও মুসলিম বর্ননা করেছেন]।
উপরের হাদিসটি দেখায় যে মুনাফিকি, বিদআত এবং তাদের সাধারণ উৎপত্তিস্থল একই। শেষের বর্ননাটি আরও দেখায় যে খারেজীদের বিরুদ্ধে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুন্নাহ কি ছিল।
তারপরেও, আধুনিক যুগের কিছু মুরজিয়ারা দ্বিধাগ্রস্ত। তারা ভাবে যে জিহাদকে পরিপূর্ণ ভাবে ছেড়ে দেওয়া মুনাফিকির একটি অকাট্য বৈশিষ্ট্য, কেননা বর্তমান যুগের মুনাফিকরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং রণক্ষেত্র প্রতিরক্ষা করে, এ কারণে তাদেরকে (মুরজিয়াদের) মুনাফিক মনে করা যাবেনা। তারা ভুলে যায় যে, যুল খুওয়াইসিরা এবং আব্দুল্লাহ ইবনে সালুল উভয়ে ভয়ংকর যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, খারেজীরা লড়াই করেছিল তাদের ভ্রষ্টতার জন্য এবং বেদুইন মুনাফিকরা লড়াই করেছিল মুসাইলামার পক্ষে মুরতাদদের যুদ্ধে এবং যাকাত অস্বীকারকারীদের পক্ষে। মুনাফিকরা যুদ্ধ ছেড়ে দেয় যখন তারা পরিণামে কোন পার্থিব অর্জন পায় না, যখন এটা মুনাফিকি সুবিধাকে সাহায্য করে না এবং যখন আকাংখিত পরিশ্রম তাদের জন্য অসহ্য হয়ে যায়।
হুযাইফা (রাদিয়াল্লাহু আনহ) কোন একজনের প্রার্থনা শুনলেন, “হে আল্লাহ, মুনাফিকদের ধ্বংস করে দাও”। হুযাইফা (রাদিয়াল্লাহু আনহ) তাকে বললেন, “যদি তারা ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে তুমি তোমার শত্রুদের উপর প্রতিশোধ নিতে পারবে না” [আস-সুন্নাহ আল-খাল্লাল]।
এটা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ঐ হাদিস অনুসারে, “নিশ্চয় আল্লাহ এই দ্বীন কে উপকৃত করবেন ঐসব লোকের মাধ্যমে যাদের দ্বীনের সাথে কোন সম্পর্ক নাই [হাসানঃআবু বাকরাহ থেকে ইমাম আহমাদ বর্ননা করেছেন]। আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহ) বলেন, “ আমরা রাসুলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাথে একটা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। তিনি(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একজনের সম্পর্কে বললেন যে মুসলিম দাবী করে, ‘এ লোক জাহান্নামের অধিবাসী’। যখন যুদ্ধ শুরু হল, লোকটি আহত না হওয়া পর্যন্ত চরমভাবে লড়াই করল। তখন বলা হল, “হে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), যে লোক কে আপনি জাহান্নামের অধিবাসী বলেছিলেন সে আজকে চরমভাবে লড়াই করেছে এবং মৃত্যু বরণ করেছে’। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “সে জাহান্নামে গেছে”। কিছু ব্যক্তি দ্বিধায় পতিত হল। যখন তাদের এ অবস্থা ছিল, তখন তাদেরকে বলা হল, “সে মারা যায়নি। সে মারাত্মক আঘাত পেয়েছিল এবং যখন রাত আসল, সে আঘাতের ব্যথা সহ্য করতে পারল না, তাই সে নিজেকে হত্যা করল”। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ বিষয়ে জানতেন এবং বললেন, ‘আল্লাহু আকবর! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আমি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল’। তখন তিনি বিলালকে মানুষের মাঝে ঘোষণা দিতে বললেন যে, ‘নিশ্চয়, কেউ জান্নাতে যাবে না মুসলিম আত্মা ছাড়া’ এবং নিশ্চয় আল্লাহ ফাজির ব্যক্তির মাধ্যমে তার দ্বীনের উপকার করেন’” [আল-বুখারি ও মুসলিম বর্ননা করেছেন]। ফাজির হল সে ব্যক্তি যে ‘ফুজুর’ করে, যা মুনাফিকদের অন্যতম একটা নিদর্শন, যেভাবে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাদিসে এসেছে, “যদি চারটা বৈশিষ্ট্য কারও মধ্যে পাওয়া যায় তাহলে সে পরিপূর্ণ মুনাফিক, আর যদি কোন একটা বৈশিষ্ট্য থাকে তাহলে তার মধ্যে মুনাফিকির গুণ থাকবে, যতক্ষণ না সে তা বর্জন করবে। যদি সে মিথ্যা কথা বলে, আমানতের খিয়ানত করে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে এবং তর্ক করলে ফাজার (ফুজুর) করে” [আব্দিল্লাহ ইবনে উমার হতে আল-বুখারি ও মুসলিম বর্ননা করেছেন]। ইবনে রজব (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন) বলেন, “ফুজুর বলতে বোঝায় যে সে ইচ্ছাকৃত ভাবে সত্য হতে সরে যায় এমন পর্যায়ে যে, সত্য মিথ্যা হয়ে যায় এবং মিথ্যা সত্য হয়ে যায়। এটা ঐসব ঘটনা থেকে আসে যে মিথ্যা ধাবিত করে তার দিকে, যে সম্পর্কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “মিথ্যা থেকে বেঁচে থাক, কেননা মিথ্যা ফুজুরের দিকে ধাবিত করায় এবং ফুজুর জাহান্নামে নিয়ে যায়’” [জামি আল-উলুম অয়াল হিকাম]। আন-নববী ফাজারের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, “এর মানে হল সে সত্য থেকে সরে যায় এবং ভ্রান্ত ও মিথ্যা কথা বলে” [শারহে সহীহ মুসলিম]।
উপরের বর্ননা নির্দেশ করে যে , মুনাফিকরা জিহাদে অংশ নিতে পারে, এমনকি কিছু যুদ্ধে বিজয়ী পর্যন্ত হতে পারে।
শাইখুল-ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেন, “মুনাফিকরা, যারা বলে, ‘{আমরা আল্লাহ এবং শেষ দিবসে বিশ্বাস করি} [আল-বাকারাঃ৮] মুমিন নয় যারা বাহ্যিক ভাবে মুমিন। তারা মানুষের সাথে সালাত আদায় করে। তারা হজ্জ পালন করে এবং আক্রমণাত্মক যুদ্ধে অংশ নেয়। মুসলিমরা এবং মুনাফিকরা একে অপরের মধ্যে বিয়ে করে এবং একে অপরের উত্তরাধিকারী হয়’”। [মাজমু আল-ফাতওয়া]
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আব্দিল ওয়াহহাব বলেন, “রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সময় মুনাফিকরা জিহাদে তাদের জান ও মাল দিয়ে অংশগ্রহণ করত, রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাথে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করত এবং তাঁর সাথে হজ্জ পালন করত”। [আদ-দুরার আস-সানিয়্যাহ]
এছাড়াও মুনাফিকদের তাবুক ও বুনিল-মুস্তালিক যুদ্ধে অংশগ্রহণের ব্যাপারে কুরআনের অনেক আয়াত নাযিল হয় যেমন, {আর যদি তুমি তাদের কাছে জিজ্ঞেস কর, তবে তারা বলবে, আমরা তো কথার কথা বলছিলাম এবং কৌতুক করছিলাম। আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে, তাঁর হুকুম আহকামের সাথে এবং তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? ছলনা কর না, তোমরা যে কাফের হয়ে গেছ ঈমান প্রকাশ করার পর। তোমাদের মধ্যে কোন কোন লোককে যদি আমি ক্ষমা করে দেইও, তবে অবশ্য কিছু লোককে আযাবও দেব। কারণ, তারা ছিল গোনাহগার।} [আত-তাওবাঃ৬৫-৬৬]। {যারা মিথ্যা অপবাদ রটনা করেছে, তারা তোমাদেরই একটি দল। তোমরা একে নিজেদের জন্যে খারাপ মনে করো না; বরং এটা তোমাদের জন্যে মঙ্গলজনক। তাদের প্রত্যেকের জন্যে ততটুকু আছে যতটুকু সে গোনাহ করেছে এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে, তার জন্যে রয়েছে বিরাট শাস্তি।} [আন-নুরঃ১১]। শেষের আয়াতটি ও সুরা নুরের অন্যান্য আয়াত ঐসব ঘটনা তুলে ধরেছে যেখানে মুনাফিকরা উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) এর বিরুদ্ধে অপবাদ প্রচার শুরু করেছিল। এটা ঘটেছিল বনিল-মুস্তালিক যুদ্ধের প্রাক্বালে।
জিহাদের দাবীদারদের ইরজা
যদি কেউ শামের যুদ্ধক্ষেত্র নিয়ে গবেষণা করত, তবে সে দেখত যে দাওলাতুল ইসলামের আনুষ্ঠানিক বিস্তৃতির পূর্বে সামরিক দলগুলো চার ভাগে বিভক্ত ছিলঃ
১) আন্তর্জাতিক এজেন্ডা নিয়ে ইসলামী দলগুলো
২) জাতীয়তাবাদী এজেন্ডা নিয়ে “ইসলামী” দলগুলো
৩) ইসলামী এজেন্ডা নিয়ে জাতীয়তাবাদী দলগুলো
৪) গণতান্ত্রিক এজেন্ডা নিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলো
প্রথম দলটি নির্দেশ করে যে তারা মুহাজিরদের গ্রহণ করতে আগ্রহী এবং তাদের উপস্থিতিতে তারা ভীত ছিল না। দ্বিতীয় ভাগটি প্রত্যেক দলকে একটা ইসলামী এজেন্ডা নির্দেশ করে কিন্তু এর সাথে জাতীয়তাবাদের বিভিন্ন উপাদান ও মাত্রা মিশিয়ে দেয়। তৃতীয় ভাগ প্রত্যেক দলকে জাতীয়তাবাদী এজেন্ডা প্রস্তাব করে এবং তাদের প্রজ্ঞাপনে বিভিন্ন ইসলামী ভাষা ও সংস্কৃতি অনুপ্রেরণা ও সমর্থন হিসেবে ব্যবহার করে; তারা দাবী করে যে তারা ধর্ম নিরপেক্ষ নয়। (১২) দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাগের মধ্যে পার্থক্য মোটামুটি বাহ্যিক, শুধু এটা বাদে যে দ্বিতীয় ভাগের নেতারা সালাফি প্রেক্ষাপট থেকে এসেছে এবং তাদের সৈনিকরা অধিক ধর্মীয় চর্চা প্রদর্শন করে। চতুর্থ ভাগটি ঐসব দলকে নির্দেশ করে যারা ফ্রী সিরিয়ান আর্মি এবং তুরস্ক ভিত্তিক সুপ্রিম মিলিটারি কাউন্সিল এর অন্তর্গত। প্রথম ভাগের বেশিরভাগ যোদ্ধাদের মধ্যে কোন সন্দেহ নাই যে চতুর্থ ভাগের সৈনিকরা মুরতাদ। (১৩) সমস্যা হল দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাগের জন্য যারা ইরজায় আক্রান্ত এবং যারা উভয়ে গোপন সমর্থন(অন্যান্য ভাগের কাছে সুপরিচিত) ও জনসমর্থন পেত আরব সরকারদের থেকে, পশ্চিমা বিশ্ব, তুরস্ক, সিরিয়ান ন্যাশনাল কোয়ালিশান (এসএনছি), এফএসএ, মুসলিম ব্রাদারহুড, সুরুরিয়্যাহ (মূলত মুসলিম ব্রাদারহুড এর সালাফী ভার্সন) এবং সৌদি দরবারী আলেমদের থেকে। আবার ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী দলগুলোর অনেক নেতা ব্যক্তিগত ভাবে এস এন ছি, এফ এস এ এবং মুসলিম ব্রাদারহুড এর সদস্য ছিল যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ সদস্য হওয়া অনানুষ্ঠানিক রাখা হত, তারপরেও অন্যান্যরা তা খুব ভালো ভাবে জানতো। বন্ধু হোক বা শত্রু হোক কেউই এই সম্পর্ক, সমর্থন এবং সদস্যতা অস্বীকার করতে পারত না। সর্বোপরি, এই দলগুলোর অধিকাংশই বিদআত (তাদের মধ্যে কিছু কুফরী পর্যায়ের) দ্বারা আক্রান্ত ছিল কিন্তু তাদের বিদআত কখনই তাদের আনুষ্ঠানিক আকীদা ছিল না। “ইসলামী” দলগুলো সুরুরিয়্যাহ, জামিয়্যাহ(সৌদি দরবারী সালাফী) এবং ইরজা দ্বারা আক্রান্ত ছিল। জাতীয়তাবাদী দলগুলো জাহমিয়্যাহ (চরম ইরজা এবং আল্লাহর গুণাবলী অস্বীকারকারী), ইখওয়ানিয়্যাহ (মুসলিম ব্রাদারহুডের আকীদা), পীরতন্ত্র ও কুবুরিয়্যাহ (কবর পূজারী) দ্বারা আক্রান্ত ছিল।
তখন আসল মুনাফিকি… জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী দলগুলো বলতে লাগল যে, তারা তুরস্ক ভিত্তিক এন এস ছি এবং এফ এস এ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত কিন্তু এস এন ছি এবং এফ এস এ এর নেতাদের থেকে সহযোগিতা নিত, তুরস্ক ভিত্তিক এস এন ছি এবং এফ এস এ এর নেতারা শামে ঐ দলগুলোর প্রধান দপ্তর পরিদর্শন করত এবং এ দলগুলোর নেতারা তুরস্কে এস এন ছি এবং এফ এস এ এর হোটেল গুলো পরিদর্শন করত। এই দলগুলোর নেতারা নিয়মিতভাবে কাতার ও সৌদি আরবে ‘আরব কূটনীতিকদের’ কাছে মেহমান হিসেবে অভ্যর্থনা পেত। তারপরে সব দলগুলো –জাওলানির দল সহ- জানত যে ইসলামী দলগুলোর আরব মুরতাদ সরকারগুলোর সাথে এবং সেই সঙ্গে কূটনীতিক, গোয়েন্দা, মিডিয়া এবং পণ্ডিতদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, যেহেতু এর অনেক কিছু ছিল প্রকাশ্য। এই ভ্রান্ত দলগুলো প্রায়ই দাবী করত যে তারা তাদের সমর্থকদের থেকে নিঃশর্ত সহযোগিতা নিত। ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী দলগুলো আরও দাবী করত যে তারা একে অপরের ভাই এবং এস এন ছি ও এফ এস এ এর সাথে তাদের রাজনৈতিক এবং সামরিক পার্থক্য ছিল। এই ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী দলগুলোর নেতারা অন্তর্নিহিত কুফরী মন্তব্য, বা তার থেকেও খারাপ, কখনও বা স্পষ্ট কুফরী মন্তব্য করত। যখন এর মোকাবেলা করা হত, তারা তাদের কথা ঘুরিয়ে দিত, তাদের পছন্দ মত অর্থে বিকৃত করত অথবা কখনও শারঈ’ যুক্তির মাধ্যমে তাদের কথা রক্ষা করত।
এই বিভিন্ন দলগুলো- যদিও ক্ষমতা রাখে- কখনই তাদের দ্বারা মুক্ত জমিনে আল্লাহর শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা করে নি। বরং তারা শারঈ’ এবং পারস্পরিক কমিটি ও আদালত প্রতিষ্ঠা করল, যারা পরিকল্পনা করল- দুই বছরের বেশি- শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার জন্য কিন্তু তারা হুদুদ কায়েম করত না, সৎ কাজের আদেশ বা অসৎ কাজের নিষেধ করত না, কারণ কমিটি দাবী করল যে তা করার উপযুক্ত সময় এখন না অথবা আদালত জীবনের কিছু নির্দিষ্ট ব্যাপারে শাসন করত (যাতে সাধারণ জনগণের অনুভূতিতে আঘাত না লাগে বা অন্যান্য দলগুলোর স্বার্থের বিরুদ্ধে না যায়)। এই কমিটি ও আদালতগুলো বিভিন্ন ভ্রান্ত পটভূমি থেকে আসা লোক দ্বারা পরিপূর্ণ, যেমন পূর্বে বর্ণিত সুরুরিয়্যাহ, জামিয়্যাহ, মুরজিয়্যাহ, জাহমিয়্যাহ, ইখওয়ান, সুফিয়্যাহ, কুবুরিয়্যাহ এবং এমনকি ধর্মনিরপেক্ষ উকিল, তার থেকেও খারাপ ধর্মনিরপেক্ষ বিচারক যারা কেবল বাথিস্ট সরকার ছেড়েছে কিন্তু কখনই রিদ্দাহ থেকে তওবা করেনি! এই সবগুলোকে – এছাড়াও জিহাদ দাবীদার উলামাদেরকে- একসাথে শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা করতে বলা হয়েছিল…
জাতীয়তাবাদী দলগুলোর উচ্চপদে অনেক পরিমাণ সৈন্য ছিল যারা দিনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করত না বা রমজানে রোজা রাখত না এবং সন্ত্রাসীদের মত অভিযান চালাত মুসলিম জনগন এবং তাদের জান, মাল ও পরিবারের উপর।
তারপর সাহাওয়াত প্রতিষ্ঠিত হল এবং এই মুনাফিক ও ভ্রান্ত বিদআতীরা দাওলাতুল ইসলামের মুহাজির ও আনসারদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিল। তারা এফ এস এ এর সামরিক কাউন্সিল, জামাল মারুফের সিরিয়া রেভুলিউশানারি’স ফ্রন্ট, মার্ক্সবাদী পি কে কে, মিডিয়া এবং আরব তাওয়াগিতের আলেমগণ এর পাশাপাশি থেকে এবং এদেরকে সহযোগিতা নিয়ে তা করে। এমনকি তারা প্রকাশ্য ভাবে আরব তাওয়াগিতকে তাদের সাহায্যের জন্যে ধন্যবাদ জানালো।
তাহলে শামের মুরজি জিহাদের দাবীদাররা কি করেছিল? তারা দাবী করেছিল যে মুনাফিক দলগুলোকে(যারা তাদের মুনাফিকির সাথে বের হয়ে গেছে এবং রিদ্দাহ করেছে) সবচেয়ে প্রবীণ ও ধার্মিক মুহাজির মুজাহিদদের মত গণ্য করতে হবে। মূলত, তারা একটি নতুন ইরজা দাবী করল যে, “আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই (ইবনে সালুল) ও আবু বকর সিদ্দিক (রাদিয়াল্লাহু আনহ) এর ঈমান সমান”, অনুরূপভাবে, ইবনে সালুল যদি আবু বকরের খিলাফাতে বেঁচে থাকত এবং মুরতাদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মুহাজির ও আনসারগণের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিত, তাহলে আস-সিদ্দিক তাঁর এবং ইবনে সালুলের মধ্যে বিচার করার জন্যে একটি স্বাধীন ও পারস্পরিক আদালত প্রতিষ্ঠা করতেন, যাতে এটা বোঝা যেত যে ইবনে সালুল রিদ্দাহ করেছে কিনা, যদিও বিদ্রোহের পূর্বে ইবনে সালুল তার গোটা জীবনে প্রকাশ্য এবং বড় মুনাফিকি করেছে। এর থেকেও খারাপ যে, সেই স্বাধীন ও পারস্পারিক আদালতে মুনাফিকদের থেকে বিচারক থাকত –যে বিনা সন্দেহে ইবনে সালুলকে সম্মান করত- এই শর্তে যে সে ইবনে সালুলের একই গোত্রের অন্তর্গত ছিল না। এই স্বাধীন আদালত এও ঠিক করত যে আস-সিদ্দিক ইবনে সালুলের বিরুদ্ধে কোন অন্যায় করেছেন কি না!
এছাড়াও সাহাওয়াতের পরে, মুনাফিক দলগুলোর প্রতিটি কুফরী কথা এবং কাজ – অনেক ক্ষেত্রে এর আগেও – এর একটা পছন্দ মত অর্থ করা হত, যাতে দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে মুরতাদ সাহাওয়াতের দোসর বিভিন্ন জিহাদের দাবীদারদের সমর্থন করা যেত। যদি তারা বলত, “আমরা গনতন্ত্রের জন্য, একটি নাগরিক রাষ্ট্রের জন্য লড়াই করি এবং দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে আমেরিকার সাহায্য চাই। আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে”। তারা বলে, “সম্ভবত, তারা মনে করে যে গনতন্ত্র হল শুরা এবং একটি নাগরিক রাষ্ট্র পুলিশী রাষ্ট্রের বিপরীত। এবং সম্ভবত, তারা খারেজীদের বিরুদ্ধে, যাদেরকে কিছু আলেম তাকফির করেছে, নিঃশর্ত সমর্থন চায়। এবং সম্ভবত তারা সন্ত্রাসবাদ বলতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ বোঝায়। অবশেষে, তাদের সবাইকে অজ্ঞতার অজুহাতে ক্ষমা করা হয় এবং এটা আবশ্যক যে তাদেরকে পরিপূর্ণ মুসলিম মুজাহিদিন মনে করতে হবে যতক্ষণ না স্বাধীন/পারস্পারিক আদালত প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং যে কেউ তাদেরকে তাকফির করে বা সেরকম মনে করে, সে খারেজী”! পরিশেষে, জিহাদের দাবীদাররা অজ্ঞতার অজুহাতকে কাজে লাগাত মুনাফিক দলগুলোর সমর্থনে যাদের রিদ্দাহ স্পষ্ট হয়ে গেছে এবং -অনেক ক্ষেত্রে- দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর সমর্থনে মারাত্মক ভাবে ব্যবহার করত! (১৪)
যদি কেউ দেখিয়ে দিত যে এই দলগুলো তাদের স্বাধীনকৃত এলাকার নিয়ন্ত্রণ থাকা সত্বেও শরীয়াহ অনুসারে শাসন করে না এবং দাওলাহ’র বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে যারা শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা করেছে, জিহাদের দাবীদাররা বলত যে ‘শাম এখন দারুল হারব (১৫) এবং সেখানে হুদুদ কায়েম করা উচিত হবে না! অন্যরা বলত যে, যারা মুসলিমদের জীবন এবং পরিবার বিপন্ন করে তাদের বিরুদ্ধে রক্ষণাত্মক জিহাদকে তাওহীদ (শরীয়াহ) প্রতিষ্ঠার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, যেভাবেই হোক তারা মনে করে যে, এই দুই ফরয একে অপরের সাংঘর্ষিক!
যদি কেউ দেখিয়ে দিত যে, এই দলগুলোর কিছুতে এমন ইউনিট আছে যার সৈন্যরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে না বা রমজানে রোজা রাখে না এবং যারা মুসলিমদেরকে হত্যা করে এবং তাদের সম্পদ চুরি করে, তাহলে তারা জবাব দিত যে বাথিস্টদের অধীনে পঞ্চাশ বছর শাসিত হওয়ার কারণে এই দলগুলোকে তাদের ভুলের জন্য ক্ষমা করতে হবে এবং সাধারণ শত্রু দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে এদের উপর নির্ভর করতে হবে!
তাই এই জিহাদের দাবীদাররা অজ্ঞতার অজুহাতের ধারণার ব্যাপারে এত বাড়াবাড়ি করে যে, এর মধ্যে ধর্মের ভিত্তি (শাহাদাতাইনের ভিত্তি), এর সুপরিচিত মৌলিক নীতিগুলো (প্রসিদ্ধ দণ্ডাজ্ঞা, ফরযগুলো এবং নিষেধাজ্ঞা) এবং অধিকাংশ লোকের কাছে সুস্পষ্ট বাস্তবতা (যেমন গনতন্ত্রের অর্থ, এর গঠনতন্ত্র এবং এস এন ছি ও এফ এস এ এর ধর্মনিরপেক্ষতা) ধরা পড়ে যায়। তারা ইসলামের ভিত্তিকে বর্জন করার ভয়াবহতাকে এবং সাধারণভাবে শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা করাকে অবজ্ঞা করে। তারা বাস্তবিক বিধানের ক্ষেত্রে মুনাফিকির ধারণাকে অস্বীকার করে। তখন এই ভয়ংকর ইরজা শামের জিহাদের দাবীদারদের (জাওলানি ফ্রন্ট) চালিকা শক্তিতে পরিণত হল, দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মুরতাদ সাহাওয়াতের পক্ষে। এক্ষেত্রে বিধান সবার জানা; ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আব্দিল ওয়াহহাব (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন) বলেন যে, মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের সমর্থন ও সহযোগিতা করা ইসলাম ভঙ্গের একটা কারণ। প্রমাণ হল আল্লাহর এ বানী, “{হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।}” [আল-মায়েদাঃ৫১] [নাওয়াকিদুল ইসলাম]। তাই এই জিহাদের দাবীদাররা ইসলামকে পাতলা কাপড়ের চেয়েও বেশি পাতলা করে ফেলেছে, যতক্ষণ না তা ইসলামকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে ফেলে এবং তাদের সাহাওয়াতের প্রকৃত প্রকাশ পায়।
দুঃখজনক ভাবে পশ্চিমা ও আরব গোয়েন্দারা শামে তাদের এ ইরজার সুবিধা নিতে সক্ষম হয় শুধু পিছনে বসে থেকে দেখতে লাগল এ জিহাদের দাবীদাররা দাওলাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে এবং সাহাওয়াতের পক্ষে যুদ্ধ কর্ম। তারা জিহাদের অন্যান্য ভূমিতে তাদের এ কাজের পুনরাবৃত্তি করতে চাইল কিন্তু তারা আল্লাহর এ বানী ভুলে গেল, “{তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করতে চায়। কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তাঁর নূরের পূর্ণতা বিধান করবেন, যদিও কাফেররা তা অপ্রীতিকর মনে করে।} [আত-তাওবাঃ৩২]।
footnotes
১।মুরজিয়ারা একটি ধর্মের আবিষ্কার করল যাদের অনুসারীরা জান্নাতে প্রবেশ করার আশা করে, যদিও তারা ঈমানের মৌলিক আমলসমূহকে সম্পূর্ণ ভাবে ত্যাগ করে (ইসলামের যে চারটি খুঁটি রয়েছে কালিমায়ে শাহাদতের পরে) এবং এর কথাগুলোর যুক্তিযুক্ত সমর্থন দাবী করত। অতএব, তাদের অবস্থা ঐ নির্বোধ ইহুদীদের মত যারা {কিতাবের কিছু অংশে বিশ্বাস করে আর কিছু অংশে অবিশ্বাস করে} [আল-বাকারাহঃ৮৫] এবং বলে, {আমরা শুনলাম কিন্তু মানলাম না}[আল-বাকারাহঃ৯৩] কিন্তু তথাপি তারা বলে, {আমাদেরকে আগুন খুব অল্প দিনের জন্য স্পর্শ করবে} [আল-বাকারাহঃ৮০] এবং {আমাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে}[আল-আ’রাফঃ১৬৯]। সালাফগণ ইরজাকে খ্রিষ্টান ধর্মের সাথেও তুলনা করেছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন, “ ইরজা থেকে সাবধান থাক, কারণ এদের দৃষ্টিভঙ্গি খ্রিস্টানদের মত” [আল লালিকাই]। খ্রিস্টানরা ইহুদীদের মত বলে যে, মুক্তির জন্য শুধু মৌখিক স্বীকারোক্তিই যথেষ্ট, এর সাথে আমলের কোন প্রয়োজন নেই। আল্লাহ তা’আলা ইহুদীদের কথার জবাব এভাবে দিয়েছেন, {বলুন, তোমরা কি আল্লাহর কাছ থেকে কোন অঙ্গীকার পেয়েছ যে, আল্লাহ কখনও তার খেলাফ করবেন না -না তোমরা যা জান না, তা আল্লাহর সাথে জুড়ে দিচ্ছ। হ্যাঁ, যে ব্যক্তি পাপ অর্জন করেছে এবং সে পাপ তাকে পরিবেষ্টিত করে নিয়েছে, তারাই দোযখের অধিবাসী। তারা সেখানেই চিরকাল থাকবে। পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তারাই জান্নাতের অধিবাসী। তারা সেখানেই চিরকাল থাকবে}” [আল বাকারাহ ৮০-৮২]। আল্লাহ তা’আলা ইহুদীদের সহ খ্রিস্টানদের কথার জবাব এভাবে দিয়েছেন, {ওরা বলে, ইহুদী অথবা খ্রিষ্টান ব্যতীত কেউ জান্নাতে যাবে না। এটা ওদের মনের বাসনা। বলে দিন, তোমরা সত্যবাদী হলে, প্রমাণ উপস্থিত কর। হ্যাঁ, যে ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সমর্পন করেছে এবং সে সৎকর্মশীলও বটে তার জন্য তার পালনকর্তার কাছে পুরস্কার বয়েছে। তাদের ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না} [আল বাকারাহ ১১১-১১২]। আরও দেখুন, সুরা নিসার আয়াত নং (১২৩-১২৪)। ইহুদী এবং খ্রিষ্টান তারা উভয়েই বলে যে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য তাদের নবীদেরকে মৌখিক স্বীকৃতি দেয়াই যথেষ্ট, যদিও তারা এই বিশ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয় তাৎপর্য বর্জন করেছিল যা ছিল সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কথা ও কাজের মাধ্যমে অনুসরণ করা, যেহেতু তাঁর সম্পর্কে তাদের ধর্মীয় গ্রন্থে ভবিষ্যৎবাণী করা ছিল। পরিশেষে বলা যায়, পাপ ও অন্যায় করার জন্য আল্লাহর দয়া ও ক্ষমার অজুহাত দেখানোই ঠিক নয়, শিরক ও কুফর তো অনেক দূরের বিষয়!
২।অতীতের মুরজিয়ারা -দ্বীনকে হালকা ও গুনাহের ভয়াবহতাকে তুচ্ছ মনে করার কারণে- মুসলিম শাসকদের আরও বেশি পাপ ও অন্যায় করার সুযোগ দিত। তৎকালীন কিছু মুরজিয়ারা তাদের সমসাময়িক তাগুতদের মানবরচিত আইন প্রণয়নে ও ইহুদী, খ্রিষ্টান, পৌত্তলিক, মুরতাদদেরকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহায়তা দিতে সমর্থন করত।
৩।ফরজগুলো বলতে তিনি ঈমানের সাক্ষ্য দেওয়ার পর ইসলামের ৪টি স্তম্ভকে (সালাত, সিয়াম, যাকাত ও হজ্জ) বুঝিয়েছেন যা পরবর্তী উদ্ধৃতিগুলোতে আরও স্পষ্ট হবে। সাহাবারা স্পষ্টভাবে একমত ছিলেন যে, সালাত পরিত্যাগ করা বড় কুফর। একজন ব্যাক্তির অন্যান্য ৩টি স্তম্ভের যেকোনো একটি পরিত্যাগের ক্ষেত্রে কি হুকুম এ ব্যাপারে পরবর্তী ওলামাদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। এবং আল্লাহই ভালো জানেন।
৪।আরও দেখুন সুরা আন-নূরের ৪৭ নং আয়াত, সুরা আল-ক্বিয়ামাহর ৩১-৩২ নং আয়াত, সুরা আল-লাইলের ১৫-১৬ নং আয়াত এবং সুরা আত-ত্বহার ৪৮ নং আয়াত। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’কে কিছু ক্ষেত্রে অমান্য করা -যা গুনাহ- ও দ্বীনের কোন আদেশ অনুসরণ না করার মাধ্যমে তাঁকে সম্পূর্ণ অমান্য করা, উভয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। পরিপূর্ণ অমান্য করার শর্ত দৈনিক ৫ ওয়াক্ত সালাত পরিত্যাগের মতই, যা কুফরী।
৫।তার কথা থেকে বোঝা যায় যে, এই নিষেধাজ্ঞাগুলোর উপর জোরপূর্বক বাধা দেওয়া বড় কুফরী। সুদ, মদ, ব্যভিচার প্রভৃতিতে পরিপূর্ণ লিপ্ত থাকা গুনাহ কিন্তু কুফরী নয়।
৬।বিষয় এটা যে, ক্বাবা মক্কায়, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেছেন, তিনি মদিনায় থাকতেন (মক্কা থেকে হিজরতের পর), তাঁর কবর মদিনায়, এসব বিষয় সকল স্থানের মুসলিমরা জানে, এমনকি অনেক ইহুদী খ্রিস্টানরাও জানে। সুতরাং কোন ব্যক্তি দারুল ইসলামে উমাইয়্যা ও আব্বাসিয় খিলাফতের অধীনে থেকে, প্রসিদ্ধ ফুকাহাদের সময়ে থেকে, মসজিদে হারামের ভেতরে ক্বাবার সামনে থেকেও কি করে অজ্ঞতার দাবী করতে পারে?
৭।অজ্ঞতার কারণে অজুহাত এটা শরীয়তের পরিভাষা কিন্তু মুরজিয়াদের মত বাড়াবাড়ি পর্যায়ের নয়। ধারণাটি কখন প্রযোজ্য এটা জানার জন্য ৪৮ পৃষ্ঠায় মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাবের উদ্ধৃতিটি দেখুন।
৮।আহলুস সুন্নাহর মতে অন্তর, জিহবা, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এর পর্যায় অনুসারে, কথা ও কাজের মাধ্যমে ঈমান বাড়তে বা কমতে পারে, শুধু আকীদার বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানের কারণে নয়।
৯।আরও দেখুন সুরা আন-নামলের ৪২-৪৩ নং আয়াত ও সুরা হুদের ২৫-২৯ নং আয়াত এবং আবু জাফর আত-তাবারি (আল্লাহ তাকে রহম করুন – মৃত্যু ৩১০ হিজরী)- মুফাসসিরদের ইমাম- এর তাফসির, যার কিছু আয়াত এই পরিচ্ছেদে উল্লেখ করা আছে এবং তাঁর “আত তাফসির ফি মা’লিম উসুল আদ দ্বীন” বইটি দেখুন।
১০।আরও দেখুন “দাবিক-৭” এর ২২-২৩ নং পৃষ্ঠা। ওলামারা উল্লেখ করেছেন যে জ্ঞান, আত্মসমর্পণ এবং ইখলাস -অন্যান্য বিষয়ের সাথে- এই সাক্ষ্যদানের জন্য শর্ত। এই শর্তগুলো অজ্ঞতা, আমলকে সম্পূর্ণ পরিত্যাগ এবং শিরক এর পরিপন্থী। সেই অনুযায়ী যে ব্যক্তি শিরক করে ও সালাত পরিত্যাগ করে সে কি করে মুসলিম হিসেবে গণ্য হতে পারে?
১১।বড় মুনাফিকির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পড়ার জন্যে “দাবিক-৭” এর ৬২-৬৬ পৃষ্ঠা দেখুন যেখানে ‘কিছু অংশের’ অস্বীকৃতি সম্পর্কে আলোচনা আছে এবং কুরআনে মুনাফিকদের মুনাফিকি প্রকাশ পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ফরজ হওয়ার দলিল দেওয়া আছে।
১২।তাদেরকে জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয় যাতে তাদেরকে অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ বা গণতান্ত্রিক দল থেকে আলাদা করা যায়।
১৩।সিরিয়ার জনগণের প্রকৃতিগত কারণে এসব ধর্মনিরপেক্ষ মুরতাদ দলগুলো জিহাদকে বিচ্যুত করতে খুব কম কার্যকর ছিল। তুরস্কের মুরতাদদের -এফ এস এ এবং এস এন সি- কে শামের ঘটনাগুলোতে কর্তৃত্ব অর্জন করার জন্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাগের উপর নির্ভর করতে হত। তারা তাদের ‘সম্পর্ক ও সাহায্য’ এই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছিল। ধর্মনিরপেক্ষ মুরতাদ দলগুলো -এফ এস এ এর সামরিক পরিষদ এবং তাদের বিভিন্ন বাহিনীগুলো- মুনাফিক দলগুলোর অধিকতর “ইসলামী” এজেন্ডা ও সংস্কৃতি দাবী করার কারণে নিস্প্রভ হয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, মুনাফিক দলগুলোকে ঐতিহাসিক কারণে উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে তারা মুনাফিকির ধূসরতা থেকে কথা ও কাজের মাধ্যমে রিদ্দার অন্ধকারে চলে যায়, যখন তারা তাদের সাহওয়াতের মাধ্যমে কুফরীর সাথে বেরিয়ে আসার স্বাধীনতা পেল।
১৪।অজ্ঞতা যদি তৎকালীন মুরজিয়াদের জোরালো অজুহাত হয়ে থাকে তাহলে কে তাদেরকে দাজ্জালের জন্য অজ্ঞতার অজুহাত পেশ করা থেকে বিরত রাখবে, যখন সে (দাজ্জাল) নিজেকে নবুয়্যাত এবং প্রভুত্বের দাবী জানাবে আর শুধু তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে যারা তাকে তাকফির করবে?
১৫।ইবনে কুদামাহ (আল্লাহ তাঁকে রহম করুন) বলেন, “হুদুদ শুধু তুগুরে (সীমান্ত ফাঁড়ি) কার্যকর করা হবে। এ বিষয়ে এর ব্যতিক্রম কিছু আমাদের জানা নাই। কারণ তুগুর মুসলিম ভূমি থেকেই হয় আর এর জনগণকে সাথে সাথে অন্যদেরকেও পাপ থেকে বিরত রাখার জন্য এটা করা হয়। ‘উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহ) আবু উবাদা(রাদিয়াল্লাহু আনহ) কে মদ পানকারীকে ৮০ বেত্রাঘাত মারতে লিখেছিলেন। এটা তখন বলেছিলেন যখন আবু উবাদাহ ছিলেন শামে এবং এটা তুগুর থেকে করা হয়েছিল [আল-মুগনি]। মুসলিমদের তুগুর যদি দারুল ইসলামে হয় তাহলে আর কত অঞ্চল এই তুগুর দ্বারা রক্ষা করা যায়? মুরজিয়ারা এই “দারুল হারব” পরিভাষা কে বিকৃত অর্থ করে যুদ্ধের ক্ষেত্র বোঝায়। আসলে তা যুদ্ধের অঞ্চলকে না বুঝিয়ে এমন অঞ্চলকে বুঝায় যেটা কুফফারদের দ্বারা শাসিত যেখানে মুসলিমদের সাথে সন্ধি নেই, এমনকি যেখানে কোন যুদ্ধও নেই!